শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ধানের বাম্পার ফলন

রেকর্ড উৎপাদনের আভাস বিশ্বব্যাংকের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

প্রতি বছরই কম-বেশি দুর্যোগ লেগেই থাকে রোরো ধান চাষে। গত কয়েক বছর বন্যা, শিলাবৃষ্টি, ঝড়ের কারণে মাঠ থেকে অধিকাংশ কৃষক বোরো ফসল উঠাতে পারেননি। আকাশে কালো মেঘ জমলেই চরম উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও দুশ্চিন্তা বেড়ে যায় চাষিদের। চলতি বোরো মৌসুমে নানা প্রতিকূলতার পরও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশের হাওর অঞ্চল সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণাসহ দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলে খোঁজ নিয়ে এবার বোরো ধানের আবাদের যে চিত্র পাওয়া গেছে তা খুবই আশাব্যঞ্জক। বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেট আউটলুক : এপ্রিল ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনুকূল আবহাওয়া ও পাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ কম থাকায় চলতি অর্থবছর চাল উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বাড়তে পারে। বিশ্বব্যাংক আভাস দিয়েছে, চলতি বছর দেশে চালের উৎপাদন দাঁড়াবে তিন কোটি ৫০ লাখ টন। উৎপাদনের দিক থেকে এটি হবে সর্বোচ্চ। এতে গত বছরের চেয়ে দেশে চালের উৎপাদন বাড়বে সাত শতাংশের বেশি। আর উৎপাদন বেড়ে যাওয়া ও আমদানিতে আবার শুল্ক আরোপ করায় এ বছর দেশে চাল আমদানি ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে যাবে। তবে ফলন বা উৎপাদন ভালো হলেও অনেক এলাকার কৃষক ন্যায্য দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে। বাম্পার ফলনে গোলা ভরা ধানেও তাদের মুখে হাসি ফুটছে না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ কৃষি অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রফেসর ড. ইশমাত আরা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের প্রান্তিক কৃষকরা লাভবান না হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকে। বর্তমানে এতে নতুন কিছু কারণ যোগ হয়েছে। প্রথমত শ্রমিকের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদনের খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এতে কৃষকরা উৎপাদন খরচের তুলনায় সেরকম লাভবান হতে পারেনা। দ্বিতীয়ত অন্যান্য শিল্পেরমতো কৃষি খ্যাতে প্রন্তিক কৃষকরা সরাসরি বিক্রয়কাজে অংশ নিতে না পারায় মধ্যস্বত্বভোগীরা বিভিন্নভাবে লাভবান হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগিরা নিজেদের নির্ধারণ করে দেয়া অল্পদামে কৃষকদের থেকে পণ্য সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর তা কয়েকগুণ লাভে বিক্রি করে। এতে কৃষির উৎপাদন বাড়লেও কৃষকরা লাভবান হতে পারছে না। তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন সময় প্রান্তিক কৃষকদের থেকে ধানসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য সংগ্রহ করলেও তদারকির অভাবে তা প্রকৃত কৃষক পর্যন্ত পৌঁছায় না। মিল মালিক বা মজুদদাররা নামে-বেনামে কৃষকদের নাম দিয়ে নিজেরা লাভবান হয়। এ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কৃষি অর্থনীতির এই বিশেষজ্ঞ সরকারের ফসল সংগ্রহ করার সময় যেন তা প্রকৃত কৃষকদের কাছে থেকে করা হয় তা নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে কৃষিবীমাসহ তাদের আর্থিক সুবিধা দানে অন্যান্য উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন।
মৌলভীবাজার জেলায় হাওর ও নদী তীরে এখন দোল খাচ্ছে আধাপাকা ও পাকা বোরো ধান। চোখ যত দূর যায় দিগন্তজুড়ে শুধু সোনালি ধানের মাঠ। এ জেলায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, কাউয়াদীঘি হাওর, হাইলহাওর, বড়হাওর, করাইয়ার হাওর, কেওলার হাওর। সবকটি ছোট-বড় হাওরের বোরো ধানে বাম্পার ফলন। ধানের এমন দৃশ্যে হাওর পাড়ের কৃষকরা নব উদ্যমে স্বপ্ন বুনছেন। তাদের সে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না এমন দুশ্চিন্তাও ঘুরপাক খাচ্ছেন। বন্যা শিলাবৃষ্টি আর বজ্রপাতের আতঙ্কে ধান কাটতে পারছেন না বলে জানান হাওর পাড়ের কৃষকরা।
হাওররক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মো. আলমগীর বলেন, কাউয়াদীঘি হাওর বাদে এবার অনেক ফসল হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা যাচ্ছেনা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ৭ উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ১১৬ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ১৬২ হেক্টর। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৬ হেক্টর ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণের জেলায় মাগুড়ায় পাকাধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে ইরিবোরে ধানের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনকুলে থাকায় ইরিবোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন । চারিদিকে শুধু ধান আর ধান ।
ধানের বাম্পার ফলন নিয়ে অগ্রিম আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক বলছে, দুই দফা বন্যায় ২০১৭ সালে দেশে চালের উৎপাদন বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এতে সে বছর চালের উৎপাদন কমে যায় প্রায় ১৯ লাখ মেট্রিক টন। এর প্রভাবে দেশের প্রধান খাদ্যশস্যটির উৎপাদন ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়। তবে অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ কম থাকায় চলতি অর্থবছর চাল উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ বাড়তে পারে।
সংস্থাটির স¤প্রতি প্রকাশিত ‘কমোডিটি মার্কেট আউটলুক: এপ্রিল ২০১৯’-এ উঠে এসেছে এ তথ্য। ছয় মাস পরপর এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এবারের প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য ‘ফুড প্রাইস শকস: চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড ইমপ্লিকেশনস’।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দেশে চালের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সমান। এ দুই বছরই তিন কোটি ৪৫ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়। অর্থাৎ ২০১৫ সালে চালের উৎপাদনে শূন্য প্রবৃদ্ধি হয়। পরের বছর ২০১৬ সালে তা সামান্য বেড়ে হয় তিন কোটি ৪৬ লাখ টন। তবে দুই দফা বন্যার প্রভাবে ২০১৭ সালে চালের উৎপাদন অনেকটাই কমে যায়। সে বছর দেশে চাল উৎপাদিত হয় তিন কোটি ২৭ লাখ টন। অর্থাৎ উৎপাদনের হার কমে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ। যদিও উৎপাদনের ঘাটতি মেটাতে সে সময় চাল আমদানিতে শুল্ক তুলে দেয় সরকার। বাড়তি আরও কিছু সুবিধা দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ওই সময় বাংলাদেশে চালের আমদানি বেড়ে যায় ৩৬ গুণ। তবে আমদানির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব চালের বাজারে দেখা যায়নি। এছাড়া গত বছর বিশ্বব্যাপী চালের দাম বাড়তে থাকে। এতে প্রায় এক বছর অস্থির ছিল দেশের চালের বাজার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১০ সালে দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ১৭ লাখ টন। পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় তিন কোটি ৩৮ লাখ টন। এছাড়া ২০১২ সালে চালের উৎপাদন হয় তিন কোটি ৪৪ লাখ টন।
প্রতিবেদনে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের চালের উৎপাদন বৃদ্ধির তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৭০-৭১ সালে দেশে চালের উৎপাদন ছিল এক কোটি ১১ লাখ টন। পরের ১০ বছরে দেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে ২৮ লাখ টন। ১৯৮০-৮১ সালে দেশে চাল উৎপাদিত হয় এক কোটি ৩৯ লাখ টন। একইভাবে পরবর্তী দশকগুলোয় চালের উৎপাদন বেড়েছে যথাক্রমে ৪০ লাখ, ৭২ লাখ ও ৬৬ লাখ টন। এতে ২০১০-১১-তে উৎপাদন দাঁড়ায় তিন কোটি ১৭ লাখ টনে। এদিকে চলতি বছর চাহিদার চেয়ে ২২ লাখ টন বেশি খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে বলে জাতীয় সংসদে জানান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদিত হওয়ায় বর্তমানে দেশে খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে, চালের দাম নিয়ে এখনও সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের উঠানে উঠছে বোরো ধান। আগামী সপ্তাহেই নতুন চাল উঠবে বাজারে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে চালের দাম কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। বরং চলতি বছরের শুরুর দিকে অকারণে চালের দাম বেড়ে যায়। পরে তা খুব একটা কমেনি। এতে করে চালের উৎপাদন বৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Kamal Pasha Jafree ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৬ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ।
Total Reply(0)
Md Ariful Haque ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৭ এএম says : 0
ধানের মণ ৪৫০ শ্রমিকের মজুরি ৫০০ কৃষক বাচঁবেতো
Total Reply(0)
Mamun Ahmed Bepari ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৭ এএম says : 0
বাহিরে বাম্পার ফলন ভেতরে চিটা ভালোই চলছে বিটিভি স্টাইল
Total Reply(0)
Mamun Ahmed Bepari ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৭ এএম says : 0
বাহিরে বাম্পার ফলন ভেতরে চিটা ভালোই চলছে বিটিভি স্টাইল
Total Reply(0)
Olive Shahi ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৭ এএম says : 0
চমৎকার বৈশাখি ধানের মহরা । এবছর আল্লাহ চাহেত ভাল ফলন ও ভালো পরিবেশে ধাম কেটে শুকিয়ে ঘরে উঠান যাবে । এখন থেকে কৃষকের মনে সুন্দর হাসি ফুটছে । সফল হওক কৃষকের শ্রম । আল্লাহ রহমত দিন ।
Total Reply(0)
Rosy Khan ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
ইন্সাল্লাহ্ কৃষকের প্ররিস্রমও সফল হবে ,ধানের গোলাও ভরবে!
Total Reply(0)
Nazrul Islam ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
মাশাল্লাহ দোয়া করি ধান যেন ভাল ভাবে বাড়িতে নিতে পারে।
Total Reply(0)
Ruhul Islam ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
সবই আল্লাহর ইচ্ছা,আল্লাহর রহমত। সব ফসল ভাল ভাবে ঘরে ওঠুক সে কামনাই করি।
Total Reply(0)
Mehboob Sarwar ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৮ এএম says : 0
এখন সবাই দোয়া করেন যেন শিলাবৃষ্ঠি না হয়।তা হলেই কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।
Total Reply(0)
Chowdhury Saiful Alam ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
স্রষ্টার কাছে দুই হাত তুলে প্রাথ'না যাই করে কৃষকের গোলা নতুন ধানের হাসিতে উঠুক ভরে। গেল বছরের শত কষ্ট এবারে যাক মুছে শূণ্য উঠোনে বেদনার ধারা যায় যেন ত্বরা ঘুচে।
Total Reply(0)
Mia Murtuza Hussain ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
কৃষক বাচলে ,দেশ আগাবে । প্রযুক্তি নির্ভর জনশক্তিই পারে কৃষি ও কৃষকের উন্নতি সাধনে যথাযথ ভূমিকা রাখতে । সহজ কথা কিন্তু সরকার কে নিতে হবে, বাস্তবায়নের জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা ও পদক্ষেপ । দরকার কৃষি ও কৃষক দরদী নেতা ও দল।
Total Reply(0)
Olive Shahi ২৮ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
সৃষ্টিকর্তার নিকট একটি মাত্র প্রার্থনা আমাদের ভাটী এলাকায় যেন এবার রহমাত দান করেন ও কৃষকের মুখে যেন হাসি দান করেন ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন