শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

স্বামীর আগুনে গৃহবধূর স্বপ্ন পুড়ে ছাই

কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে শামসুল হুদা লিটন : | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

স্বাবলম্বী এক নারীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে ছাই করে পালিয়ে গেছে তার পাষন্ড স্বামী। আগুনের লেলিহান শিখায় আত্মপ্রত্যয়ী গৃহবধূ দোকানী হাজেরা ও অন্য এক দোকানের মালামাল পুড়ে ৭ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার ভোরে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া ‘আলহাজ¦ ইউনুছ আলী মাকের্টে’। এব্যাপারে কাপাসিয়া থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের আবুল কাশেমের কন্যা দুই সন্তানের জননী হাজেরা বেগমের গত প্রায় ৪ বছর আগে বিয়ে হয় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার আৎপাড়া গ্রামের কামরুল ইসলামের সাথে। হাজেরা তখন গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতো এবং পাশেই কামরুলের একটি পোশাকের দোকান ছিল। যাতায়াতের সুবাধে তাদের পরিচয় এবং শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত পরিচয়ে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর বেশ সুখেই কাটছিলো তাদের সংসার। ইতিমধ্যে তাদের কোলজুড়ে আসলো এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। কিন্তু সকল সুখের বাধসাধলো কামরুলের গোপন করা প্রথম বিয়ে।
কামরুল গোপনে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে হাজেরাকে বিয়ে করার ফলে প্রায়ই সে উধাও হয়ে যেতো। নানা ছলচাতুরি করে কৌশলে চলছিল তাদের সংসার। শেষ পর্যন্ত স্বামী কামরুলের উদাসিনতা এবং পারিবারিক দ্ব›েদ্বর কারনে হাজেরা তার দুই শিশুকে নিয়ে পিতার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। কিন্ত উদ্যমী ও পরিশ্রমী হাজেরার স্বাবলম্বী হতে তার মনে জেগে উঠে হাজারো স্বপ্ন ও পরিকল্পনা। সেলাই কাজে পারদর্শী হাজেরা দমে না গিয়ে পরিবারের সহযোগিতায় স্থানীয় ফুলবাড়িয়া ইউনুছ আলী মার্কেটে গড়ে তোলে পোশাক কারখানা ও কসমেটিকসের দোকান। অল্প সময়েই প্রত্যন্ত পল্লী গ্রামে হাজেরার গড়ে তোলা ওই ‘মা জননী টেইলার্স অ্যান্ড কসমেটিকস’ দোকান ব্যাপক সাড়া ফেলে। কঠোর পরিশ্রম, ন্যায়-নিষ্ঠা আর সততার সাথে ব্যবসা করে তার শিশুদের নিয়ে সে ভালোই চলছিল।
স্ত্রী হাজেরার সফলতা এবং স্বচ্ছলতায় অত্যন্ত লোভী স্বামী কামরুল ইসলাম সন্তানদের সাথে দেখা করার কথা বলে মাঝে মধ্যে হাজেরার গ্রামের বাড়িতে আসতো। সেই সুবাধে গত মঙ্গলবার রাতে ফুলবাড়িয়ার গ্রামের বাড়িতে কামরুল আসে। কামরুল ভোর রাতে সেহেরী খেয়ে নামাজ পড়ার কথা বলে গোপনে হাজেরার দোকানের চাবি নিয়ে যায়। নামাজের পূর্বে কামরুল ওই দোকান খোলার দৃশ্যটি পাশের মসজিদের ইমাম কাওছার দেখে। ফজরের নামাজ শেষে সবাই দেখতে পায় ওই দোকানে ভয়াবহ আগুন জ¦লছে এবং মুহূর্তের মাঝেই হাজেরার স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পাষন্ড স্বামী কামরুল ততক্ষণে তার মনের সাদ মিটিয়ে পালিয়ে গেছে।
আত্মপ্রত্যয়ী হাজেরার গড়ে তোলা দোকানের কাপড়, সেলাই মেশিন, সূতা ও কসমেটিকস সহ নানা ধরনের পন্য পুড়ে ৫ লাখ টাকা এবং পাশের মোজাম্মেলের ইলেক্ট্রিক সরঞ্জামাদীর দোকানের মালামাল পুড়ে আরো ২ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান। সর্বস্ব হারিয়ে পাগলপ্রায় হাজেরার বিলাপে প্রতিবেশীদের হৃদয় ছুঁয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন