মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
॥ শেষ কিস্তি ॥
এছাড়া রাসূল (সা.)-এর হাদীস “যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির নাথে সাদৃশ্য স্থাপন করে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়”। ‘‘আবু দাউদ, প্রাগুক্তম অধ্যায় : আল-লিবাস, পরিচ্ছেদ : ফি লুবসিস্ শুহরাহ, পৃ. ৭৫০, হাদীস নং ৪০৩১; ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। ইক্বতিযাউস সিরঅত্বিল মসুতাকীম, প্রাগুক্ত, পৃ.৭৭’’ এ হাদীস দ্বারাও বুঝা যায়, অমুসলিমদের অনুশীলনকৃত নিজস্ব ভাষায় তাদের নামকরণের ধারায় মুসলিমদের জন্য অনুসরণ করা উচিত নয়। তাই নামকরণ আরবী ভাষাতেই হওয়া উচিত।
ফিরিশতাদের নামে নামকরণ ঃ অধিকাংশ আলিম ফিরিশতাদের নামে নামকরণ জায়িয বলেছেন। তবে ইমাম মালিক (রহ.) বিষয়টি মাকরূহ বলেছেন। আবার হারিস বিন মিসকীন (রহ.) এরূপ নামকরণকে উত্তম বলে মত প্রকাশ করেছেন। ‘‘ইসলামী ফিক্হ বিশ্বকোষ, প্রাগুক্ত, খ. ২, পৃ. ২৪’’ তবে এক্ষেত্রে জমহুরের বক্তব্যই অগ্রগণ্য।
যে সব নামে নামকরণ হারাম ঃ আল্লাহ তা‘আলার সাথে খাস নামসমূহ দ্বারা অন্য কারো নামকরণ করা হারাম। যেমন- খালিক, কুদ্দুস, রাহমান, অথবা এমন কো উপাধি যা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য নয়, তাও হারাম। যেমন- রাজাধিরাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নামসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ক্রোধ উদ্রেককারী ও বিরক্তিকর হবে সেই ব্যক্তির নাম, যার নাম রাখা হয়েছে মালিকুল আমলাক অর্থাৎ রাজাধিরাজ। ‘‘বুখারী, প্রাগুক্ত, অধ্যায় : আল-আদাব পরিচ্ছেদ : আবগাদুল আসমাই ইলাল্লাহ, খ. ২, পৃ. ৯১৬, হাদীস নং ৫৯৬৪;’’। তবে যে সকল নাম বহু অর্থবোধক আল্লাহ্ তা‘আলা ও অন্যান্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় তা দ্বারা নামকরণ জায়িয। যেমন আলী, রাশীদ ও বাদী ইত্যাদি। আল-হাস্ কাফী বলেন- আমাদের ক্ষেত্রে তা এক অর্থে ব্যবহৃত হবে এবং আল্লাহর ক্ষেত্রে অন্য অর্থে ব্যবহৃত হবে। যেমন আল্লাহ নিজেই রাহীম শব্দ দ্বারা রাসূল (সা.) কে গুণান্বিত করেছেন। ‘‘আল-কুরআন, ৯ : ১২৮’’
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সাথে সম্বন্ধবাচক দাসসূচক নামকরণ হারাম। এ ব্যাপারে সকল ফকীহ একমত পোষণ করেছেন। যেমন আবদুল উয্যা, আবদু আমর, আবদুল কা‘বা আবদুদ্দার, আবদু ফুলান (অমুকের দাস) ইত্যাদি। ‘‘ইসলামী ফিক্হ বিশ্বকোষ, প্রাগুক্ত, খ.২, পৃ. ২৫’’ হাম্বলী মাযহাব মতে নবী (সা.)-এর সাথে নির্দিষ্ট এরূপ নাম রাখাও হারাম। যেমন-আদম সন্তানের নেতা, মানবজাতির নেতা, সকলের নেতা, মানবজাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ইত্যাদি। ‘‘প্রাগুক্ত’’
যে সকল নাম অপছন্দনীয় ঃ ইসলামী শরী‘আতে এমন সব শব্দ দ্বারা নামকরণ অপছন্দ করা হয়েছে যার (নামের অর্থ) অবিদ্যমানতাকে অপছন্দ করা হয়। যেমন-রাবাহ (লাভ), আফলাহ (সফল), নাফি (উপকারি), ইয়াসার (স্বচ্ছলতা) ইত্যাদি। রাসুলল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার সন্তানের নাম ইয়াসার, রাবাহ, নাজীহ বা আফলাহ রাখবে না। কারণ তুমি অবশ্যই বলবে অমুক কি আছে ? উত্তরে সে না থাকায় (উত্তর দাতা) বলবে, নেই। ‘‘আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, আস-সহীহ, প্রাগুক্ত, অধ্যায় : আল- আদাব, পরিচ্ছেদ : কারাহিয়াতুত্ তাসমিয়াতি বিল আসমাইল ক্বাবিহাতি ওয়া বি নাফি’ওয়া নাহ্ওয়াহু, পৃ. ১০৭৬, হাদীস নং ৫৪৯২’’ আবু ঈসা মুহাম্মদ বিন ইসা তিরমিযী, আল-জামি, দেওবন্দ: মাকতাবা আশরাফিয়া, তা.বি, অধ্যায় : আল-আদাব, পরিচ্ছেদ : মা যাআ মা ইউকরাহু মিনাল আসমা খ. ২, পৃ. ১১১’’।
অবশ্য এরূপ নিষিদ্ধতা মাকরূহ তানযিহী ধরনের। কেননা ওমর (রা.)-এর পরবর্তী বংশধর বিখ্যাত মুহাদ্দিস ছিলেন “রাবাহ”। যার নিকট থেকে ইমাম বুখারী (রহ.) ও হাদীস বর্ণনা করেছেন। ‘‘শাসসুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে নাসিরুদ্দিন আল-কাইসি আদ্-দামিশ্বকী, তাওযীহুল মুতাশাবিহ, দামিশ্ক : দারুর রিসালতিল আম্মাহ, ২০১০, খ. ১, পৃ. ৮৭৬’’
ইবনে উমর (রা.)-এ আযাদকৃত একজন বিখ্যাত মুুহাদ্দিস দাস ছিল যার নাম ছিল নাফি’। এছাড়া আরো কয়েকজন সাহাবী ও বিখ্যাত মুহাদ্দিস তাবিয়ীও এ নামে ছিলেন বলে ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন