ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে নরসিংদী নিয়ে নুসরাত জাহান তাইন (১০) ও তানিশা তাইয়্যেবা (৪) নামে দুই কন্যা শিশুকে গলা টিপে, ঘাড় মটকে হত্যা করেছে পাষন্ড পিতা শফিকুল ইসলাম। গত শুক্রবার রাত ৯ টায় নরসিংদী থানা পুলিশ নরসিংদী নদী বন্দর টার্মিনালের শৌচাগার থেকে দুই বোনের লাশ উদ্ধার করেছে। এদের বাড়ি মনোহরদি উপজেলার পূর্ব চালাকচর গ্রামে বলে জানা গেছে।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা গেছে, শিবপুর থানা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে পিতা শফিকুল ইসলাম তার দুই কন্যা তাইন ও তানিশাকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। পরে সেখান থেকে তাদেরকে নিয়ে চলে যায় সদর উপজেলার পাঁচদোনা এলাকায়। পরে লঞ্চ দেখানোর কথা বলে বলে রাতে তাদেরকে নিয়ে যায় নদী বন্দর টার্মিনাল। সেখানে প্রথমে তানিশাকে নিয়ে শৌচাগারে ঢুকে গলা টিপে হত্যা করে ঘাড় মটকে ফেলে রেখে আসে। পাষন্ড পিতা শফিকুল সেখানে বড় মেয়ে তাইনকেও একই কায়দায় হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে চলে যায়। রাত ৯ টায় লোকমুখে খবর পেয়ে নরসিংদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুই বোনের লাশ উদ্ধার করে। তখনো দু’বোন ছিল অজ্ঞাতনামা।
এই ঘটনা লোকমুখে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হত্যাকারী পিতা শফিকুল ইসলাম পুলিশকে ফোন করে। পুলিশ তাকে আসতে বললে সে নরসিংদী সদর থানায় চলে আসে এবং লাশ দুটিকে তার দুই কন্যা বলে শনাক্ত করে। এ সময় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শফিকুলের বক্তব্য অসঙ্গতি পাওয়া গেলে পুলিশ তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পিতা শফিকুল স্বীকার করে যে সে নিজেই তার কন্যা দুজনকে হত্যা করেছে। কী কারণে দুই কন্যাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করেছে মনে পুলিশের প্রশ্নের জবাবে শফিকুল জানান সে খুবই গরীব। মেয়েদের ভরণপোষণ তাদের চাহিদা পূরণ তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের লেখাপড়ার খরচ, পরনের কাপড় এবং এবং সামনের ঈদে নতুন জামা কাপড়ের চাহিদা মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়ায় তার মাথা বিগড়ে যায়। এই অবস্থায় সে তার মেয়েদেরকে হত্যা করতে বাধ্য হয়। গতকাল হোসেনের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন সাংবাদিকদেরকে এসব তথ্য পরিবেশন করেন। এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তানিশাকে হত্যা করার ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে। তাদেরকে সাধারণভাবে গলাটিপে হত্যা করা হয়নি। গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য দুই বোনের ঘাড় মটকে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে দুই বোনের লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন