ফতুল্লায় গার্মেন্ট ঝুট ব্যবসায়ীর হাতে খুন হয়েছেন কামরুজ্জামান চৌধুরী ওরফে সেলিম চৌধুরী (৫২) নামে অপর এক ঝুট ব্যবসায়ী। গতকাল বুধবার দুপুরে ফতুল্লার ভোলাইলে পুলিশ মোহাম্মদ আলীর ঝুটের গোডাউনের নিচে মাটি চাপা বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে সেলিমের স্ত্রী রেহানা আক্তার রেখা ও ছোট ভাই জামিল এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। ওই সময় নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে ঘটনাস্থলে শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
লাশ উদ্ধারের আগে পুলিশ গতকাল দুপুরে মোহাম্মদ আলীর ঝুটের গোডাউনের কর্মচারী ফয়সালকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে ব্যবসায়ীসেলিম চৌধুরীকে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে গোডাউনের ভেতরেই মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। তার দেখানো মতোই পুলিশ মোহাম্মদ আলীর গোডাউনের ভেতরে মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দি লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তর জন্য নারায়ণগঞ্জ দেড়শ শয্যা হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
গত ৩১ মার্চ বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ঝুট ব্যবসায়ীকামরুজ্জামান চৌধুরী সেলিম। ওইদিন সকাল ১১টায় স্ত্রী রেহানা আক্তার রেখার সঙ্গে টেলিফোনে তার সর্বশেষ কথা হয়। স্ত্রী রেখা টেলিফোন করে সেলিমের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছিলেন সে ফতুল্লার পঞ্চবটি মোড়ে অবস্থিত ইস্টার্ণ ব্যাংকে রয়েছেন। ওইদিন দুপুরে খাবারের জন্য পুনরায় ফোন দিয়ে সেলিম চৌধুরী ফোন বন্ধ পান স্ত্রী রেখা। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে নিখোঁজ হবার ৬ দিন পর গত ৬ এপ্রিল ফতুল্লার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন স্ত্রী রেখা। দুইদিন পর গত ৮ এপ্রিল এ ঘটনায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন রেখা। এ দম্পতি এক ছেলে সন্তানের জনক। ফতুল্লার বক্তাবলীর কানাইনগর এলাকার বাসিন্দা হলেও সে পরিবার নিয়ে ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি ঝুটের ব্যবসা করতেন।
গ্রেফতারকৃত ফয়সাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে, ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরীকে অপর ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর নির্দেশে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডে মোহাম্মদ আলীসহ, ফয়সালসহ মোট ৪ জন অংশ নেয়।
নিহতের পরিবার, গ্রেফতারকৃত ফয়সাল এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মামুন আল আবেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরী অপর ঝুট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা পেতেন। দীর্ঘদিন যাবৎ পাওনা টাকা না দিয়ে সেলিম চৌধুরীকে হয়রানি করছিল মোহাম্মদ আলী। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে সর্ম্পকের অবনতি ঘটে। টেলিফোনে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে একাধিকবার বাদানুবাদও হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মামুন আল আবেদ বলেন, সেলিম চৌধুরী নিখোঁজ হওয়ার পর প্রথমে জিডি এবং পরে মামলা দায়ের হয়। তখন আমরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পারি ঘটনার দিন ব্যবসায়ী সেলিম চৌধুরীর সর্বশেষ অবস্থান ছিল ফতল্লার ভোলাইল এলাকায়। আর অপর ঝুট ব্যবসায়ীমোহাম্মদ আলীর ঝুটের গোডাউনও একই এলাকায় অবস্থিত। তাছাড়া নিখোঁজ সেলিম চৌধুরীর মোবাইল ফোনের কললিস্টেও দেখা গেছে ঘটনার আগ থেকে ঘটনার দিন পর্যন্ত মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে সেলিম চৌধুরীর অনেকবার কথা হয়েছে।
এসব কারণে প্রথম থেকেই মোহাম্মদ আলীর উপর পুলিশের সন্দেহ ছিল। পরে বুধবার দুপুরে মোহাম্মদ আলীর গোডাউনে অভিযান চালিয়ে তার কর্মচারী ফয়সালকে আটক করে থানায় নিয়ে যাই। তাকে আটকের সময়ই গোডাউনের ভেতরে দুর্গন্ধ পাই। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি সেলিম চৌধুরীকে হত্যার করে গোডাউনের ভেতরেই মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। থানায় নিয়ে ফয়সালকে নিবিড় ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, গত ৩১ মার্চই সেলিম চৌধুরীকে হত্যা করা হয়েছে। পাওনা টাকার জন্য সেলিম চৌধুরী সেদিন মোহাম্মদ আলীর গোডাউনে গেলে সেখানে তাকে ৪ জন প্রথমে লোহার রড দিয়ে পেটায়। রড দিয়ে তার ঘাড়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করা হয়। এরপর ঝুটের কাপড় দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে বস্তায় ভরে লাশ গোডাউনের ভেতরেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয়।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ সেলিম চৌধুরী নিখোঁজের ঘটনায় বুধবার দুপুরে একজনকে আটক করে। পরে তার দেখানো মতো একটি ঝুটের গোডাউনের ভেতরে মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন