বোরো ফসলের মাঠে এখন পাকা ধানের সোনালি হাসি। উজ্জ্বল রোদে সেই ঝলমল করে উঠছে। কৃষক কাস্তে নিয়ে ধান কাটার উৎসবে নেমে পড়েছেন। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুক‚ল থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার ক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক কৃষিকে আরো এগিয়ে নিতে দরকার অল্প জমিতে বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনের গবেষণা, কৃষির সমস্যাদি সমাধান, লাগসই ও টেকসই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগানো। এক্ষেত্রে কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য এখন রীতিমতো ঈর্ষণীয়। অর্থনীতির পরিসংখ্যানে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অনন্য উদাহরণ। ধান, সবজি, আলু ও ভুট্টাসহ খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। শুধু তাই নয়, সবজিতে ৩য় ও আলুতে ৭ম অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কৃষি যেভাবে অগ্রসারমান তাতে আগামীতে আরো উন্নীত হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বৈশাখের দখিণা বাতাসে দোল খেতে খেতে দেশের প্রধান এ খাদ্যশস্য হাসি ফুটিয়েছে কৃষকদের মুখে। বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যস্ততা। মাঠের ফসল গোলায় তুলতে ব্যস্ত কৃষক।
কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বোরোর বাম্পার ফলনের চিত্র। কুমিল্লায় ফসলের মাঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে ধানের সোনালি আভা। প্রকৃতি এ বছর দু’হাত ভরে দিয়েছে কৃষকদের। স্বর্ণ রঙে পাকা ধান কাটতে শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে কাস্তে হাতে মাঠে ছোটেন কৃষক। ধান কাটা আর আঁটিবাঁধা শেষে ভার করে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির উঠোনে। মাড়াইয়ের পর রোদে শুকিয়ে তোলা হবে গোলায়।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কুমিল্লায় এ বছর বোরোর আবাদ হয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৪৫৭ হেক্টর জমিতে। যা ছিল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় চার হাজার হেক্টর বেশি। তেমনি ফলনও ছাড়িয়ে গেছে লক্ষ্যমাত্রা। হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪ দশমিক ৯ টন।
কুমিল্লার চান্দিনা, দেবিদ্বার, বুড়িচংসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কৃষক পরিবারেই এখন নতুন ধানের গন্ধ। কাজে কৃষকদের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষাণীদেরও। শত ব্যস্ততার পরও ফলন ভালো হওয়ায় সকল ক্লান্তি ভুলে তাদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে খুশির ঝিলিক। তবে কয়েকদিন আগে বয়ে যাওয়া দুদফা কালবৈশাখী ঝড় পরিশ্রম বাড়িয়ে দিয়েছে কৃষকদের।
চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, কিশোর বয়সী ছেলে আর দুজন শ্রমিককে সঙ্গে নিয়ে ট্রাকে ধানের আঁটি তুলতে হয়। বোরো ধানের ফলন এ বছর ভালোই হয়েছে। তবে বাজারে দাম কিছুটা কমে গেছে, অপরদিকে বেড়েছে শ্রমিকের দাম।
আমিনুর রহমানের মতে, শ্রমিক খোঁজে পাওয়াটাই এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আগে যেখানে তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকায় একজন শ্রমিক পাওয়া যেতো সেখানে এখন ৫০০ টাকায় মিলছে না। তাই বাধ্য হয়েই নিজেকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয় সাথে নিয়ে এসেছি স্কুলপড়ুয়া ছেলেকেও। তার মতো আরো অনেক কৃষকের সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল শ্রমিক সঙ্কটের কথা। ময়মনসিংহ, রংপুর কিংবা গাইবান্দাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে থেকে আসা এসব শ্রমিকের চাহিদা প্রতিবছরই ইরি-বোরো মৌসুমে বেড়ে যায়।
কুমিল্লা সদর উপজেলার মহেষপুর ঈদগাহসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে মাটি ফেলে উঁচু করে রাখা স্থানে ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত ময়মনসিংহ থেকে আসা চারজন শ্রমিক। বস্তা বিছিয়ে রাস্তায় বসে এ কাজের তদারকি করছেন কৃষক আবদুল হামিদ।
এ বিষয়ে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী বলেন, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে কৃষিতে অভুতপুর্ব উন্নতি হয়েছে। অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে আরো উন্নতি ঘটানোর জন্য পুরোপুরি যান্ত্রিকীকরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তার মতে, সরকারের তরফ থেকে প্রাপ্ত সকল প্রকার সহযোগিতা আর কৃষকদের পরিশ্রমের ফলেই এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে কুমিল্লায়।
তবে ফসলের বাম্পার ফলনের পরও একদিকে বাজারে ধানের মূল্যহ্রাস অপরদিকে শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধিতে কিছুটা হতাশাও বিরাজ করছে কুমিল্লার কৃষকদের মাঝে। তবে তাদের আশা, এখন না হোক কিছুদিন পর হলেও বাড়বে ধানের দাম। অধিক ফলনের মতো লাভের অংকটাও প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন