শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের অর্জন কাজে লাগাতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাপানে অনুষ্ঠিত শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭ এর শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগদান ও নির্ধারিত বিষয়ে বক্তব্য প্রদান তার ও দেশের জন্য নিঃসন্দেহে সম্মান ও গৌরবের পরিচায়ক। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আমন্ত্রণে তিনি ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। আউটরিচ বৈঠকে আরো যেসব দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তাদের মধ্যে ছিল ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, শ্রীলঙ্কা, পাপুয়া নিউগিনি ও শাদ। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ছাড়া জি-৭ এর অন্য রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন আঞ্চলিক গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করে। অন্যদিকে বিশ্বঅর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্যের জন্য শুধুমাত্র বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তার এ বক্তব্য থেকে বলা যায়, বাংলাদেশকে আলাদা মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর পররাষ্ট্র সচিবের ভাষায় বলা যায়: এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ তার গ্লোবাল ইমেজ এবং এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্তের একটা স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের দু’টি অধিবেশনে প্রধানত নারীর ক্ষমতায়ন, মানসম্মত অবকাঠামো, জলবায়ু ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এই চারটি বিষয়ে বাংলাদেশের অর্জন ও অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষে জি-৭ এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথাবার্তা, আলোচনা ও বৈঠক করেছেন। বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, এতে সেটা বিশেষভাবে প্রতিভাত হয়েছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয়ে থাকে। এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে বাংলাদেশের আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে তা স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছেন বিশ্ব প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছেন। আমরা জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানমন্ত্রীর এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ ও সেখানে দেয়া বক্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করি এবং তাকে অকুণ্ঠ অভিনন্দন জানাই। উন্নয়নই হোক, আর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বই হোক, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এই অবস্থানের পেছনে রয়েছে তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান। বাংলাদেশ দক্ষিণ-এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার মধ্যবর্তী দেশ। বিশ্বব্যাপী আর্থ-বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের যেসব ছক তৈরি হয়েছে, তার প্রত্যেকটিতে বাংলাদেশ অনিবার্য ও অপরিহার্য দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। বাংলাদেশকে বাদ রেখে এসব ছক কার্যকর ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে আগ্রহী। সঙ্গতকারণেই বাংলাদেশ আর্থ-বাণিজ্যিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের দিক দিয়ে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি দেশ। এই সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টি। জি-৭ এর আউটরিচ বৈঠক বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ শিল্পোন্নত শীর্ষ দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা ও বৈঠক বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক এবং ওইসব দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন ও অগ্রগতির একটা বড় সুযোগ লাভ করা বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব। এই সম্ভাব্যতাকে এড়িয়ে যাওয়া কোনো বিবেচনাতেই ঠিক হবে না।
দুঃখজনক হলেও আমরা লক্ষ্য করে আসছি, জাতীয় স্বার্থে ও প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সম্প্রসারণ ও বিকাশকে যথোচিত গুরুত্ব প্রদান করা হচ্ছে না। সরকার মূলত একমুখী এবং আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে ভারতমুখী নীতি অনুসরণ করে আসছে। ভাবটা এরকম যেনÑ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ ও অটুট থাকলেই চলবে। আর কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তেমন একটা না থাকলেও হবে। আসলে ভারতের সঙ্গে যে সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে তাও কার্যত একতরফা। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে লেনদেনের সমতা থাকা আবশ্যক হলেও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে সেটা নেই। যা কিছু ভারতের চাওয়া, অবলীলায় তা দিয়ে দেয়াকে সরকার তার নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। ফলে ভারত তার কাক্সিক্ষত প্রায় সবকিছু ইতোমধ্যে নিয়ে নিলেও বাংলাদেশের প্রাপ্তির ঘরে রয়েছে শূন্য। আজকের বিশ্বে এ ধরনের সম্পর্কের কোনো নজির নেই। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল কথা হলো, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। এই নীতি এখন অনুসৃত হচ্ছে না। এর ফলে দেশ প্রায় বিচ্ছিন্ন দেশে পরিণত হয়েছে। জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই এই একমুখী পররাষ্ট্রনীতির ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত সব দেশের সঙ্গেই কূটনৈতিক, আর্থ-বাণিজ্যিক ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে যা কিছু অর্জিত হয়েছে, তা নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজে লাগাতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন