‘এমন জীবন তুমি করিবে গঠন/মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।’ কবিতার লাইনগুলো যেন তার জন্যই লেখা। যার কাছে মানুষের পরিচয় ছিল কেবল মানুষ হিসেবে। যিনি ছিলেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আস্থাভাজন ও পরম শ্রদ্ধেয়। তাইতো ইন্তেকালের ১১তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় গত ১৫ এপ্রিল তার বাড়িতে এবং ২৩ এপ্রিল জেলা হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের আলোচনা সভায় ঝালকাঠিতে হাজারো ব্যস্ততা উপেক্ষা করে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন মুজাদ্দেদে মিল্লাত, হাদীয়ে জামান, ইনসানে কামেল হযরত মাওলানা মুহম্মদ আযীযুর রহমান নেছারাবাদী (কায়েদ ছাহেব হুজুর) (রহ.)।
কোটি ভক্তকে শোকসাগরে ভাসিয়ে ২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.)। ইন্তেকালের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি কালের গহŸরে হারিয়ে যাননি বরং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানান সঙ্কটে তার অভাব অনুভব করছে দেশবাসী। গত ১৫ এপ্রিল ঝালকাঠির নেছারাবাদ কমপ্লেক্স সম্মেলনকেন্দ্রে এবং ২৩ এপ্রিল ঝালকাঠির ফড়িয়াপট্টিতে আয়োজিত আলোচনা সভায় স্মৃতিচারণে আবেগাপ্লুত হয়েছেন বক্তা শ্রোতা সবাই। সবার একই কথা হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.-এর অবিনশ্বর দর্শনেই রয়েছে জাতির মুক্তি।
২৩ তারিখের আলোচনার শুরুতেই বক্তব্য প্রদান করেন হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.)-এর মানসপুত্র, দৈনিক ইনকিলাবের নির্বাহী সম্পাদক কবি রূহুল আমীন খান। তিনি বলেন, হুজুরের জীবনী আলোচনা করে শেষ করা যাবে না, তিনি ছিলেন সাহাবায়ে কেরামের মুজাচ্ছাম নমুনা এবং ঐক্যের অগ্রদূত। বর্তমান সময়ে চারিদিকে যে হানাহানি, দ্ব›দ্ব, বিবাদ, রক্তপাত দেখতে পাচ্ছি এর মূল কারণ অনৈক্য। আজকে পীরে-পীরে, আলেমে-আলেমে ঐক্য প্রয়োজন, দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য প্রয়োজন, প্রয়োজন হিন্দু-মুসলমান জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ঐক্য। আজকে এই স্মরণসভাই প্রমাণ করে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তিনি কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। কাজেই কায়েদ ছাহেব হুজুর কেবলমাত্র বিগত দিনের জন্য নন বরং আজও আগামী দিনের জন্য সমান প্রয়োজনীয়। আমরা উপলব্ধি করছিÑতিনি আজকেরও নেতা, আগামী দিনেরও নেতা, তিনি কায়েদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কায়েদ ছাহেব হুজুর এর স্নেহধন্য আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, কায়েদ ছাহেব হুজর (রহ.) ছিলেন মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি ইন্তেকাল করলেও দিনেদিনে তার ভক্ত ও অনুসারী বেড়েই চলছে। তার অবর্তমানে যোগ্য উত্তরসূরী মাওলানা খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর পিতার আহŸান নিয়ে সারাদেশ সফর করছেন। এতে তিনি যে আদর আস্তিক পাচ্ছেন এবং তাকে ঘিরে যে কায়েদ ছাহেব হুজুরের চিন্তাধারা প্রচারিত হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য গৌরবের ব্যাপার।
জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট অমলচন্দ্র দাস বলেন, কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.)-এর কাছে মুসলমানেরা যেভাবে এসেছেন, অন্য ধর্মের মানুষও সেভাবে এসেছেন। জাতিভেদের লেশমাত্র ছিল না। তিনি ছিলেন সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির মূর্তপ্রতীক।
বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র ও বাংলাদেশ আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদ, বানারীপাড়া পৌরসভার আহŸায়ক সুভাষচন্দ্র শীল বলেন, আজকের এই দিনটি এই জনপদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে গেল।
জাতিসংঘের বাংলাদেশস্থ স্বাস্থ্য বিষয়ক কনসালটেন্ট ডা. অঞ্জন কুমার নাগ তার একটি অবিস্মরণীয় স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, আমার মেয়ের চোখে খুব সমস্যা, আমি ছুটি পাচ্ছি না, ওকে নিয়ে ইন্ডিয়াও যেতে পারছি না। গোলাপজল আনতে বললেন এবং তা পড়ে আমার হাতে দিয়ে বললেনÑএটা ওর চোখে দিবেন আর ডাক্তার দেখাবেন, আশা করি ভাল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!
১৫ ও ২৩ তারিখের সভায় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে স্মৃতিচারণ করে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি কাজী খলীলুর রহমান, জেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি তপন কুমার রায় চৌধুরী, জেলা মুছলিহীন সভাপতি আলহাজ আবু বকর খান বাচ্চু হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ঝালকাঠির নেতৃবৃন্দ, আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু, নলছিটি উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব ছিদ্দিকুর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.)-এর ভক্তবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.)-এর একমাত্র ছাহেবজাদা আমীরুল মুছলিহীন হযরত মাওলানা মুহম্মদ খলীলুর রহমান নেছারাবাদী হুজুর বলেন, হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর (রহ.)-এর দীর্ঘদিনের চিন্তা-চেতনা, ত্যাগ-শ্রম এবং আপনাদের প্রাণপণ সহযোগিতায় দীর্ঘকাল ধরে ঝালকাঠিতে যে বেপর্দেগী-বেহায়ায়ী, সুদ-ঘুষ, মদ-জুয়া ও দুর্নীতি-দুষ্কৃতিমুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে পূর্ণ একটি সুখময় সমাজ কায়েম হয়েছে। এটাকে ধরে রাখার জন্য আমার মতো অধমকেও যে আপনাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কোন ষড়যন্ত্রকারীর চক্রান্তে তা যেন নস্যাত হয়ে না যায়, হুজুর (রহ.)-এর ১১তম ইন্তেকাল বার্ষিকীতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন