শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

হামলার ভয়ে শহর ছাড়ছেন শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডেতে কয়েকটি চার্চ ও হোটেলে আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলার দায় নিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব হেমাসিরি ফেরনান্দো পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে রয়টার্সকে জানান। আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতদের শেষকৃত্য চলার মধ্যেই দেশটির পশ্চিম উপক‚লের নেগোম্বো শহরের শত শত মুসলমান শরণার্থী এলাকাটি ছাড়ছেন। এ সিরিজ হামলায় কয়েকটি চার্চ ও হোটেলে সিরিজ হামলায় ৩৫৯ জন নিহত হয়েছেন। গির্জার নেতারা ধারণা করছেন, সেইন্ট সেবাস্টিয়ানেই মৃতের সংখ্যা ২০০-র কাছাকাছি হতে পারে।

এদিকে শ্রীলঙ্কা পুলিশ গতকাল সন্দেহভাজনদের নাম ও ছবি প্রকাশ করে তাদের যে কোন তথ্য দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহŸান জানিয়েছে। তথ্য জানানোর জন্য কয়েকটি ফোন নাম্বার দেয়া হয়েছে। পুলিশ যে কোন গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে একজন মিসরীয়, বেশ কয়েক জন পাকিস্তানীকে আটক করায় দেশটিতে মুসলিমদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলিমরা বাড়িঘর ছেড়ে মসজিদে আশ্রয় নিচ্ছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ওদিকে আজ শুক্রবার জুমা নামাজের হামলার আশঙ্কায় রাজধানী কলম্বোসহ সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। রাত্রীকালীন কারফিউ আজ ভোর পর্যন্ত বলবৎ ছিল। অপরদিকে দেশটির পার্লামেন্টে গতকাল সরকারের ব্যর্থতার জন্য বিরোধীদের বাক্যবাণের মধ্যে সেনাবাহিনীকে জরুরিকালীন কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরো ক্ষমতা দিয়ে বিল পাস করা হয়েছে। এর ফলে সেনাবাহিনী যে কোন মানুষকে আটক ও ইচ্ছেমতো আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষমতা লাভ করেছে।
হামলার দায় নিয়ে শ্রীলংকার প্রতিরক্ষা সচিবের পদত্যাগ
শ্রীলংকায় ইস্টার সানডেতে কয়েকটি চার্চ ও হোটেলে আত্মঘাতী সিরিজ বোমা হামলার দায় নিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব হেমাসিরি ফেরনান্দো পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, নিজের কাজে কোনো ব্যর্থতা ছিল না, তিনি প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে পরিচালিত কিছু প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার দায়ভার গ্রহণ করেছেন।
২১ এপ্রিলের সকালে যেসব এলাকায় বোমা হামলা হয় তার মধ্যে নেগোম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চও ছিল। অন্য ছয়টি জায়গায় একই সময়ে হামলা হলেও এ গির্জাটিতে হওয়া হামলাই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী। দেশটির কলম্বো থেকে মাত্র এক ঘণ্টা দূরের এ বন্দর শহরটিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন স¤প্রদায় মিলেমিশে বাস করছে। তবে গত কয়েকদিনে সেখানে সা¤প্রদায়িক উত্তেজনা অনেক বেড়ে গেছে। গত বুধবারও কয়েকশ’ পাকিস্তানি মুসলমান কলম্বোর উত্তরের এ শহরটি ছেড়ে পালিয়ে যান। স্থানীয় নেতা ও পুলিশ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় থাকা ওই মুসলমানদের সরিয়ে নিতে বাসেরও ব্যবস্থা করে দেন।
পাকিস্তান থেকে আসা আদনান আলি বলেন, বোমা হামলা এবং এখানে যে বিস্ফোরণটি হয়েছে তার কারণে স্থানীয় শ্রীলঙ্কানরা আমাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। এ মুহূর্তে আমরা জানি না, আমরা কোথায় যাচ্ছি। হামলার পরে এর দায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়েছে। এ জঙ্গিগোষ্ঠীটি ওয়াহাবি মতাদর্শে বিশ্বাসী। 
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কায় ফের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সকালে রাজধানী কলম্বো থেকে ৪০ কিমি দূরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে পাগোডা শহরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেছনে একটি ফাঁকা জমি থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। কীসের থেকে বিস্ফোরণ হল, এর পেছনে কারও হাত রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তবে ফের বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। 
ওদিকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সব ক্যাথলিক গির্জা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সিনিয়র যাজক ফাদার এডমন্ড তিলেকারতেœ। 
এদিকে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, ২১ এপ্রিলের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আগেই থেকেই নজরদারিতে রেখেছিল লঙ্কান গোয়েন্দারা। তবে তখনও পর্যন্ত তাদের হেফাজতে নেয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ সরকারের হাতে ছিল না।
অভিজাত পরিবারের সন্তানদের এভাবে হামলায় অংশ নেয়ার বিষয়েও কথা বলেছেন লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হামলাকারীরা মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। তারা দেশের বাইরে পড়াশোনা করে এসেছে। সমাজে তাদের অভাবনীয় অবস্থান রয়েছে।
ভারতের ৭ প্রতিষ্ঠান থেকে বিস্ফোরক সংগ্রহ করে আইএস!
আলোচিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট আইএসকে বিস্ফোরক সরবরাহকারী দেশগুলোর তালিকায় নাম রয়েছে ভারতের।
৭টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এ জঙ্গি সংগঠনটিকে বিস্ফোরকদ্রব্য ও অন্যান্য সামরিক রসদ জোগান দেয় বলে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। 
স¤প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক প্রতিবেদনে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-কে ২০টি দেশের ৫১টি প্রতিষ্ঠানের সামরিক রসদ সরবরাহ করার বিষয়টি প্রকাশ করেছে। ‘কনফ্লিক্ট আর্মামেন্ট রিসার্চ' (সিএআর) নামের একটি সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
জঙ্গি সংগঠন আইএস ২০টি দেশ থেকে বিস্ফোরক এবং নানা ধরনের সামরিক রসদ সংগ্রহ করে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি রয়েছে তুরস্কে। এরপরের অবস্থানেই রয়েছে ভারত। ৭টি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে আইএস বিস্ফোরকদ্রব্য সংগ্রহ করে। তবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি স্বীকার করেনি।
স¤প্রতি ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ পত্রিকা এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিষয়টি নিয়ে ভারতে তোলপাড় শুরু হয়।
প্রায় ২০ মাস অনুসন্ধান চালিয়ে সংগৃহীত তথ্যের আলোকে সিএআর জানায়, সিরিয়া এবং ইরাকে আইএস যেসব অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে যুদ্ধ করছে তার মধ্যে বিশ্বের ২০টি দেশের ৫১টি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা অন্তত ৭০০ এমন ধরনের উপাদান রয়েছে যেসব উপাদান ‘ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস' বা আইইডি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
২০টি দেশের তালিকায় তুরস্ক, ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রোমানিয়া, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, চীন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া আর চেক প্রজাতন্ত্রের মতো দেশের নামও রয়েছে।
ত্রæটি-বিচ্যুতি থাকার কথা স্বীকার শ্রীলঙ্কার
ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় গোয়েন্দা তৎপরতার ত্রæটি-বিচ্যুতি থাকার কথা স্বীকার করেছে শ্রীলঙ্কা। গতকাল বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, এই মাসের শুরুতেই হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ভারতের একটি গোয়েন্দা সংস্থা শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে সেভাবে আলোচনা হয়নি। পার্লামেন্টেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দায় নিতে হবে। যদি গোয়েন্দা তথ্য সঠিক লোকজনের কাছে পৌঁছানো যেত, তাহলে এই হামলা এড়ানো যেত বা ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেত।’ পার্লামেন্ট নেতা ল²ণ কিরিয়েলা বলেন, ৪ এপ্রিল ভারতের সতর্কতার তথ্য এসে পৌঁছায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী কেউই তা গ্রহণ করেননি। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে বরখাস্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
নয়জন হামলাকারীর মধ্যে আটজন শ্রীলঙ্কার নাগরিক বলে শনাক্ত হয়েছে। হামলায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) জড়িত কি না, তা নিয়ে তদন্ত করছে শ্রীলঙ্কার সরকার। প্রকাশিত হয়েছে যে, হামলাকারীদের একজন যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করেছেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, নিউজ ফার্স্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন