চোখ মানবদেহের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। সুন্দর এই ভুবনকে উপভোগ করার অন্যতম মাধ্যম এই চোখ। চোখ কেবল মনের আয়নাই নয়, দেহেরও জানালা। মানবদেহের সুস্থতা, অসুস্থতা, সুখ-দুঃখ আর বেদনা ভেসে ওঠে এই চোখের মায়াবী পদর্ংায়। কেবল অন্যকে দেখা নয়, নিজেকে দেখাতে তথা ফুটিয়ে তোলার বা প্রকাশে চোখের জুড়ি নেই। চোখ দিয়ে মানুষ চেনা যায়, মানুষের স্বভাবচরিত্র জানা যায়। হৃদয়ের যত আবেগ, আকুতি, ভাব আর ভাষা, মনের যত আশা চোখের পলকে প্রকাশিত হয় বিদ্যুৎ বেগে, বিকশিত হয় কাব্যিক তরঙ্গে। চোখের রোগব্যাধি তাই মানুষকে কেবল শারীরিক কষ্টই দেয় না, মানসিক বিড়ম্বনাও দেয় অনেক। আমার জানা মতে, এমনি একটি সুন্দর মেয়ে বাবলী। বয়স প্রায় ১২ বছর। সিলেট সিটি করর্পোরেশনের ৫নং ওয়ার্ডে বাস করে। সুন্দর, মায়াবী ফুটফুটে মেয়ে। কিন্তু ২ চোখে দেখে না। ৪ বছর আগে তার জ্বর এবং পাতলা পায়খানা হয়েছিল, তারপর চোখে ঘা হয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যায়। বাবলীর মত এরকম অনেক শিশুই এমন অন্ধত্বের শিকার। এমন অন্ধত্বের কারণ : জ্বরের কারণে শিশুর খাবার রুচি কমে যায়, আবার পাতলা পায়খানার কারণে শরীরের পুষ্টিকর উপাদান শরীর থেকে বের হয়ে যায়, ফলে শরীরে ভিটামিন-এর ঘাটতি দেখা যায় বলে চোখের পানি শুকিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে চোখে ঘা এর সৃষ্টি হয়। একে জেরফথালমিয়া বলা হয়। কোন ধরনের খাদ্য উপাদান প্রয়োজন : * ভিটামিন এ হল চোখের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। এটা চোখের বিভিন্ন অংশের আবরণকে রক্ষা করে। এর অভাবে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। চোখের কালো রাজাতে ঘা হয় এবং পরবর্তীতে চোখ নষ্ট হয়ে যায়। * ভিটামিন এ-এর সাথে ভিটামিন সি এবং ই এর প্রয়োজনীয়তা আজ বহুলভাবে প্রমাণিত। এদের এক সাথে এন্টিঅক্সিডেন্ট বলা হয়। এসব ভিটামিন বয়সজনিত চোখের দৃষ্টিক্ষয় অনেকাংশে রোধ করে। * প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাবে চোখের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে চোখ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। * আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে অনেক শিশুই ভিটামিন-এর অভাবজনিত কারণে অন্ধত্ব বরণ করছে। এছাড়াও ভিটামিন এ-এর অভাবে চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ রেটিনা নষ্ট হয়ে যায় বলে প্রথমে রাতকানা এবং পরবর্তীতে শিশু স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ভিটামিনের অভাবে করণীয় : * ভিটামিন-এর অভাবজনিত চোখের রোগ শিশুদের মাঝে বেশি দেখা যায়। শিশুর জন্মের পর মায়ের দুধেই তার জন্যে সর্বোত্তম খাদ্য। মায়ের শাল দুধে প্রয়োজনীয়তা সব খাদ্য উপাদান থাকে। তাই যেসকল মায়েরা শিশুকে প্রথম থেকেই বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করেন সেসব শিশুদের ভিটামিন এর অভাবজনিত অন্ধত্ব অনেক কম হয়। *ছোটবেলা হতেই শিশুকে সুষম খাদ্যে অভ্যস্ত করতে হবে। *ছোটমাছ, পাকাফল, শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে। শিশুকে এসব খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। * জ্বর এবং পাতলা পায়খানা হলে প্রয়োজনীয় খাবার স্যালাইন এবং সুষম খাদ্য দেয়া প্রয়োজন, যেন শরীরে ভিটামিন এবং লবণের ঘাটতি না হয়। * শিশু রাতে ঝাপসা দেখলে দেরী না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। *ডাক্তারের পরামর্শে ভিটামিন এ সময়মত খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা ভিটামিনের অভাবজনিত অন্ধত্ব শুধু সুষম খাদ্যে গ্রহণের মাধ্যমেই প্রতিরোধ করা যায়। এবং সুস্থদেহে সুন্দর দৃষ্টি নিয়ে আমরা দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করতে পারি। এর জন্যে প্রয়োজন প্রচার এবং জনসচেতনতা।
ষ ডা. মাওলানা লোকমান হেকিম
চিকিৎসক, কলামিষ্ট-০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন