শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

যে আগুনে অমর, সে আগুনেই লজ্জা-ফুয়াদ খন্দকার

মোঃ ইকরাম | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৯, ৭:০৬ পিএম

অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলে ফায়ারম্যান সোহেল রানা। বনানী এফ আর টাওয়ারের অগ্নিকান্ডে সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য পাগল টা নিজের জীবনটাই দিয়েগেলো। নিজের জীবন দিয়ে সবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেলো স্বার্থপরতার নাম জীবন নয়, পরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার নামই জীবন। এই স্বার্থপর পৃথিবীতে আবার ও প্রমাণ করে দিলো আমরা "জ্বলে,মরে,পুড়ে ছাড়খার তবু মাথা নোয়াবার নয়"। এজন্যেই সোহেল রা কখনো মরে না। এরা বেঁচে থাকে যুগের পর যুগ মানুষের হৃদয়ে, মানুষের অন্তরে।

বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগ্নি কান্ডের ঘটনায় আটকে পরা মানুষদের উদ্ধার করতে যেয়ে ফায়ারম্যান সোহেল রানা গুরুতর আহত হন। দেশের সকল মানুষের শুধু একটাই চাওয়া ছিলো যেনো সোহেল সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে। রাষ্ট্র থেকেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছিলো। চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিলো দেশের বাইরে৷ কিন্তু উপর ওয়ালা সোহেলের গল্পটা হয়তো অন্যভাবেই লিখতে চেয়েছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই না ফেরার দেশে পারি জমান।সৃষ্টি করে যান অমরত্বের এক নতুন ইতিহাস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সোহেলের জন্য মানুষের হাহাকার দেখলে মনে হয় সোহেলের এই আত্মদান বৃথা যায় নি। সোহেল এ দেশের মাটিতে অমর হয়ে থাকবে আজীবন। সোহেলের ছবি গুলো যখন টাইমলাইনে ঘুরে বেড়ায় তখন মন থেকে শুধু একটাই দোয়া উঠে আসে " প্রিয় সোহেল, ভালো থাকবেন ওপারে"।

সারাদেশের মানুষ যখন সোহেলের শোকে কাতর ঠিক তখনি আরেকটি সংবাদে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। ফেনীর সোনাগাজী তে এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দোলা এক আলিম পরীক্ষার্থী মেয়েকে প্রশ্ন পত্র দেয়ার লোভ দেখিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় মেয়েটি তার পরিবারের সাথে কথা বলে সেদিন ই থানায় মামলা দায়ের করেন। তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে মাদ্রাসার ছাদে প্রকাশ্যদিবালোকে মেয়েটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে তার শরীরের বেশীরভাগ অংশ পুড়ে যায়৷মেয়েটি এখন আশংকাজনক অবস্থায় আছেন। রাষ্ট্রথেকে মেয়েটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিংগাপুরে পাঠানোর কথা ছিলো কিন্তু মেয়েটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে এ মূহুর্তে সেখানে পাঠানো সম্ভব নয়। একজন মাদ্রাসার শিক্ষক থেকে এ ধরনের লজ্জাজনক ঘটনা কখনো আশা করা যায় না এর সাথে সাথে আরেকটা জিনিষ ও প্রমাণ হয়, আমার যে বন্ধুরা নারীদের ধর্ষণ, নির্যাতনের জন্য এক তরফা ভাবে শুধু নারীদের পোষাক কে দায়ী করে যান এ ঘটনা নিঃসন্দেহে তাদের জন্য একটা বড় চপেটাঘাত। যদি তাই হতো তবে বোরকা পরীধান করা বোনটির আজকে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। আসলে নারী নির্যাতনকারী অমানুষদের কোন ধর্ম নেই, বর্ণ নেই। তাদের শুধু একটাই পরিচয় তারা অমানুষ। নিজেদের বিকৃত রুচির জন্যে এরা যা ইচ্ছে করতে পারে। আমাদের এ ধরনের মানুষের বিরুদ্ধে আরো অনেক বেশি সোচ্চার হওয়া উচিত। আমি আশা করছি এ ধরনের মানুষ রুপি অমানুষ গুলোকে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে যাতে আর কেউ এ ধরনের কাজ করার মতো সাহস না পায়। জানিনা আদৌ এ সব মানুষ গুলোর বিচার হবে কিনা। নাকি প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কিছুদিন পরেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াবে।

বনানী আর ফেনীর আগুনে আমাদের সকলের মন ই বেশ পোড়াচ্ছে৷ তবে আগুন আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে গেলো।সোহেল রানার ঘটনা আমাদের যেমন গর্বিত করেছে একই সাথে ফেনীর ঘটনা আমাদের কে দিয়েছে লজ্জা।ঠিক যেনো "যে আগুনে অমর, সে আগুনেই লজ্জা"

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন