ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরউদ্দীন মুহম্মদ বাবরের অধস্তন স¤্রাট ছিলেন মহিউদ্দীন আওরঙ্গজেব, যার উপাধি ছিল আলমগীর। মোগল- তাতার বংশে আলমগীরের ও সর্বশেষ মোগল সম্রাট আবু যাফর সিরাজউদ্দীন মোহাম্মদ বাহাদুর শাহ যাফরের পতনের মাধ্যমে মোগল সাম্রাজ্যেরও অবসান ঘটে। এ তৈমুরিয়া বংশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দিক থেকে সম্রাট মহিউদ্দীন আওরঙ্গজেব আলমগীরের নাম শীর্ষ স্থানে। একজন হানাফী-সুন্নী সম্রাট হিসেবে ইসলামে তার অবদান ও কীর্তি ছিল অতুলনীয়। অনেক হিন্দু ও ইউরোপিয়ান লেখক তাঁকে হিন্দু বিদ্বেষী হিসেবে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা কম করেনি এবং তাঁর শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কেও নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু নিরপেক্ষ ও সত্যনিষ্ঠ ঐতিহাসিকগণের রচনাবলীতে তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগের খণ্ডন রয়েছে।
আওরঙ্গজেব আলমগীর সিংহাসন লাভ করার সাথে সাথে শাসন পরিচালনা ও সরকারি নীতিমালাকে ইসলামী রূপদানের কাজ আরম্ভ করেন। সাধারণ লোকদের চরিত্র ও নৈতিকতা রক্ষার্থে প্রধান শহরগুলোতে ‘মোহতাসেব’ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষাকারী নিযুক্ত করেন, যারা লোকদেরকে শরীয়ত অনুসরণে নিয়োজিত ছিলেন। পান করা (মদ) বা করানো, জুয়া খেলা এবং রেন্ডিবাজির মতো মানবতার কলঙ্ক সম্পূর্ণ নির্মূল করেন। বেশ্যা বা দেহ ব্যবসায়ীদের নির্দেশ প্রদান করেন, তারা দেশের সীমান্তের বাইরে চলে যাবে কিংবা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে। ভাঙ তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়, মুদ্রায় কলেমা তাইয়্যিবা খোদাই করা নিষিদ্ধ করেন, যাতে অমুসলিমরা তার অমর্যাদা না করতে পারে, (আকবর প্রবর্তিত) এলাহী সন বাতিল করেন এবং হিজরী সনের সূচনা করেন।
স¤্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ এই যে, তিনি তাঁর হিন্দু প্রজাদের প্রতি উৎপীড়ন চালিয়েছেন, তাদেরকে তাদের চাকরি হতে বহিষ্কার করেছেন, তাদের মন্দিরগুলো ধ্বংস করেছেন, তাদের স্কুলগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন, এমনকি সর্ব প্রকারে তাদের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছেন।
এ ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করার পূর্বে অনুধাবন করা উচিত যে, আওরঙ্গজেব আলমগীর ছিলেন তাঁর পূর্বসুরীদের চেয়ে ব্যতিক্রম। প্রফেসর শ্রী রাম শর্মার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘যখন আওরঙ্গজেব সিংহাসন লাভ করেন তখন পরিস্থিতি বদলে যায়। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ় বিশ^াসী মুসলমান এবং এ বিশে^ আল্লাহর শাসন ক্ষমতা কায়েম করতে চাইতেন। একজন মুসলমান বাদশাহ হওয়ার কারণে এই বিষয়টি তার কাছে অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত মনে হয়েছে যে, দেশে কোরআন ও সুন্নাহর বিধিবিধান প্রবর্তিত না হওয়া। প্রয়োজন হচ্ছে আমরা আওরঙ্গজেবের প্রত্যেক কাজকে বর্ণিত বাস্তবতার আলোকে দেখব।’
বস্তুত; আওরঙ্গজেব আলমগীরের যে পদক্ষেপটি হিন্দুদের কাছে খুবই মন্দ মনে হয়েছে তা হলো ১৬৯৭ সালে তার দ্বিতীয়বার ‘জিজিয়া’ আরোপ করা। আওরঙ্গজেব আলমগীর ইসলামবিরোধী ছোট বড় আশি প্রকারের ট্যাক্স মাফ করে দেন। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ হিন্দুদেরই পরিশোধ করতে হতো। ইতিহাসবিদগণ তো সে দিকে দৃষ্টিপাত করেন না, কিন্তু একটি ট্যাক্স দ্বিতীয়বার আরোপ করা হয়েছে, এতে তাদের শরীরে আগুন লেগে যায়। এ ট্যাক্সটি এমন ছিল না, যাতে আওরঙ্গজেবের মস্তিষ্কপ্রসূত বলা যেতে পারে। মুসলিম রাজ্যগুলো সর্বদা তাদের অমুসলিম প্রজাদের কাছ থেকে এ ট্যাক্স উসূল করে আসছিল। ইসলামী রাষ্ট্র অমুসলিমদেরকে নিজের আশ্রয়ে নিয়ে তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিজের দায়িত্বে বহন করে থাকে। ট্যাক্স তারই পরিবর্তে উসূল করা হয়ে থাকে। হিন্দুরা এ ট্যাক্সের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে, প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কিন্তু আওরঙ্গজেব তার সিদ্ধান্তে অটল-অবিচল থাকেন।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনা হতে প্রমাণিত যে, হিন্দুদের একচেটিয়া মন্দিরগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন, কেবল বিশেষ বিশেষ স্থানে নির্মিত মন্দিরগুলো উচ্ছেদ করা হয় যেখানে মুসলমানদের জনবসতি অধিক ছিল এবং এসব স্থানে হিন্দুদের পূজা-অর্চণার জন্য সমবেত হওয়া আপত্তির কারণ হতে পারত। মথুরা, মুলতান এবং জাঠ এলাকায় এরূপ কিছু ঘটনা ঘটেছিল। আওরঙ্গজেব আলমগীরের গোচরে এ বিষয়টি আনা হয়েছিল যে, হিন্দুদের সে সব স্কুল যেখানে মুসলমান শিশুরা লেখাপড়া করে, সে সব প্রতিষ্ঠানে হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থাবলী জবরদস্তি পড়ানো হয়। সুতরাং এ শ্রেণির স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এবার এই অভিযোগটি বিচার বিশ্লেষণ করা যাক যে, হিন্দুদেরকে চাকরি হতে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর জবাবে প্রফেসর শর্মা কর্তৃক সংগৃহীত পরিসংখ্যানটি উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে। এ পরিসংখ্যান ‘মোগল স¤্রাটগণের ধর্মীয় কর্ম কৌশল’ নামক গ্রন্থ হতে নেওয়া হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে; “আকবরের শাসনামলে ‘এক হাজারী’ ও এর চেয়ে ওপরের মোট ১৩৭টি মুনসেবদার পদ ছিল, যেগুলোর মধ্যে ১৪ জন ছিলেন হিন্দু। জাহাঙ্গীরের সময়ে ‘তিন হাজারী’ এবং তার উপরের সর্বমোট ৪৭টি মুনসেবদারের মধ্যে ৬ জন হিন্দু ছিলেন। শাহজাহানী আমলে ‘এক হাজারী’ ও এর উপরের মোট ২৪১টি মুনসেবদারের মধ্যে ৫১ জন ছিলেন হিন্দু। শাহজাহানের যুগে ছোট বড় সর্ব মোট ৮ হাজার মুনসেবদার ছিলেন। আওরঙ্গজেব আলমগীরের সময়ে তাদের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার ৫ শত ৫৬ (১৪,৫৫৬) হয়ে যায়, তাদের মধ্যে ১৪৮ জন ছিলেন হিন্দু।”
উদ্ধৃত পরিসংখ্যান সম্পর্কে বলা হয় যে, এতে প্রমাণিত হয় আওরঙ্গজেব আলমগীরের সময়ে মুনসেবদারের মোট সংখ্যা শাহজাহানের সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি না হলেও হিন্দুদের মুনসেফদারের সংখ্যা প্রথম থেকে প্রায় তিন গুণ হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় যে, আওরঙ্গজেব হিন্দুদেরকে চাকরি হতে একদিকে বহিষ্কার করছেন এবং অপরদিকে হিন্দু মুনসেফদারদের সংখ্যাও বর্ধিত হচ্ছে। (জমিল ইউসুফকৃত বাবর থেকে যাফর)
বিভিন্ন বিশ^স্ত ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীরের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের তথ্য ভিত্তিক যুক্তিনির্ভর দাতভাঙ্গা জবাব দেয়া হয়েছে। সে সব বিবরণ উল্লেখ করা এখানে সম্ভব নয়, উপরে আমরা তার সামান্য উল্লেখ করেছি। বর্তমানে মুসলিম সমাজের একটি শিক্ষিত অংশ ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে রচিত ভিত্তিহীন ও অসত্য ইতিহাস পাঠ করে বিভ্রান্তিতে হাবুডুবু খাচ্ছে এবং তাদের মধ্যে ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে নানা সংশয় ও সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে, যা ইহুদি, খ্রিস্টান, মোশরেকদের অপপ্রচারের চেয়ে কম ক্ষতিকারক নয়।
প্রফেসর শর্মা আওরঙ্গজেবের ধর্মীয় নীতির বিশদ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন, ‘তিনি নিজের সাম্রাজ্যের হিন্দু প্রজাদের ধর্মীয় রীতি প্রথা এবং উৎসবাদি উদযাপনে কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। তিনি ব্রাহ্মণদেরকে বাধা দেননি যে তারা হিন্দুদেরকে তাদের ধর্ম শিক্ষা করাতে পারবে না। তিনি হিন্দুদেরকে সরকারি চাকরি হতে বরখাস্ত করেননি।’
বর্ণিত তথ্যাবলীর আলোকে লেনপোলের এই বাক্যটি বিশেষভাবে প্রণিধান যোগ্য। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রমাণ করা যায়নি যে, পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘ শাসনামলে তার কাছ থেকে (আওরঙ্গজেব আলমগীর) কখনও কোনো নির্যাতনমূলক কাজ সাধিত হয়েছে।’ এ দুই অমুসলিম সত্যনিষ্ঠ পণ্ডিতের স্বীকারোক্তি সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং শত্রুতামূলক বলে গণ্য হয়।
আওরঙ্গজেব আলমগীরের সম্পর্কে আরও ভিত্তিহীন অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, তিনি জোরপূর্বক হিন্দুদেরকে মুসলমান বানানোর চেষ্টা করেছেন। এ প্রধান অভিযোগ সম্পর্কে মাওলানা জুকাউল্লাহ তার বিখ্যাত গ্রন্থে লিখেছেন, আওরঙ্গজেব আলমগীর তার শাসনামলে একজন হিন্দুকেও জোরপূর্বক মুসলমান করেননি, কিন্তু তার যুগের প্রভাবই এমন ছিল যে, রাজধানী ও উহার আশে পাশের হিন্দুরা মুসলমান হয়ে যাচ্ছিল। যে হিন্দু মুসলমান হয়ে যেত, তাকে শরীয়া বিভাগের পরিচালক সম্রাটের দরবারে নিয়ে যেতেন এবং কলেমা তাইয়্যিবা পড়াতেন। সম্রাট তাকে ‘খেলাত’ (রাজকীয় পোশাক) তার, নগদ অর্থ এবং অবস্থা অনুাযায়ী দান করতেন। যে সব বিশিষ্ট হিন্দু মুসলমান হতো তারা সরাসরি স¤্রাটের নিকট উপস্থিত হতো এবং সম্রাট স্বয়ং তাঁর মুখে কলেমা পড়াতেন, সেই সাথে রাজকীয় পোশাক পুরস্কার প্রদানে ধন্য করতেন। অমুসলিম ইউরোপিয়ান নিরপেক্ষ লেখকগণও স্বীকার করেছেন যে, আওরঙ্গজেব ধর্মীয় ব্যাপারে হিন্দু প্রজাদের ওপর কোনো প্রকারের বাড়াবাড়ি করেননি এবং তাঁর রাজত্বকালে জোরপূর্বক কোনো হিন্দুকে মুসলমান করার উল্লেখ সে সময়কার কোনো ইতিহাস পুস্তকে নেই।
এরূপ মন্তব্য এক ইংরেজ ঐতিহাসিকও করেছেন। তিনি ‘তারিখে ফেরেশতা’র বরাতে লিখেছেন, ‘দ্বীনের উন্নয়নের জোশে আওরঙ্গজেব নও মুসলিমদের সাথে মুক্ত হস্তে নিশ্চয় বদান্যতা প্রদর্শন করেছেন। তিনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর ধর্মীয় ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করেননি।’
উল্লেখ্য, তখন ভারতবর্ষে রীতিপ্রথা ছিল এই যে, কোনো হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করতে চাইলে বাদশাহর সামনে গিয়ে হাজির হতো, বাদশাহ তার স্থান মর্যাদা অনুযায়ী তাকে রাজকীয় পোশাক পরিধান করাতেন এবং সোনার দামি বস্তু উপহার হিসেবে দান করতেন।
উপরে আমরা শুধু আওরঙ্গজেব আলমগীরের শাসনামলের দুই একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছি। তার উত্তরসুরীদের মধ্যে সম্রাট নুরুদ্দীন জাহাঙ্গীর তারই রচিত ‘তূজকে জাহাঙ্গির’ এ হিন্দু পণ্ডিতদের সাথে তার ধর্মীয় বাহাসের একটি ঘটনাও বর্ণনা করেছেন। তার যুক্তি প্রমাণ শুনে পণ্ডিতগণ ইসলামের সমর্থক হয়ে যান। তবে এ কথাও সত্য যে, হিন্দুস্থানের মুসলিম রাজা-বাদশাহগণ তাদের শাসনামলে বিপুল সংখ্যক দফতরে অসংখ্য বিভাগ চালু করলেও ইসলাম প্রচারের জন্য কোনো বিশেষ বিভাগ চালু করেননি। কিন্তু মুসলিম শাসকদের কোনো কোনো দ্বীনদার ধার্মিক বাদশাহ-শাসক বিক্ষিপ্তভাবে, ব্যক্তিগতভাবে, স্বেচ্ছায় প্রণোদিত এবং ইচ্ছা-আগ্রহে ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করেন এবং এ জন্য প্রয়াস-প্রচেষ্টা চালান।
বলা হয়ে থাকে যে, মোগল শাসনামলে ইসলামের প্রচার, প্রসার ও উন্নয়ন, অগ্রগতির জন্য স্বতন্ত্র বা বিশেষ কোনো বিভাগ ছিল না, এ কথা সত্য হলেও এ বিশাল সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য যেখানে বিভাগ ও পদ্ধতি কার্যকর ছিল, সেখানে ‘কাজিউল কোজাত’ প্রধান বিচারপতি এবং ‘সদরে সুদুর’ এ দুইটি পদের অধিকারী যারা হতেন তাদের ওপর যে সব দায়িত্ব অর্পিত হত সেগুলো সাধারণত ইসলাম ও ইসলামী শরীয়ত সংক্রান্ত এবং কার্যকরভাবে বলবৎ ছিল। বিশেষ করে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সুদীর্ঘ শাসনামলে ইসলামী বিধিবিধানগুলো কঠোর ভাবে বাস্তবায়ন করা হত। যেহেতু তিনি ছিলেন দ্বীন ধর্মের সর্বাধিক অনুসারী, তাই এ ব্যাপারে তার দায়িত্ববোধও ছিল অসীম। সা¤্রাজ্যের সর্বত্র ইসলামী শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য তার নিরলস উদ্যোগ, প্রচেষ্টা সর্ব মহলে স্বীকৃত। আওরঙ্গজেব মাজহাবের দিক থেকে হানাফী-সুন্নী ছিলেন। তাই তিনি বিশ^ বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ ‘ফাতাওয়া আলমগীরী’ হানাফী মাজহাব অনুসারী ইসলামী পণ্ডিতগণ তারই সরাসরি নেতৃত্বে রচনা ও সংকলন করেন। এর সংকলকদের মধ্যে প্রধান ছিলেন হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) এর মহান পিতা হজরত শাহ আবদুর রহীম (রহ.)। এটি ফতোয়া গ্রন্থ্য হিসেবে ঐতিহাসিক গুরুত্বের অধিকারী এবং হানাফী মাজহাবের নির্ভরযোগ্য সনদ হিসেবে স্বীকৃত। এ বিশাল ফতোয়া গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার ফলে বিশেষতঃ উপমহাদেশের মুসলিম দেশগুলো সহ আরব বিশে^র আলেম সমাজে এর ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীরের এ অবিস্মরণীয় অক্ষয় কীর্তি ইসলামী ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল স্মারক।
সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগীরের রাজত্বকাল অর্ধশত বছর ব্যাপৃত। এ দীর্ঘ শাসনামলে তাঁর জীবনের বিচিত্র বিভিন্ন দিক রয়েছে, যার বিশদ আলোচনার জন্য আলাদা পরিসর প্রয়োজন। সংক্ষেপে বলা যায়, মোগল শাসনামলে স¤্রাট আওরঙ্গজেব যেমন সব চেয়ে অধিককাল রাজত্ব করেছেন, তেমনি সা¤্রাজ্য বিস্তারেও সবার চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জাতির লোকের সাথে সমান আচরণ ও ন্যায়বিচার করতেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ছিল খুবই সরল, সাধারণ। তিনি তাঁর পূর্বসুরীদের ন্যায় বিলাসবহুল ও জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপন করেননি। ব্যক্তি জীবনে তিনি সর্বদা ধর্মীয় অনুশাসনগুলো মেনে চলার চেষ্টা করতেন। এবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থাকতেন, নিয়মিত নামাজ জামায়াতে আদায় করতেন ও রোজা পালন করতেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে তার নিজের বা পরিবারের জন্য একটি পাইও গ্রহণ করতেন না। টুপি সেলাই করে ও কোরআন শরীফ ‘কেতাবত’ (লিখে) করে তার আয় দ্বারা চলতেন। এ মহান সম্রাট ৯০ বছর বয়সে দাক্ষিণাত্বের আওরঙ্গাবাদে ১৭০৭ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন। তিনি অছিয়ত করে যান, তার কবর যেন পাকা না করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন