শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ত্রাণ-পুনর্বাসনে পর্যাপ্ত উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে ল-ভ- দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বিশাল জনপদ। গত সপ্তাহে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে আগাম সতর্কতার কারণে লাখ লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে প্রাণে বাঁচলেও এখন তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি হারানো লাখো মানুষ এখনো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে, বেড়িবাঁধের উপর অথবা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ লাখ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি, খাদ্য ও ন্যূনতম নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য হাহাকার করছে। ইতিমধ্যে ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও রোয়ানু উপদ্রুত এলাকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণতৎপরতা নেই বললেই চলে। বিভিন্ন স্থানে উপকূলীয় বেড়িবাঁধগুলো ভেঙে যাওয়ায় নতুন নতুন জনপদ নোনা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে বলে গতকাল প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। এত বড় জাতীয় দুর্যোগে সরকারী ত্রাণ তৎপরতা যেমন খুবই অপ্রতুল, তেমনি এনজিও বা বেসরকারী প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের ত্রাণ তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না। সরকারী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও রোয়ানু দুর্গতদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। লাখ লাখ মানুষকে নিজেদের বাড়ি-ঘরে ফিরে যেতে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে মূলত সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। হাজার হাজার একর জমির ফসলহানি, মৎস্য ও চিংড়ি ঘেরের বিনিয়োগ হারিয়ে দুর্গত মানুষ এখন চোখে শুধু অন্ধকার দেখছে। যথাশীঘ্র পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে সামনের দিনগুলোতে লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ ও অবশ্যম্ভাবী এক মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ কথা সত্য যে রোয়ানু আঘাত হানার আগে ব্যাপক প্রচারণা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে ঝড়ে তাৎক্ষণিক প্রাণহানি আশঙ্কার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। তবে ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, ক্ষেতের ফসল, গাছপালা ও অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আশঙ্কার চেয়েও অনেক বেশী। উপকূলীয় জেলাগুলোতে রোয়ানু আঘাত হেনে চলে যাওয়ার পর থেকে লাখো মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে তা অভাবনীয় ও অকল্পনীয়। আমাদের সরকার দুর্যোগ মোকাবেলায় নিজেদের সাফল্যের কথা গর্বের সাথে প্রচার করে থাকে। দুর্যোগ মোকাবেলায় এ দেশের মানুষের ধৈর্য ও সাহসিকতার কথা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলেও স্বীকৃত হয়েছে। তবে দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতা এবং পুনর্বাসনে অবহেলা ও অপর্যাপ্ত উদ্যোগের কথাও এখন আর গোপন থাকছে না। সাত বছর আগে সংঘটিত সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় জনপদের হাজার হাজার পরিবার এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যাওয়া হাজার হাজার একর আবাদি জমি এখনো পানিবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়নি। ২০০৯ সালের ২৫ মে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ বিস্তীর্ণ জনপদে আঘাত হানার পর থেকে এখনো হাজার হাজার পরিবার তাদের ভিটামাটি ফিরে পায়নি। সরকারের কথিত পুনর্বাসন কর্মসূচি সাতবছরেও দুর্গত মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিতে পারেনি। এখন রোয়ানু’র কবলে পড়া হাজার হাজার দুর্গত পরিবার উপকূলীয় অঞ্চলের লাখো উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন বাজেটের কলেবর বাড়লেও যে কোন দুর্যোগে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।  
আমাদের সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিচ্ছে বলে দাবী করছে। প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান হারে লক্ষকোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট গৃহীত হচ্ছে। যদিও এসব বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার চিত্র ক্রমে প্রকট হয়ে উঠছে। হাজার হাজার কোটি টাকার নতুন নতুন মেগা প্রকল্প গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকারকে সর্বদা উন্নয়ন সক্ষমতার প্রমাণ দিতে সচেষ্ট দেখা গেলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর আর্ত-মানুষের জন্য ন্যূনতম ত্রাণ তৎপরতা এবং পুনর্বাসনে ধারাবাহিক ব্যর্থতার চিত্র জনগণের দুর্ভোগ লাঘব, দারিদ্র্য নিরসন ও ভাগ্যোন্নয়নে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হতে শুরু করেছে। বিশ্বের উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। এ খাতে হাজার হাজার কোটি ডলারের বৈশ্বিক তহবিল গঠন ও বিনিয়োগের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে। এই তহবিল থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্য অংশ আদায়ে কখনো কখনো সরকারের সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট সরব দেখা যাচ্ছে। তবে দেশের লাখো দুর্গত মানুষের জীবন রক্ষা ও সাময়িক পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণে বিদেশি তহবিলের দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধ মেরামত, লবণাক্ততা থেকে হাজার হাজার একর কৃষিজমি রক্ষা এবং লাখ লাখ দুর্গত মানুষের পুনর্বাসন ও স্বাভাবিক জীবন-জীবিকার সংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। অবকাঠামো উন্নয়ন ও কানেক্টিভিটির নামে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও ৫-১০ বছরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হওয়ার জনপদগুলোতে পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন না হওয়া দুঃখজনক। আইলা, সিডর ও রোয়ানুতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ও অবকাঠামো পুনঃনির্মাণে যথাশীঘ্র প্রয়োজনীয় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হোক। তবে এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, পটুয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রোয়ানু উপদ্রুত মানুষের খাদ্য, সুপেয় পানি, ওষুধ-পথ্য ও আশ্রয়সহ পুনর্বাসনের জরুরী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কালক্ষেপণের কোন সুযোগ নেই।  

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন