মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন খান
॥ শেষ কিস্তি ॥
হযরত ফাতিমা (রা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল মহানবী (সা.)-এর কন্যা, তিনি ছিলেন শেরে খোদা হযরত আলী (রা.)-এর স্ত্রী, মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠতম শহীদ বেহেশতে যুবকদের সর্দার হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইনের শ্রদ্ধেয়া জননী।
হযরত ফাতিমা (রা.)-এর মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী (সা.) এর হাদীস হতে জানা যায়, মহানবী (সা.) বলেছেন, ফাতিমা আমার দেহের টুকরা। যে তাকে অসন্তুষ্ট করবে, সে আমাকে অসন্তুষ্ট করবে। যে আমাকে অসন্তুষ্ট করবে আল্লাহ তার উপর অসন্তুষ্ট হবে। যে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করবে সে অবিশ্বাসী হয়ে যাবে। আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের সম্মুখে হযরত ফাতিমার ইবাদত-বন্দেগীর প্রশংসা করতেন। তাই মহানবী (সা.) তাঁর সম্পর্কে বলেন, ফাতিমার আপাদমস্তক আল্লাহর নুরের একটি প্রতিকৃতি। হাদীসে (কানযুল উম্মাল) স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে হতে হযরত ফাতিমা সর্বাগ্রে বেহেশতে প্রবেশ করবেন।
মহানবী (সা.) তাবুক যুদ্ধের পর খ্রিস্টানদের সাথে মোবাহেলায় হযরত ফাতিমা, হযরত আলী, হাসান ও হোসাইনকে নিয়ে খ্রিস্টানদের মুখোমুখি হন। খ্রিস্টানরা মোবাহেলা না করে ইসলামী রাষ্ট্রের বশ্যতা স্বীকার করেন। হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) হযরত ফাতিমার প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, ফাতিমা একটি পুষ্প শাখা। এভাবে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.) ফাতিমাকে নারীকুলের জন্য আদর্শ এবং সকল মুসলিম নারীর জন্য অনুসরণীয় বাস্তব দৃষ্টান্ত ও অনুকরণীয় প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরেছেন। নারীকুলের শিরোমণি হযরত ফাতিমা ধরণীর বুকে খুব স্বল্পকাল বেঁচে ছিলেন। তিনি মাত্র ১৮ বছর মতান্তরে ২০ বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তিনি স্বল্পকালীন জীবনের অধিকারী হলেও তাঁর জ্ঞান ও কর্ম নারী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে রেখে গেছেন। যার অনুসরণ যুগে যুগে মুসলিম নারীদেরকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত করতে থাকবে। শৈশবকাল থেকেই হযরত ফাতেমা নারীকুলের ব্যতিক্রমী আদর্শ মডেল হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। শুধুমাত্র জ্ঞান, আমল, তাকওয়া-পরহেজগারী, শালীনতা, লজ্জাশীলতা, পবিত্রতা ইত্যাদির ক্ষেত্রেই তিনি নারীকুলের আদর্শ ছিলেন তা নয়, বরং কন্যা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, মা হিসেবে, সমাজের সদস্য হিসেবে এবং নাগরিক হিসেবেও তিনি ছিলেন নারীকুলের আদর্শ।
হযরত ফাতেমা (রা.) নারীকুলের ভূষণ ও গৌরব। আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম তাঁকে যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন তার মাধ্যমে জাহেলী যুগের অবহেলিতা নারীকুল সকল দিক থেকে পুরুষের সমমর্যাদা লাভের অধিকার অর্জন করেছে। অতঃপর জ্ঞান, যোগ্যতা, চরিত্র, তাকওয়া, পরহেজগারী ও সমাজের জনগণের প্রতি খোদায়ী দায়িত্ব পালনের মধ্যে দিয়ে যে কোন নারীর জন্য আল্লাহতায়ালার নিকটেও প্রকৃত ইসলামী সমাজে যে কোন পুরুষের তুলনায় উচ্চতর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। অতঃপর নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য আল্লাহর পথে পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় অগ্রগণ্যতা ও পশ্চাৎপদতা ছাড়া মর্যাদায় অগ্রগণ্যতা ও পশ্চাৎপদতার আর কোন বৈধ ও ইসলাম স্বীকৃত মানদ- থাকলো না। হযরত ফাতিমা (রা.) ছিলেন নারী জাতিকে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিতকরণে এক বিপ্লবী পথ প্রদর্শক। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা গ্রহণকারী আদর্শ মহান নারী নেত্রী হযরত ফাতিমা (রা.) কে চর্চা করি, তাঁকে অনুসরণ করি। তাহলে আমরা সত্যিকার অর্থে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সফল হবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন