শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

বাত ব্যথা ও বাতজ্বর এক নয়

প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ বাত ব্যথা ও বাতজ্বর এই দুটি সমস্যাকে অনেক সময় এক করে দেখে। আসলে দুটো দুই রকম শারীরিক সমস্যা। কেউ যদি ব্যথা বেদনায় আক্রান্ত হয় তাহলে বাত জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বলে সঠিক রোগ নির্ণয় না করে র্দীঘ দিন ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়। বাত জ্বর হয় শরীরে এক প্রকার জিবাণুর সংক্রমণে। এটি একটি অটোইমিউন শারীরিক সমস্যা। এই রোগ গ্রুপ এ বিটাহেমোলাইটিক স্ট্রেপটোকক্কাস নামক এক প্রকার আনুবিক্ষণীক জিবাণুর কারণে হয়ে থাকে।
আর বাত ব্যথা হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজ কর্ম, চলাফেরা, উঠা বসার সমস্যা ও বয়ঃবৃদ্ধির কারণে হাড় ও জোড়ার পরিবর্তন ও কিছু জৈবিক উপদানের কারণে সৃষ্ট শরীরের ব্যথা-বেদনা।
স্বাস্থ্য সচেতনতা, চিকিৎসা সুবিধা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি পরিবর্তনের ফলে দিনে দিনে মানুষের বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শারীরিক, মানসিক শক্তি ও দেহ কোষের কর্মক্ষমতা বা সামর্থ্য ধীরে ধীরে কমতে থাকে। টিস্যুর এই সামর্থ্য ক্রমাবনতির হার বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুপাতে হয়। একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধ যেমন কর্মক্ষম থাকতে পারেন, তেমনি আবার ৫০/৬০ বছর বয়সের ব্যক্তিরা ভুগতে পারেন বিভিন্ন ধরনের বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও জয়েন্ট বা মাংস পেশির ব্যথায় যাকে আমরা সহজ ভাষায় বাত বলে জানি। সাধারণত মহিলাদের ৪০ বছর পর পুরুষরা ৫০ বছর পর বয়সজনিত জয়েন্টের সমস্যায় ভুগে থাকেন। আমাদের দেশের ৫০ ঊর্ধ্ব জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগ লোক ব্যথাজনিত সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে যেসব জয়েন্ট শরীরের ওজন বহন করে এবং অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয় যেমন : ঘাড়, কোমর, স্কন্ধ বা সোল্ডার জয়েন্ট এবং হাঁটু ব্যথার রোগী সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। বাতের ব্যথার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে ৯০ ভাগ হচ্ছে “মেকানিকেল সমস্যা”। মেকানিকেল সমস্যা বলতে মেরুদ-ের মাংস পেশি, লিগামেন্ট মচকানো বা আংশিক ছিড়ে যাওয়া, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিক্স সমস্যা, কশেরুকার অবস্থানের পরিবর্তনকে বুঝায়। অন্যান্য কারণের মধ্যে বয়সজনিত হাড় ও জোড়ার ক্ষয় বা বৃদ্ধি, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস বা গেটেবাত, অস্টিওআথ্রাইটিস, অস্টিওপোরোসিস, এনকাইলজিং স্পন্ডাইলোসিস, বার্সাইটিস, টেন্ডিনাইটিস, স্নায়ুবিক রোগ, টিউমার, ক্যান্সার, মাংস পেশির রোগ, শরীরে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে, অপুষ্টিজনিত সমস্যা, শরীরের অতিরিক্ত ওজন ইত্যাদি
বাত জ্বরে সাধারণত বাচ্চারা ভুগে থাকে। এর রোগ পাঁচ বছর বয়স থেকে পনের বছর বয়স পর্যন্ত এবং পূর্ণ যৌবন হওয়ার আগ বয়স পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এ রোগের লক্ষণ শুরু হয় গলা ব্যথা দিয়ে যাকে ফেরিনজাইটিস বলা হয়ে থাকে তা ছাড়া রোগীর গিরায় গিরায় ব্যথার সাথে ১০২-১০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস জ্বর হয়ে থাকে। সারা শরীরে ব্যথা হয় অনেক সময় বড় জোড়াগুলো ফুলে যেতে পারে। বুকে ব্যথা হতে পারে, চর্মে কিছু কিছু জায়গাই পরিবর্তন আসে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করালে অনেক সময় রোগীর হার্টের বাল্ব নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রথমেই এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন করতে হবে। আর আমাদের দেশে বাত জ্বরের উপর সরকারিভাবে চিকিৎসা কেন্দ্র ঢাকার শেরে বাংলা নগরে আছে। ওখানেও সম্ভব হলে রোগীকে পাঠানো যেতে পারে। চিকিৎসক রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখে সঠিক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে এর রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের রোগের কার্ডিনাল সাইন দেখে ও কিছু ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে করে থাকেন। আর বাত জ্বর নির্ণয় হয়ে গেলে চিকিৎসা কিছু ওষুধের মাধ্যমে দেয়া হয়ে থাকে যেমন : এসপ্রিন, প্রেডনিসোলন, এন্টিবায়োটিক। পাশাপাশি রোগীকে বিশ্রম নিতে হবে। এ জাতীয় রোগীকে দীর্ঘ দিন চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়।
আর বাত ব্যথা নিয়ে কষ্ট না পেয়ে যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাহারা বাতের ব্যথায় ভুগছেন তারা একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের চিকিৎসা ও পরামর্শে ভাল থাকতে পারেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াবিহীন অত্যন্ত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। চিকিৎসক আপনার রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা ও পরামর্শ দিলে আপনি অবশ্যই বাতের কষ্ট থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন, পাশাপাশি থাকবেন কর্মক্ষম। ফিজিওথেরাপিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল যন্ত্রপাতি, ইন্টারফেরেনশিয়াল থেরাপি, ইনফারেড রেডিয়েশন, ট্রান্স কিউটেনিয়াস ইলেকট্রিক নার্ভ ইস্টিমুলেটর, ইলেকট্রিক নার্ভ ও মাসেল ইস্টিমুলেটর, ওয়াক্সবাথ থেরাপি, অটো ও মেনুয়াল ট্রাকশন, হাইড্রোথেরাপি ও চিকিৎসক বিভিন্ন কৌশগত ব্যয়াম করিয়ে থাকেন। যেহেতু ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসকের কলা কৌশল নির্ভর তাই দেখে শুনে ভাল ফিজিওথেরাপি সেন্টারে চিকিৎসা ও পরামর্শ নেয়া উচিত।। গবেষণা করে দেখা গেছে বেশির ভাগ বাত ব্যথা রোগী ম্যানুয়াল ও ম্যানুপুলেশন থেরাপি নিয়ে সুস্থ আছেন।
ষ ডাঃ মোঃ সফিউল্যাহ্ প্রধান
চেয়ারম্যান, ডিপিআরসি হাসপাতাল,
২৯ প্রবাল হাউজিং, রিং রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা । মোবাইল : ০১৭১৬৩০৬৯১৩

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন