নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ার আশংকার মধ্যে চলছে বালি আর মাটি নিয়ে কারবার ফলে সরকারের ৪৩ কোটি টাকা পানিতে যাবার উপক্রম হয়েছে। সামনে বর্ষা মৌসুমে নদী বৃষ্টির পানিতে ভরে যাবে। যার সাথে খননকৃত মাটি ও বৃষ্টির পানির সাথে ভরাট হবে। ফলে যে সমস্যা তা থেকেই যাবে। নদীতে ফিরে আসবেনা নাব্যতা। সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৪৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে গত বছরের জুলাই মাসে নবগঙ্গা নদীর ১১ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী জুন মাসের মধ্যে। কিন্তু কাজের যে গতি তাতে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছেনা এমনটাই জানালেন এলাকার মানুষ। এলাকাবাসি জানান, নদী খনন কাজের চেয়ে মাটি ও বালি বিক্রি প্রধান কাজ মনে হচ্ছে। মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডেও নির্বাহী প্রকৌশলী এ বি এম খান মোজাহেদী জানান, এ প্রকল্পের বালি এবং মাটি বিক্রি করার সুযোগ নেই। তার পরও যদি বিক্রি হয় তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সিডিউল মোতাবেক কাজ করার চেয়ে বালি-মাটি বিক্রিতে বেশি যতœবান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানালেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র।
সরজমিনে দেখা যায়, লম্বা স্কেভেটর ব্যবহার না করে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে খনন কাজ চালান হচ্ছে। নদীর পাড়েই রাখা হচ্ছে মাটি যা বৃষ্টি শুরু হলে আবার নদীতে যেয়ে ভরাট হবে। প্রকল্প এলাকায় মাটি বিক্রি করছে প্রতি ট্রাক ৮ হাজার টাকা। সারিসারি দাঁড়িয়ে রয়েছে ট্রাক। মাগুরা এমনকি যশোরের হাসিমপুর প্রকল্পে শতশত ট্রাকে বালি নেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে এখানকার বালি ও মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে নদী খনন শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কৃষি জমিতে সেচ সুবিধাসহ ওই এলাকার জীববৈচিত্র ফিরে আসবে এ আশায় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, অনুমোদন হওয়া প্রকল্পের অর্থায়নে নদীর মাঝ থেকে দুপাশে ৪০ + ৪০ করে ৮০ মিটার খনন, বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় জনসাধারণের গোসলের জন্য ৮টি ঘাট নির্মাণ, পানি নিয়ন্ত্রণে শহরের ঢাকা রোডের নদীর ওপর থাকা পুরাতন রেগুলেটর সংস্কার করা হবে। মাগুরা শহরের নবগঙ্গা ও কুমার নদীর সংযোগস্থল থেকে আলোকদিয়া পর্যন্ত পূন:খনন এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে নদীতে মাছ চাষ বৃদ্ধি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের নিরাপদ জীবনযাত্রা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি নদী তীরবর্তী এলাকাবাসি কৃষি জমিতে সেচ সুবিধাসহ শুষ্ক মৌসুমে নানা কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারবে। ভারতের উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, নদীর বিভিন্ন অংশে অপরিকল্পিত বাঁধ ও সেতু নির্মাণ, পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে শুকিয়ে গিয়েছিল নদীটি। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নৌ যোগাযোগ।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এ বিএম খান মোজাহেদি জানান, নদীর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে’ সম্প্রতি খনন কাজ শুরু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নদীর তলদেশে পলি জমে উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাগুরা জেলার সদর উপজেলাধীন বড়বিলা বিল, কৈবিলা বিল, পুটুলিয়া বিল, রূপদাহ বিল এলাকার জমির পানিবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে নবগঙ্গা নদী পুনঃখনন করা অত্যন্ত জরুরী ছিল। এটি বাস্তবায়িত হলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, বন্যার পানি নিষ্কাশন, ফসল রক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি সফল হওয়ার পাশপাশি প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ১২ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হবে। এতে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। অন্যদিকে গড়াই, ফটকী, চিত্রা, বেগবতী ও কুমার নদী সংস্কারের অভাবে বর্ষা মৌসূমে প্লাবিত হয়ে দুই পাড় ভেসে হাজার-হাজার একর ফসলী জমি ও ঘর-বাড়ি তলিয়ে যায়। ফলে প্রতি বছরই নদী পাড়ের মানুষের পোহাতে হয় চরম র্দূভোগ। আবার শুস্কো মৌসূমে নদী গুলি শুকিয়ে যায়। ফলে নৌযান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন