শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

স্বাস্থ্যখাতের সাফল্যের ধারক কমিউনিটি ক্লিনিকে সাড়ে ১৩ হাজার সিএইচসিপির ৪ মাস ধরে বেতন নেই

প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পে কর্মরত প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) বেতন বন্ধ রয়েছে ৪ মাস ধরে। ফলে এসব সিএইচসিপিরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এর আগেও একাধিকবার সঠিক সময়ে সিএইচসিপিদের বেতন না পাওয়া এবং ক্লিনিকগুলোতে ওষুধের সরবরাহও বন্ধ ছিলো। অন্যদিকে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হলেও চাকরি হারানোর শঙ্কায় ভুগছেন সিএইচসিপিরা। অথচ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের অন্যতম নিয়ামক এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ স্বাস্থ্য খাতের সকলেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্যের এই উদাহরণকে তুলে ধরছেন। অথচ এর সাথে জড়িতরা দীঘদিন থেকে বেতন পাচ্ছেন না, দীর্ঘদিন থেকে চাকরির জাতীয়করণের জন্য রাজপথে আন্দোলন করছেন।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এই প্রকল্প কর্মরতদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুন মাসে। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ থাকাকালীন সময়ের মধ্যেই ৪ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। কমিউনিটি ক্লিনিক কর্মীদের বেতন বন্ধ থাকায় এবং প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় এখন তাদের মধ্যে চাকরি হারানোর শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সিএইচসিপিরা তাদের চাকরি রাজস্বখাতে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। দাবি আদায়ের অংশ হিসেবে তারা চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে সেবা কার্যক্রম বন্ধও রেখেছিলেন।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সুমন আহমেদ ও সালমা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। অথচ অনেক ক্লিনিকে এখন ওষুধ সংকট রয়েছে। ঠিকমতো ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না। প্রকল্প চলাকালীন সময়ের সকল ব্যয়ের অর্থ থাকার কথা। অথচ ৪ মাস ধরে আমাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। যাদের এই বেতনের ওপর সংসার চলে তাদের কী অবস্থা সেটা বলে বুঝানো যাবে না। কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে জড়িতরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেন। চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ২০১৩ সালে আন্দোলন শুরু করি আমরা। ওই সময়ে আমাদের চাকরি জাতীয়করণের আশ্বাস দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) লেখা ও সার্ভিস বুক খোলার নির্দেশও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও ৩ বছর চলে যাচ্ছে কোনো কিছুই হলো না। চাকরি স্থায়ী হচ্ছে বিধায় অনেকে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। আবার কারো-কারো সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পেরিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল হোসেন সরকার বলেন, আমরা সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে বেতন পেয়েছি। আমরা গত মাসের ২৭ তারিখ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। কিন্তু এখনো আমরা বেতন পাইনি।
কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের উপদেষ্টা ডা. মাখদুমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পটি এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন হেলথ কর্মসূচির আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি এখন চলমান থাকবে। এখন আর নতুন করে কোনো সমস্যা হবে না। যারা কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত আছেন, তাদের বেতনভাতা যা বকেয়া হয়েছিল তা প্রদানের প্রক্রিয়া চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে। তারা শিগগিরই বেতন পেয়ে যাবেন।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৬ সালে সারাদেশে সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০১ সাল পর্যন্ত সারাদেশে ১০ হাজার ৭২৩টি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর এই প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি চালু করে। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের জন্য ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উন্নয়ন (এইচপিএনএসডিপি) কর্মসূচির আওতায় মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত ২০১৩ সালের হেলথ বুলেটিন অনুযায়ী ২০১০ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে ২ কোটি ৩৬ লাখ, ২০১১ সালে ৩ কোটি ৭২ লাখ, ২০১২ সালে ৭ কোটি ২২ লাখ এবং ২০১৩ সালে ৯ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ সেবা নিয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। ২০১৩ সালে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়ে মানুষের সন্তুষ্টি বাড়ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ৮২ শতাংশ এলাকাবাসী সেবা নেয়। আর দিনের হিসাবে গড়ে সেবা নেয়া মানুষের সংখ্যা ৩৫ জন। ক্লিনিকগুলো বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় এবং সেখানে বিনামূল্যে সাধারণ রোগের ওষুধ পাওয়া যায় বিধায় সেখানে সেবা গ্রহণকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। এছাড়া সরকারের জরিপেও কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে ৮০ থেকে ৯৮ শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট বলে জানানো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন