ঘরের ভেতর পানি, ঝড়ো হাওয়ায় ঘর বিধ্বস্ত, গাছ উপড়ে পড়াসহ প্রাণহানির ভয়ে মানুষ দুর্যোগের সময় ছুটে যায় আশ্রয় কেন্দ্রে। আবহাওয়ার বিপদ সংকেত শুনে দিশেহারা উপকূলের মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল সাইক্লোন সেল্টার। সেই আশ্রয় কেন্দ্র যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে নদী তীরের মানুষের জীবন রক্ষাই দায়। এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ সাইক্লোন সেল্টার রয়েছে ঝালকাঠির বিষখালী নদী তীরে। সদর উপজেলার পশ্চিম দেউরী গ্রামে বিষখালী নদী ভাঙনে বিলিন হয়ে গেছে পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের একাংশ। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়া পানির তোড়ে গত শুক্রবার সকালে বিদ্যালয়ের একটি পানির ট্যাঙ্কি ও নলকূপ নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বেজমেন্টের নিচের মাটি সরে গিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। যেকোনো মুহূর্তে নদীতে চলে যেতে পারে ভবনটি। আতঙ্কে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষকরা স্কুলে এলেও সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকেন।
জানা যায়, মাত্র চার বছর আগে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম দেউরী গ্রামে বিষখালী নদী তীরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করা হয়। ইমারজেন্সি সাইক্লোন রিকভারি এন্ড রিস্টোরেশন প্রজেক্টের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে এটি নির্মাণ করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ওই সময় ভাঙন কবলিত বিষখালী নদীর মাত্র ১০০ গজের মধ্যে এ ধরনের ভবন নির্মাণে স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও কর্তৃপক্ষ তাতে ভ্রæক্ষেপ করেনি। তখন বলা হয়েছিল, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় ভবনটি ভাঙনের চূড়ান্ত ঝুঁকিতে ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারের পাশ দিয়ে যাওয়া সংযোগ সড়ক বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে স্থানীয় বাজারটিও। সরে গেছে সাইক্লোন সেল্টারের বেজমেন্টের নিচের মাটি। সেখানে ঢুকে পড়েছে পানি। ভবনটি এখন শুধু পাইলিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তিন পাশেই বিষখালীর পানি থৈ-থৈ করছে। ১৩৭ শিক্ষার্থী থাকলেও বিদ্যালয়ে ভয়ে ক্লাসে আসছে না অনেকেই। কমে গেছে উপস্থিতির সংখ্যা। যে কোন সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে বিদ্যালয়টি। শুধু বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটিই নয়, নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাজার, সড়ক, বসতঘর, ফসলি জমিসহ অসংখ্য গাছপালা। ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানার ভয়ে তিনশতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল পশ্চিম দেউরী বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রাতে অনেকেই সেখান থেকে নেমে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দ্রæত ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
দেউরী গ্রামের হাসেম আলী হাওলাদার বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ। অনেক দুর্যোগের সাক্ষি। বিষখালীতে বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি চলে গেছে। আবহাওয়ার সংকেত শুনে আগে আশ্রয় নিতাম নদীর পাশের বিদ্যালয়ে। সরকার আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করে দিলেন। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রটি নির্মাণের স্থান নির্ধারণ সঠিক হয়নি। নদীর পাশে এটি নির্মাণ করায় নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। আশ্রয় নেয়ার স্থানটি যদি হয় ঝুঁকিপূর্ণ, তাহলে আমরা যাবো কোথায়।
নদী তীরের বসিন্দা হাওয়া বেগম বলেন, বসতঘরের পাশের জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করেছিলাম, পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে জমিও নদীতে চলে গেছে। প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি। সরকার আমাদের নদী ভাঙনরোধে পদক্ষেপ নিলে বেঁচে থাকতে পারতাম।
পশ্চিম দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেল্টারটি রক্ষা জন্য বিভিন্ন দপ্তরের কাছে অনেকবার জানিয়েও কোন উপকার পাইনি। এখন এটি নদীগর্ভে বিলিন হলে স্থানীয়রা চরম ভোগান্তিতে পরবে। কর্তৃপক্ষের কাছে এটি রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আমীন বলেন, ভবনটি নির্মাণের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী শাসনের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও সেটি শেষ না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সাইক্লোন সেল্টারটি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন