মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন খান
॥ এক ॥
বিশ্বের নারীবাদী সংগঠনগুলো আজ নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দেশগুলো নারীদের অধিকার আন্দোলনের বড় সমর্থক। নারী অধিকার এবং নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করা নিঃসন্দেহে প্রশংসার কাজ। কিন্তু এ আন্দোলন যদি নারীকে শ্রেণি হিসেবে পুরুষের সাথে দ্বন্দ্ব সংঘর্ষে নিপতিত করে তাহলে সমাজ-সভ্যতা কোনটার জন্যই কল্যাণকর হতে পারে না। নারী-পুরুষ কখনই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। সমাজ সভ্যতা বিনির্মাণে এরা একে অপরের পরিপূরক। অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়নের সূচনায় নারীকে এগুতে হবে ভালবেসে সহযোগিতা অবলম্বনে এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে। নয়তো সমাজ সভ্যতার ইধংরপ ংঃৎঁপঃঁৎব ভেঙে যেতে বাধ্য হবে। নারী-পুরুষের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে সভ্যতার প্রাচীন প্রাচীর এবং একক ভীত পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি ধসে গেলে সমাজ সভ্যতা হয়ে পড়ে অস্থির, অসহিষ্ণু এবং নিরাপত্তাহীন।
নারী নিঃসন্দেহে পূর্ণাঙ্গ মানুষ কিন্তু কখনই পুরুষ নয়। নারীকে তার প্রকৃতিগত সৃষ্টি বৈশিষ্ট্য পরিহার করতে উদ্বুদ্ধ করা প্রকারান্তরে তার নারীত্বকে বিসর্জন দিতে বলা। মানুষ হিসেবে নারীর যেমন মর্যাদা আছে পুরুষের তেমনি সমান মর্যাদা রয়েছে। ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়ই আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখি নারী সব সময়ই পুরুষের পাশে ছিল। যেমন : আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ), ইব্রাহীম (আঃ) ও সারাহ (আঃ), ইসমাইল (আঃ) ও হাজেরা (আঃ), হযরত ঈসা (আঃ) ও মরিয়ম (আঃ), মুসা (আঃ) ও আছিয়া (আঃ), ইয়াকুব (আঃ) ও রহিমা (আঃ), হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও খাদিজা (রা.), হযরত আলী (রা.) ও হযরত ফাতিমা (রা.), হোসাইন (রা.) ও যয়নব (রা.) এরা সবাই নারী ও পুরুষের অংশীদারীত্বের উদাহরণ। ইসলামে নারী ও পুরুষ হলো একে অপরের পরিপূরক। আল্লাহ নারী ও পুরুষকে পাশাপাশি রেখেছেন জীবনে শান্তি আনার জন্য এবং নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য।
একমাত্র ইসলামই নারীকে বিশেষ অধিকার দিয়ে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করেছে। “মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত।” (আল হাদীস) এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে নারীকে বসিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার আসনে। পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১৯৫নং আয়াতে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, “আমি তোমাদের মধ্যে কারও কাজকে বিনষ্ট করে দিব না, পুরুষ হোক কি স্ত্রী তোমরা সকলেই সমজাতের লোক।” সূরা তাওবার ৭১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ঈমানদার পরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ইসলামী সমাজে নারী নিজেকে গৃহে আবদ্ধ রাখবে না এবং সামাজিক কর্মকা- থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখবে না। এতে আরো বলা হয়েছে, নারীরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সক্রিয় ও কার্যকরভাবে অংশ নেবে। ফলে পুরো সমাজ উপকৃত হবে।
সাধারণত কোন দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক হলো নারী। তার মানে সমাজের বিকাশ ও উন্নয়নে নারী ও পুরুষের সম্মিলিত ভূমিকা থাকা দরকার। এ ছাড়াও কোন একটি দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, মোট জাতীয় উৎপাদন ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে নারী প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন মুসলিম নারী তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেন। একজন যোগ্য নারীকে সমাজ উন্নয়নের কাজে অংশগ্রহণে বাধা দেয়া মানে মূল্যবান মানব সম্পদের অপচয়, যা সমাজের জন্যও বড় ক্ষতির কারণ। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্নে ইসলাম নারীর মর্যাদার বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে। সে কারণে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তার প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমা-তুয-যাহরাকে নারী জাতির আদর্শ মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে নারী জাতির মর্যাদার ডেমনেস্ট্রেশন করেছেন। হযরত ফাতিমা নারী জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আজীবন ভূমিকা রেখে গেছেন। আরবের অন্ধকার যুগে এই মহীয়সী নারী বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে ইসলামে নারীর দেয়া মর্যাদা সমাজে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তিনি বিশ্বের নারী জাতির অনুপম আদর্শ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন