ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের থানাকান্দিতে প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে ইউপি চেয়ারম্যানও নিজের বাড়ি ছাড়া। চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান জীবন শংকায় গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় চাচাতো ভাই খোরশেদ আলমের বাড়িতে বসবাস করছেন। শত শত লোক দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে তার বাড়ি ঘিরে মারার চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে উদ্ধার করে। এসময় পুলিশ প্রায় ১৬০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুঁড়তে হয়। নবীনগর থানা পুলিশও চেয়ারম্যানকে মারার জন্যে তার বাড়িতে হামলা করেছিলো বলে স্বীকার করেছে। উপজেলা নির্বাচনের পরদিন ১ এপ্রিল তান্ডব চলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি ও হাজিরহাটি গ্রামে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান আর কাউসার মোল্লার নির্বাচনী বিরোধে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির জন্যে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দায়ী করছে।
সরজমিন খোঁজ খবরে জানা যায়, উত্তর লক্ষীপুর ও থানাকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট চলাকালে সকালে গোলযোগ হয়। কাউসার মোল্লার পক্ষ লক্ষীপুর কেন্দ্রটি দখল করার চেষ্টা করে। এরপর নির্বাচনে চেয়ারম্যান জিল্লুর সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী দোয়াত কলম প্রতীকের মনিরুজ্জামান জয়ী হয়। এর জের ধরে পরদিন সকালে তান্ডব চালানো হয় হাজিরহাটি ও থানাকান্দি গ্রামে। শত শত লোক দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও তার সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙ্গচুর করে। পুলিশের হিসেবে, ১৪০টির মতো ঘরবাড়ি ভাঙ্গচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে ওইদিন। কাউসার মোল্লা গ্রুপের এ হামলায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করে গৌরনগরের লোকজন। গৌরনগর ছাড়াও সাতঘরহাটি, হাজিরহাটি ও থানারকান্দি গ্রামের লোকজনও ছিলো তাদের সাথে। পুলিশ সুত্র জানিয়েছে, হামলা শুরু হলে জিল্লুর রহমান পুলিশকে অবহিত করে। এলাকার সংসদ সদস্যও থানার ওসিকে ফোন করেন। পুলিশ জানায়, নবীনগর থানার ওসি রনজিৎ রায়ের নেতৃত্বে ৮ জন পুলিশ সদস্যের একটি দল সেখানে পৌছে ১৫৮ রাউন্ড গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের হটিয়ে চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে। এর আগেই চেয়ারম্যানের বাড়ির ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এঘটনার পর চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজনও পাল্টা হামলা করে কাওসার মোল্লার পক্ষের লোকজনের ঘরবাড়িতে। কাউসার মোল্লার পক্ষটি তাদের ঘরবাড়িতে হামলা এবং এখন জমির ধান কাটায় বাধা দেয়ার জন্যে চেয়ারম্যান ও তার পক্ষের ওপর দোষ চাপালেও চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেছেন, তার জীবনই নিরাপদ নয়। বাড়িতে থাকার সাহস পাচ্ছেননা। কাউসার মোল্লা, আব্বাস ও আবু হানিফের নেতৃত্বে তার পক্ষের লোকজনের দেড়-দুশো ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙ্গচুর করা হয়েছে। তার লোকজনকে মারধোর করা হয়েছে। এখনো মারধোর করা হচ্ছে। লুটপাট করা হচ্ছে। কিন্তু তারা উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছে। প্রতিপক্ষের টার্গেট আমি। চেয়ারম্যানের ভাই আবুল কালামের ঘর ভাংচুর চালিয়ে ফ্রিজ ও নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায় হামলাকারীরা। সরজমিনে গ্রাম দুটিতে গেলে হামলার শিকার থানাকান্দি গ্রামের নূরু মিয়ার স্ত্রী খালেদা জানান, চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষ গ্রুপের অত্যাচারে তারা দিশেহারা। স্বামী নূরু মিয়াকে গত এক-দেড় বছরে ৭/৮ বার মারধোর করেছে ওই পক্ষটি। সারা শরীরে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। থানাকান্দি গ্রামের রাহেলা জানান, তার ১০ বছর বয়সী ছেলে মোবারককে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আনতে গেলে পুলিশ তাকেও আটক করে। পরে ছেলের সাথে তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়। ১০/১৫ দিন আগে টাঙ্গিরপাড়ে জমির ফসল কাটতে গিয়ে কাউসার মোল্লা গ্রুপের কুদ্দুস, কামালসহ ৪/৫ জনের হামলার শিকার হন হাজিরহাটি গ্রামের ফুল মিয়া (৫০) নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিৎ রায় জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত। সেখানে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। এ ঘটনায় ১২’শ জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে। দু’পক্ষের ১০ জনকরে মোট ২০ জনকে পুলিশ আটক করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন