কুষ্টিয়ায় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও টহলের মধ্যেই সীমান্ত দিয়ে মাদক আসছে। তবে আগের তুলনায় মাদক আসা কিছুটা কমলেও থেমে নেই মাদকের কারবার। সীমান্তের অন্তত ১২টি পয়েন্ট দিয়ে এখনো মাদক আসছে। বিজিবির কয়েকজন সদস্য ও লাইনম্যানের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কড়াকড়ির মধ্যেই জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সীমান্ত এলাকা সড়ক থেকে ফেনসিডিলের দুটি বড় চালান আটক করেছে।
তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা গা-ঢাকা দিলেও এ সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে নতুনরা। পুলিশ ও বিজিবির অব্যাহত অভিযানে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী গা-ঢাকা দিয়েছে, অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে চলে গেছে। অনেকেই গ্রেফতার হয়ে জেলে। আবার এনকাউন্টারে মারা গেছে বেশ কয়েকজন।
সরেজমিন জামালপুরসহ কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট ঘুরে মাদক আসা ও কেনাবেচার নানা তথ্য মিলেছে। বিজিবির স্থানীয় ক্যাম্পের সদস্যরাও বিষয়টি অস্বীকার করেনি। তবে নাম প্রকাশ করে কেউ বক্তব্য দিতে রাজী হয়নি।
বিজিবির সদস্যেরা বলেন, তাদের তালিকাভুক্ত ৮৯ জন মাদক ব্যবসায়ী আছে সীমান্ত এলাকায়। যার মধ্যে জামালপুর গ্রামেরই ৩৫ জন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ গা-ঢাকা দিয়েছে। জেলে আছে বেশ ক’জন। এনকাউন্টারে মারা গেছে একজন। অরক্ষিত সীমান্ত থাকায় কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে কিছু মাদক এখনো আসছে। পুরোপুরি মাদক বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ৭ কিলোমিটার এলাকা দিনে পাহার দেওয়ার জন্য আছে ৪ জন বিজিবি সদস্য। তবে রাতে এ সদস্য সংখ্যা বেড়ে ৭ জন করা হয়। প্রতিটি ক্যাম্প এলাকায় টহল চলে দিন রাত।
এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বিলগাথুয়া বিজিবি ক্যাম্পের নিচ নিয়ে, মহিষকুÐি মাঠপাড়া, মহিষকুÐি মাঠপাড়া ত্রিমোহনী ঘোনাপাড়া, কারিগরপাড়া, পাকুড়িয়া শ্যামল সরকারের বাড়ির নিচ দিয়ে, ভাগজোত ঘাট ও হাতিশালা মোড় দিয়ে মাদক ঢুকছে।
মহিষকুÐি/জামালপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর, রিংকু, মোহন, রবিউল, জনি, ভেটুলতলার বাবু, শাহীন, ভাগজোত তালতলার আহাম্মদ, শাহাব, ভাগজোত গ্রামের রফিকুল, রশিদুল মুন্সিগঞ্জের জব্বার, মানিক ফকির, মহম্মদপুরের সালাম দৌলতপুর সদর ইউনিয়নের গোবরপাড়া গ্রামের রোয়েন, সুরুজ এখন এসব কারবার করছে বলে নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন সুত্র। এলাকার লোকজন জানান, মাদক এনে ঝোপঝাড়সহ বিভিন্ন বাড়িতে রাখা হচ্ছে। পরে মাদাপুর-বাধের বাজার, মাদাপুর-ডংমড়কাÐআদাবাড়িয়া-শশীধরপুর-কল্যাণপুর, মাদাপুর-পুয়ালবাড়ি-বাহেরমাদিয়া ও মুন্সিগঞ্জ-মহম্মদপুর-পান্টিরমোড় দিয়ে পুরো জেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে।
বিজিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সীমান্তে আগের তুলনায় কড়া প্রহরা চলছে। মাদক প্রশ্নে কোন আপোষ করা চলবে না। বিজিবির কেউ জড়িত থাকলে তার বিষয়েও কড়া পদক্ষেপ নেয়া হবে। মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।’
এ তালিকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী উজ্জল, দুলাল ওরফে দুলাল বিশ্বাস, মিলন মন্ডল, জাহিদ ওরফে জাহিদ ডাকাত, আরিফ, নিজাম, লাল, জালাল উদ্দিন মালিথা, মহব্বত আলী, তুহিন, শরিফুল, কুদ্দুস, মিঠু হোসেন, জুয়েল হোসেন, মোহন, টাইগার শাহাবুলসহ অন্য শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা রয়েছে। এদের সবার বিরুদ্ধে ৫ থেকে ১০টি পর্যন্ত মাদকের মামলা রয়েছে।
এ তালিকার দুই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে এন্কাউন্টারে মারা গেছেন। ভারতে পালিয়ে গেছে বেশ কয়েকজন। রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে এসব মাদক ব্যবসায়ীরা বহাল তবিয়তে ছিল এতদিন। তবে পুলিশ আগের তুলনায় কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ফলে বদলে গেছে সেই চিত্র। মাদক ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট ছিল তা ভেঙে পড়েছে।’
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস.এম তানভীর আরাফাত বলেন,‘ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা পুলিশ মাদক নির্মূলে কাজ করছে। জেলায় কোন মাদক থাকবে না। বিজিবিসহ আমরা সব বাহিনী এক সাথে কাজ করছি।’
মাদক নির্মূলে জেলা কোর কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, জেলায় বড় একটি সীমান্ত এলাকা রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে কোনভাবেই মাদক প্রবেশ না করে সে বিষয়ে সমন্বিতভাবে কাজ চলছে। বিজিবির সাথে অন্যান্য বাহিনীকে নিয়ে মাদক নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাৎক্ষণিক জেল-জরিমানা দেয়া হচ্ছে। ফেনসিডিল, ইয়াব ও গাঁজা আসার পরিমাণ কমেছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন