শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রূপগঞ্জে ঝুঁকিপূর্ণ ফেরিপারাপার

দু’টি ফেরির দুই ইঞ্জিন বিকল : জরাজীর্ণ গ্যাংওয়ে ও পন্টুন

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : | প্রকাশের সময় : ১৪ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ফেরি পারাপার হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন। ঘাটের দুটি ফেরি রয়েছে। দুটি ফেরিতে চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে দুটি ইঞ্জিন সব সময়ই বিকল থাকে। এ জন্য ঘাটে ফেরি ভিড়াতে গিয়ে প্রচন্ড বেগে ধাক্কা লেগে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। শুধু তাই নয়, পল্টুন ও গ্যাংওয়ের অবস্থা জরাজীর্ণ। ইঞ্জিন বিকলের কারণে প্রায়ই ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ে থাকতে হয় যাত্রী সাধারনের। প্রতিদিন দেশের প্রায় ১৭টি জেলা থেকে আগত যাত্রীরা শীতলক্ষ্যা নদীর এ ফেরি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) বলেন, ফেরিঘাটের পাশ্ববর্তী ইছাখালী-মুড়াপাড়া গঙ্গানগর এলাকায় অবস্থিত দ্বিতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু শিগগিরি উদ্বোধন করা হবে। আর সেতু উদ্বোধন করা হলে দুর্ভোগ কমে যাবে। দ্রুত গতিতে ইছাখালী অংশের কাজ চলছে।
জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কযোগে আসা প্রায় ১৭টি জেলার যাত্রীরা মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরিযোগে পারাপার হয়ে এয়ারপোর্টসহ রাজধানীতে প্রবেশ করে । বিশেষ করে কুমিল্লা, দাউদকান্দি, চাঁদপুর, মতলব, নোয়াখালী, ফেনি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, মৌলিবাজার, আশুগঞ্জ, সুনামগঞ্জের যাত্রীরা এ পথ ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ভুলতা ফ্লাইওভারের কাজ চলার কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে ফেরি পথ ব্যবহার করছে অনেক যানবাহন। অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীতে প্রবেশ পথ হিসেবে যাত্রীরা শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরিযোগে চলাচল করে থাকেন। এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার যানাবাহন চলাচল করে এ পথ দিয়ে। এ কারণেই সড়ক ও জনপদ বিভাগ মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দুটি ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করে। ওই দুটি ফেরি প্রতি বছর ইজারা দিয়ে থাকে বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ফেরি দুটির রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। বর্তমানে ফেরির দায়িত্বে রয়েছে সুমন এন্টার প্রাইজের মালিক সমর আলী সরদার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পারের রাস্তাটি অনেকটাই সরু। এ সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সব সময়ই এসব ভাঙ্গা গর্তে পানি জমে থাকে। গর্তে পড়ে প্রায় সময়ই যানবাহন বিকল হয়ে পড়ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। বিভিন্ন সমস্যার কারণে ফেরি দুটি দিয়ে এসব যানবাহন সময়মতো পারাপার করতে না পারায় বেশির ভাগ সময়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। নদীর দুই পাড়ের ফেরি লাগানো গ্যাংঅয়ে ও পল্টুনের বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। স্টীলের সিটগুলো খসে খসে পড়ছে। পল্টুনের তলায় পানি প্রবেশ করে ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। অনেক সময় স্যালো মেশিন দিয়ে সেচে পানি কমাতে হচ্ছে। ফেরির উপরের পিচ উঠে গিয়ে স্টীলের সিট বের হয়ে গেছে। এতে যানবাহনগুলো পিছলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফেরিঘাটের দুই পাড়ই অতিরিক্ত ঢালু হওয়ায় অনেক সময় গাড়ি উঠতে বা নামতে গিয়ে দুর্ঘটনা বা বিকল হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি প্রায় ২৮ বছর আগের, অপরটিও একই সময়ের। ইঞ্জিন ও বডি মেরামত করে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে ওই দুটি ফেরি।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, এসব সমস্যা নিয়ে ইজারাদাররা কর্তৃপক্ষকে জানালে তেমন কোন কাজ হয়না। ফেরি মেরামতের জন্য ঝালাই মেশিন ও রেকার আনলে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা গুনতে হয়। যানবাহন নিয়ে ফেরি ছাড়লে সময় মতো নদীর আরেক পাড়ে পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রবল স্রোতে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তখন অপর ফেরির সহযোগিতা নিয়ে ওই ফেরিকে টেনে আনতে হয়। ভুক্তভোগি যানবাহন চালকরা বলেন, সরকারী নিয়মানুযায়ী ফেরির ভাড়া দিচ্ছি, আমরা ভোগান্তির শিকার হবো কেন? সুমন এন্টার প্রাইজের মালিক সমর আলী সরদার বলেন, আমরা এসব সমস্যার ব্যপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানালে তারা এসে কাজ করে দিয়ে যায়, কিন্তু ফের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদের বিভাগের এসডি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফেরির সমস্যাগুলো নিয়ে আমরা মিটিংয়ে বসেছি। দ্রুত সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে।
রুপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, ফেরির নানা সমস্যা ও যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন