শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভারতের সাত রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা প্রসঙ্গে

| প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম


ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ভারতের আসামের গৌহাটির ইয়াং ইন্ডিয়ান টিমের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে দু’ দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, এ ধরনের উদ্যোগের ফলে দু’ দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বক্তারা দু’ দেশে পারস্পারিক বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে ব্যাপক সম্ভাবনার কথাও স্বীকার করেছেন। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, উত্তর-পূর্ব ভারতের পশ্চাদপদ সাত রাজ্যের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে উন্নত ও অগ্রসর বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে সাত রাজ্যে পণ্য পরিবহন অত্যন্ত ব্যয় বহুল ও দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অথচ বাংলাদেশ থেকে সাত রাজ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য খুব সহজে ও কম সময়ে পৌঁছাতে পারে। এতে রাজ্যগুলো কম মূল্য ও দ্রুততম সময়ে যেমন পণ্য পেতে পারে, তেমনি বাংলাদেশও তার পণ্যের একটি ভালো বাজার পেয়ে যেতে পারে। এখানে বলে রাখা দরকার, উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চালু আছে। তবে তা যথেষ্ট জোরদার নয়। ভারত তার এই এলাকায় বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে নানা প্রকার বাধার প্রাচীর তুলে রেখেছে। এটা তার বাণিজ্যনীতিরই অংশ, যার লক্ষ্য বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশ যতটা সম্ভব সীমিত রাখা। ভারতের সাত রাজ্যে বাংলাদেশি শাড়ি, তৈরি পোশাক, প্রসাধনী সামগ্রী, পাটজাত পণ্যসহ নানা ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য যেতে পারে না।
যেহেতু সাত রাজ্যে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় ও ব্যবহার্য পণ্য পরিবহন অনেক ব্যয় সাপেক্ষ, যাতে পণ্যের দাম বেশি পড়ে যায় এবং সময় সাপেক্ষও বটে, যাতে পণ্য দ্রুত পৌঁছাতে পারে না, সে ক্ষেত্রে ভারতের উচিৎ ছিল বাংলাদেশের জন্য পণ্য বাণিজ্যের সুযোগ বাড়ানো, যাতে বাংলাদেশের লাভের সাথে তারও লাভ হয়। কিন্তু ভারত এ এলাকায় ভারতীয় পণ্যই পাঠাতে চায় এবং তা কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে রেল, সড়ক ও নৌ করিডোর চায়। ইতোমধ্যে এই সুযোগটি সে অনেকখানি পেয়ে গেছে। বাংলাদেশ সরকার দেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে ভারতীয় স্বার্থে ভারতকে রেল, সড়ক ও নৌ করিডোর দিতে সম্মত হয়েছে। অবকাঠামো দুর্বলতার কারণে এই সব করিডোর পুরোপুরি কার্যকর না হলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য ও মালামাল পরিবহন হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে, যা শেষ হলে ভারতীয় পণ্য সাত রাজ্যে যেতে আর কোনো বাধা বা অসুবিধা থাকবে না। ভারতের সাত রাজ্যে ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে বাংলাদেশের পণ্য বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার যে সম্ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে, তা ভবিষ্যতে হাতছাড়া হয়ে যাবে সরকারের ভুলনীতি ও সিদ্ধান্তের কারণে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ভারতীয় বিভিন্ন প্রকার পণ্যের বাংলাদেশে অবাধ প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বলতে গেলে এমন কোনো পণ্য নেই, যা ভারত বাংলাদেশে রফতানি করে না। এছাড়া চোরাইপথেও অবাধে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। অনেক দিন ধরেই ভারতীয় পণ্যের একচেটিয়া বাজার বাংলাদেশ। বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি করে পণ্য আমদানির তাকিদ বাংলাদেশের তরফ থেকে দেয়া হলেও ভারত তাতে কর্ণপাত করছে না। উপরন্তু একের পর এক শুল্ক-অশুল্ক বাধা দাঁড় করিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি ব্যহত করছে। এই বাস্তবতা সরকারকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারতীয় পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক ধার্য করতে হবে। বাংলাদেশের বুক চিরে প্রায় বিনা শুল্কে ভারতের পণ্য তার একাংশ থেকে অন্য অংশে চলে যাবে, এটা হতে পারে না। এ জন্য উপযুক্ত শুল্ক ধার্য করতে হবে।
ভারতের সাত রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাত রাজ্যের বিনিয়োগকারীরা যেমন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে, তেমনি বাংলাদেশও রাজ্যগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে উভয়েই লাভবান হতে পারে। তবে সাত রাজ্যের বিনিয়োগকারীরা যতই আগ্রহ দেখাক না কেন, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন ছাড়া তারা কোনো বিনিয়োগ করতে পারবে না। আবার বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরা সেখানে বিনিয়োগ করতে চাইলেও কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হবে। উল্লেখ আবশ্যক, ভারতে বাংলাদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ভারতের জন্য বিনিয়োগের এক অবারিত ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এখানে ছোট বড় বহু প্রকল্পে ভারতীয় বিনিয়োগ রয়েছে। ভারতে, বিশেষ করে তার সাত রাজ্যে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবপর করে তুলতে হলে কার্যকর উদ্যোগ-পদক্ষেপ যেমন নিতে হবে, তেমনি এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছার ওপর। এই সদিচ্ছা কেন্দ্রীয় সরকার কতটা দেখাবে, সেটাই প্রশ্ন। কারো অজানা নেই, বাংলাদেশ তার সব কিছুকে ভারতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ভারতের যা কিছু চাওয়ার, অবলীলায় বাংলাদেশ তা দিয়ে দিয়েছে। বিনিময়ে কিছুই পায়নি। বাংলাদেশের অধিকার হলেও তিস্তার পানি পর্যন্ত পায়নি; পাবে বলেও মনে হয় না। নানা উপলক্ষে দু’ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, দু’ দেশের সম্পর্ক সর্বোচ্চ উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। তার প্রমাণ কিন্তু বাস্তবে নেই। এক পক্ষ দিয়েই যাচ্ছে, অন্যপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে আছে। এটা সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওঠা সম্পর্কের প্রমাণ বহন করে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন