আইসিডিডিআর,বি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইস ফর অল পিএলসি এবং কানাডার ডায়াগনস আইএনসি-র সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) প্রযুক্তিভিত্তিক ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি সনাক্তকরণের একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি উদ্বোধন করেছে। সোমবার (১৩ মে) অত্যাধুনিক এই পদ্ধতির উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) থেকে ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত আইসিডিডিআর,বি’র ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সর্বসাধারণের জন্য সর্বাধুনিক ফ্লেয়ার প্রযুক্তির সহায়তায় পরিচালিত কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড রেটিনা অ্যানালাইসিস (কারা) নামের এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি উন্মুক্ত হচ্ছে।
‘কারা’ একটি টেলি-অপথালমোলজি প্রযুক্তি যেটি প্রচলিত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমন্বয় করে সেবা দানের স্থানে রোগ নির্ণয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রেটিনার ছবি আপলোড করা, ছবির মান উন্নত করা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি হতে স্ক্রিনিং, এবং বিশেষজ্ঞের দ্বারা রেটিনোপ্যাথির গ্রেডিং। ‘কারা’ প্রযুক্তি নিরাপদভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায় এবং এটি প্রচলিত সব ধরনের ছবির ফরম্যাট ও প্রায় সব ব্র্যান্ডের ফান্ডাস ক্যামেরার সাথে কাজ করতে পারে, একই সঙ্গে এটি প্রচলতি ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড পদ্ধতরি সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। মুল্যসাশ্রয়ী এই পদ্ধতি একাধারে বিপুল সংখ্যক রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য উপযোর্গী। এটি ইতোমধ্যে হেলথ কানাডা, ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ), ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং অন্যান্য মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনপ্রাপ্ত।
ডায়াবেটিস রোগের সবচেয়ে গুরুতর জটিলতাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, যা সঠিক সময়ে সনাক্ত ও চিকিৎসা করা না হলে রোগী স্থায়ীভাবে অন্ধত্বের শিকার হতে পারেন। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) হিসাব মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫৯ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং আরো প্রায় ৩৯ লাখ মানুষের মধ্যে অনির্ণীত ডায়াবেটিস রয়েছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২৭ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১৮ লাখ রোগী কোনো না কোনো পর্যায়ের ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত। আইডিএফ-এর হিসাবে দেখা যায় যে, ২০৪৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে সর্বাধিক ডায়াবেটিস রোগীবিশিষ্ট (১ দশমিক ৩৭ কোটি) দশটি দেশের অন্তর্ভুক্ত হবে।
নতুন এই প্রযুক্তির সুচনায় রোগীরা যেমন দ্রুত, সঠিক ও নিখুঁত ফলাফল পাবেন, তেমনি এটি ক্রমবর্ধমান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীকে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি সনাক্তকরনে সহায়তা প্রদান করবে। নতুন এই উদ্যোগ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আইস ফর অল-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাহেদ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বিদ্যমান স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোর সাথে দেশের চাহিদার অসামঞ্জস্যতার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি দেশের বহুসংখ্যক মানুষের জীবনে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
ডায়াগনস-এর সেলস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইভস-স্টিফেন কোটার বলেন, আইসিডিডিআর,বি’র সাথে নতুন এই উদ্যোগ গ্রহণে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত এবং বাংলাদেশ ও এশিয়ায় অন্ধত্ব প্রতিরোধের লক্ষ্যে আমরা আইস ফর অল-এর সাথে যুগপৎভাবে কাজ করে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
আইসিডিডিআর,বি’র ল্যাবরেটরি সায়েন্সেস অ্যান্ড সাির্ভসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. নিয়াজ আহমেদ রোগের শুরুর দিকেই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি সনাক্তকরণের অপরিসীম গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, আমরা এমন একটি রোমাঞ্চকর সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যে সময়টিতে প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির সনাক্তকরণসহ নানা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করা যাচ্ছে। আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক এই বিশেষ সুবিধাকে যথাসময়ে ও সাশ্রয়ী উপায়ে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নির্ণয়ে কাজে লাগাতে চাই, যাতে আমরা দিনদিন আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে তাদেরকে ক্রমবর্ধমান এই সমস্যা মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারি।
আইসিডিডিআর,বি-র ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি পরীক্ষা করানো যাবে এবং পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন