শিলা বৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েনি সিলেটে হাওর এলাকায় ইরি বোরো ফসল। এছাড়াও নদ-নদীতে পানির প্রবাহ তুলনামূলক কম থাকায় এবারের বোরো ফসল নিয়ে কৃষকরা ব্যাপক আশাবাদী। তবে আবহাওয়া কোন কারনে অস্বাভাবকি রূপে মূর্তিমান হয়ে দাড়ালে বিগড়ে গেলে পাল্টে যেতে পারে হিসেব এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরাা। এজন্যে হাওর রক্ষা বাঁধ সমূহে বিশেষ নজরদারীর জন্যে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও কৃষকরা। চলমান এই অবস্থার মধ্যে হাওর সমূহে ধান পাকা দেখা দিয়েছে। সে ধান ঘরে তুলতে হাওর এলাকায় শ্রমিক সংকটে চরম বিপাকে কৃষকরা। বাস্তব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব হলে হলে হাসি ফুটবে কৃষকের মুখে। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে বিভাগের ৪ জেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ লাখ ৬ হাজার ১৩৭ মেট্রিক টন। টার্গেট (লক্ষ্যমাত্রা) অনুযায়ী উৎপাদন হলে উৎপাদিত ধানের দাম হবে ৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
কৃষি বিভাগ সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আলতাবুর রহমান আবাদ নিয়ে তথ্য তুলে ধরে বলেন, ইরি-বোরোর আবাদ বেশ ভালোই হয়েছে চলতি মৌসুমে। ইতিমধ্যে হাওরের ধান পাকতেও শুরু করেছে। বিলম্ব না করে পাকা মাত্রই ধান কাটতে কৃষকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় মোট ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫৫৭ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষ হয়। আবাদকৃত জমি থেকে ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
ধানের হিসেব অনুযায়ী উৎপাদন হবে ৩৩ লাখ ৬ হাজার ১৩৭ মেট্রিক টন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে এমন আশঙ্কাও অবাস্তব নয়।
জানা গেছে, হাওরের ইরি-বোরো জমিতে ২ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ৬১ হাজার ৭৪৭ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল জাতের ২ লাখ ৪৫৭ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৯ হাজার ৫৬১ হেক্টর। সিলেট জেলায় হাইব্রিড ৩ হাজার ৯৪০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ২৫ হাজার ৪১৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৫ হাজার ৫১৫ হেক্টর আবাদ করা হয়। মৌলভীবাজার জেলায় হাইব্রিড ১ হাজার ৩০০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ২০ হাজার ৮০০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৪০০ হেক্টর, হবিগঞ্জ জেলায় হাইব্রিড ৩০ হাজার ৭৬০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ১৫ হাজার ৩৮০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৬০ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জ জেলায় হাইব্রিড ২৫ হাজার ৭৪৭ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৬২ হেক্টর ও ৩ হাজার ৫৮৬ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়স্থানীয় জাতের ধান ।
এছাড়াও হাওরের বাইরের উঁচু জমিতে স্কিম করে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়। স্কিমের জমির মধ্যে সিলেট জেলায় হাইব্রিড ২ হাজার ৯৫৩ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ৩৯ হাজার ১৭৩ হেক্টর ও ২ হাজার ৭১৩ হেক্টরে স্থানীয় জাতের ধান আবাদ করা হয়। মৌলভীবাজার জেলায় হাইব্রিড ৮৭৮ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ২৯ হাজার ৭২২ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১৬ হেক্টর, হবিগঞ্জ জেলায় হাইব্রিড ৮ হাজার ১৫৭ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ৬৩ হাজার ৮০০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৪০ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জ জেলায় হাইব্রিড ৪ হাজার ৮০৪ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল ৪৪ হাজার ৩২৮ হেক্টর ও ২০৮ হেক্টরে ধান আবাদ করা হয়েছে স্থানীয় জাতের ।
কৃষি সংশ্লিষ্ট তথ্য অনুযায়ী, সিলেট জেলায় ৩ লাখ ১ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন, মৌলভীবাজার জেলায় ২ লাখ ৯ হাজার ১৯৯ মেট্রিক টন, হবিগঞ্জ জেলায় ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন ও সুনামগঞ্জ জেলায় ৮ লাখ ৭০ হাজার ৫৮২ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল উৎপাদিত হলে এর দাম হবে ৯ হাজার ৩৮৫ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ৪ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন হয় সুনামগঞ্জ জেলায়। জেলার সর্বত্রই ইরি-বোরোর আবাদ করা হয়। বর্তমানে সুনামগঞ্জের হাওর সমূহে ইরি-বোরো ধান পাকা শুরু হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই সুনামগঞ্জের সর্বত্র ধান কাটার ধুম পড়বে। কিন্তু আবাদ হওয়া জমির তুলনায় ধান কাটার শ্রমিকের সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। শ্রমিক সংকটের ফলে আগে থেকেই কৃষকরা দিশেহারা হয়ে শ্রমিকের জন্যে দৌড়াদৌড়ি করছেন। শ্রমিক সংকট কেটে গেলে ধান পাকার সাথে সাথেই ধান কাটা-মাড়াই দ্রুত সম্পন্ন করা যায়। তবে দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুরসহ সুনামগঞ্জের সর্বত্র শ্রমিক সংকট রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন