রাজশাহী ব্যুরো : আসন্ন জাতীয় বাজেটে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে বরাদ্দসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে রাজশাহীর সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। গতকাল (মঙ্গলবার) সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি দেয়া হয়। এর আগে ঘণ্টাব্যাপী জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলোÑ গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ, উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন, সিএনজি স্টেশন স্থাপন, বসতবাড়ি ও কলকারখানায় বন্ধ গ্যাস সংযোগ চালু, রাজশাহী-চট্টগ্রাম সরাসরি ট্রেন চলাচল চালু, আব্দুলপুর-রাজশাহী-রহনপুর পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ, সরকারিভাবে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়ন, রাজশাহীর বন্ধ রেশম কারখানাসহ অন্যান্য কারখানা চালুকরণ, স্থায়ী নদীতীর প্রতিরক্ষা কাজ দ্রæত বাস্তবায়ন, কৃষিভিত্তিক ইপিজেড প্রতিষ্ঠা, রাজশাহী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও রাজশাহীতে ক্রিকেট টেস্ট ভেন্যু প্রতিষ্ঠা।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, রাজশাহীর দক্ষিণ-পূর্ব পাশ ঘেঁষে পদ্মা নদী প্রায় ৭০ কি.মি. দৈর্ঘ্য বিস্তৃত। কৃষিভিত্তিক উত্তরাঞ্চলের মানুষ পানির বড়ই কষ্টে আছে। ভ‚উপরিস্থ পানির ব্যবহার ছাড়া বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি বিপ্লব ও অত্র অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। বেশি মাত্রায় ভ‚গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে ভ‚মিধসসহ পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এবং এর মাশুল দিতে হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। এ থেকে উত্তরণের জন্য গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ কারণে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে আমাদের রাজশাহী অঞ্চলের অতি প্রয়োজনীয় গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প অনুমোদনসহ ১০ দফা দাবিসমূহ বাস্তবায়নের ঘোষণা দাবি করেন।
স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ব্যারাজের জলাধারের পানি বিভিন্ন মৌসুমে সেচ প্রদান, মৎস্য সম্পদ প্রজনন, সংরক্ষণ ও উৎপাদন, অব্যাহতভাবে নৌপরিবহন এবং লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হবে। ফলে প্রকল্প এলাকায় বছরে ২৫ লাখ টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে, ১০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং বছরে মৎস্য সম্পদ উৎপাদন হবে প্রায় ২ দশমিক ৫ লাখ টন। ফলে রাজশাহীতে একটি বন্দরনগরীর সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
স্মারকলিপিতে রাজশাহীর মানুষের প্রাণের গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পসহ ১০ দফা দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করে নদীভাঙন, বন্যা, খরা ও মরুকরণের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের আসন্ন প্রভাব হতে এ অঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করবেন এটাই রাজশাহীবাসীর সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা। স্মারকলিপিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এর আগে রাজশাহীর উন্নয়নে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম করা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ, মানববন্ধন করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। স্থানীয় এমপিকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
স্মারকলিপি গ্রহণের সময় জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন বলেন, রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের দাবিসমূহ এ অঞ্চলের মানুষের জন্য ন্যায়সঙ্গত। তিনি বলেন, স্মারকলিপি গুরুত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে।
এসময় রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলী, সাধারণ সম্পাদক মো: জামাত খান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডা: আবদুল মান্নান, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু, মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডেভোকেট মঞ্জুর হাসান মিঠু, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মহানগর কমিটির সদস্য আলী আর্সলান অপু, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মামুন-অর-রশিদ, রাবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার আলমগীর সরকার প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন