শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বেগম সম্পাদক নূরজাহান বেগমের ইন্তেকাল

প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগম গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশের বিভিন্ন  শ্রেণী পেশার নেতৃবৃন্দ। নূরজাহান বেগমের বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন জানিয়েছেন, পুরান ঢাকায় তার নামাজে জানাজা শেষে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। মহিলাদের নিজেদের মতো করে বলা, লেখা ও ভাবার বিবেচনা থেকে সওগাত সম্পাদক ও নূরজাহান বেগমের পিতা মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সাপ্তাহিক বেগম। কবি সুফিয়া কামালকে সম্পাদিকা ও নূরজাহান বেগমকে  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদিকা করে বেগম প্রকাশিত হয়েছিল। কিছুদিন পর ভারত ভাগ হলে বেগম সুফিয়া কামাল ঢাকায় চলে এলে নূরজাহান বেগম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন। সেই থেকে আমৃত্যু তিনি সততা, নিষ্ঠা ও প্রজ্ঞার সাথে এ দায়িত্ব পালন করেছেন। বেগম পত্রিকার প্রকাশনা যখন শুরু হয় নূরজাহান বেগম তখন বিএ শ্রেণীতে পড়তেন। নূরজাহান বেগমের মতো যারা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল ও লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজে পড়তেন  তারা সবাই  মিলে  বেগমের জন্য কাজ করতেন। একসময় পুরুষরাও বেগম পত্রিকায় লিখতেন। নূরজাহান বেগমের প্রথম স্কুল ছিল সাখাওয়াত মেমোরিয়াল বিদ্যালয়। দ্বিতীয় স্কুল ছিল বেলতলা। এখানে তিনি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার পর আবার আগের স্কুলে ভর্তি হন। অষ্টম শ্রেণী থেকে ম্যাট্রিক পর্যন্ত তিনি  ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে ১৯৪২ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৪সালে লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ থেকে আইএ পাস এবং  এই কলেজ থেকেই ১৯৪৬ সালে তিনি  বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। নূরজাহান বেগম জীবদ্দশায় বিপুলভাবে সংবর্ধিত হয়েছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনেক সম্মাননা তিনি লাভ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার পিতা সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন উপলব্ধি করেছিলেন মহিলাদের জন্য এমন একটি পত্রিকা থাকা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে তারা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে ও সমাজের  অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়ে যাবে। সংবাদপত্র জগতের প্রবাদপুরুষ মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন বেগমের মাধ্যমে নারী জাগরণের যে পতাকা নূরজাহানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বৃদ্ধ বয়সেও অসুস্থ শরীর নিয়ে দীর্ঘ ষাট  দশকেরও বেশি সময় ধরে সে পতাকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন নূরজাহান বেগম। পিতার হাতে এবং পিতার অভিজ্ঞতা ও মেধা-মননের মাধ্যমে যে শিক্ষা তিনি লাভ করেছিলেন তার পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগের চেষ্টা তিনি  করেছেন। সে অর্থে একজন সার্থক পিতার সার্থক সন্তান ছিলেন বেগম নূরজাহান। আমাদের সমাজে এটিও অত্যন্ত দুর্লভ প্রাপ্তি।
নূরজাহান বেগমের মৃত্যুকে কোনো বিবেচনাতেই অকালমৃত্যু বলা যাবে না। তবে তার মৃত্যু যে অপূরণীয় ক্ষতি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। সেই সাথে আমরা বলতে চাই, বেগম পত্রিকা ও তিনি এমন এক সময়ে সমাজের নারীদের মানসিক  উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন যখন বলতে গেলে সমাজে এবং বিশেষ করে নারীদের মধ্যে লেখাপড়াই ছিল না। অথচ সে সময়েও বেগম পত্রিকা ঘরে ঘরে পঠিত হতো। সেই থেকে এখন পর্যন্ত নারীদের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে বেগম বিবেচিত। নারীদের সচেতনা সৃষ্টি, শিক্ষা-সংস্কৃতি সাহিত্যামোদী করতে বেগমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশে যে ক’জন নারী সাহিত্যিক রয়েছেন তাদের সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বেগম। এখন পর্যন্ত বেগমের বিকল্প বা সমমানের কোনো প্রকাশনা নেই। সেজন্যই তার তুলনা কেবল তিনিই।
নারী জাগরণ, নারী শিক্ষা এবং নারীর উন্নয়ন ও বিকাশে নূরজাহান বেগমের অবদান ঐতিহাসিক। তার এই ভূমিকা ও অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা এই মহিয়সী নারীর রূহের মাগফিরাত কামনা করি এবং তার আত্মীয়-স্বজনের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা।


 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন