শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

চোখের সামনে দুই ভাতিজা ও ভাগ্নে ডুবে মরলেও কিছুই করতে পারিনি

তিউনিশিয়া থেকে বেঁচে ফেরা বেলালের মুখে রোমহর্ষক বর্ণনা

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৯, ৪:৪৮ পিএম

চোখের সামনে দুই ভাতিজা আবদুল আজিজ ও লিটন শিকদার এবং ভাগ্নে আহমেদ হোসেনকে পানিতে ডুবে মরতে দেখেও কিছুই করতে পারেননি সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জের বেলাল আহমদ। তিউনিসিয়া উপকূল থেকে গত ১০ মে উদ্ধার হওয়া ১৫ বাংলাদেশির একজন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের কটালপুর গ্রামের এই বেলাল। 

ছয়-সাত মাসের ইউরোপযাত্রার চেষ্টার শেষ পর্বের রোমহর্ষক বর্ণনায় বেলাল জানান, ‘পাচারকারীরা আমাদের নৌকা ডুবে যেতে দেখেছে। আমরা সাহায্য চেয়ে চিৎকার করেছি। কিন্তু তারা আমাদের উদ্ধার করেনি। চাইলেই তারা আমাদের বাঁচাতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে পালিয়ে যায়। তারা যখন আমাদের ওভাবে ফেলে মাছ ধরার জাহাজ নিয়ে দ্রুত পালাচ্ছে, ঠিক তখনই একের পর এক আমাদের সাথের মানুষগুলো ডুবে যাচ্ছিল, বলেন বেলাল। এই ডুবে যাওয়াদের মধ্যে তার দুই ভাতিজা ও ভাগ্নে রয়েছেন।’
বেলাল জানান, ‘৯ মে ভোর রাত তিনটার দিকে লিবিয়ানরা এসে অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে আমাদের মারধর শুরু করে। তারপর প্রায় তিন মাইল বন-জঙ্গলের মধ্য দিয়ে আমাদের হাঁটতে বাধ্য করা হয়। এরপর নেওয়া হয় সাগরের পাড়ে। সাগরের কাছে নিয়ে আমাদের তিনটা ছোট ছোট নৌকায় তোলা হয়। সেগুলো ঘণ্টাখানেক চালিয়ে মাঝ সাগরে নিয়ে একটি মাছ ধরার বড় জাহাজে তোলা হয়। কথা ছিল বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে সরাসরি বিমানযোগে ইতালি নেওয়া হবে। এই শর্তে টাকা দেওয়া হয়েছিল মানবপাচারকারীদের, আর স্বপ্নের সেই ইউরোপ যাত্রা শুরু হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে।’
‘গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে রওনা হওয়ার আগে ইয়াহিয়া ওভারসিজের মালিক এনামুল হক বলেছিলেন, ভারত থেকে বিমানযোগে সরাসরি ইতালি নেওয়া হবে। কিন্তু বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে প্রায় ৭-৮ মাস পর আমাদের ইতালির কাছাকাছি নেওয়া হয়।’
বেলাল জানান, ‘বর্তমানে তিউনিসিয়ায় বাকি যে ১১ জন বাংলাদেশি রয়েছেন, তারাও দেশে ফিরে আসতে চান। কিন্তু তাদের শরীর এখনও দীর্ঘ ভ্রমণের উপযোগী হয়নি বলে মনে করছেন সেখানকার চিকিৎসকেরা। আমি চাই ভবিষ্যতে আর যাতে কেউ দালালদের প্রলোভনে এভাবে মৃত্যুর ফাঁদে পা না দেয়।’
হয়রানি ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, ‘ত্রিপোলিতে টাকা নেওয়ার পরও প্রায় দুই মাস বন্দী রাখা হয়েছিল। এরপর তাঁদের জোয়ারা নিয়ে যাওয়া হয়। জোয়ারায় আরও তিন মানবপাচারকারীর আনা লোকজন একত্রিত করা হয়েছিল। এরপর সবাইকে লিবিয়ানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।’
তাঁর তথ্য অনুযায়ী, ইতালি যাত্রার উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া মানুষদের মধ্যে ৮২ জন বাংলাদেশি, ৫০ জন সৌদি, ১০ জন মিশরীয় এবং দুই জন আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষ ছিলেন।
দেশে ফেরা হতভাগা এই যুবক বলেন, ‘আমাদের কলকাতা, দিল্লী ও মুম্বাই ঘুরিয়ে প্রথমে শ্রীলঙ্কা নেওয়া হয়। সেখান থেকে কাতার হয়ে তিউনিসিয়া। এরপর লিবিয়ার মিসরাতার একটি ঘরে বন্দী করে মাথাপিছু পাঁচ লাখ টাকা করে আদায় করা হয় স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা। ত্রিপোলিতে নিয়ে আদায় করা হয় মাথাপিছু আরো তিন লাখ টাকা।’
গত শুক্রবার সকালে দেশে ফিরেন বেলাল। ভূমধ্যসাগরের উপকূল থেকে আরও ২৯০ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধারের কথা জানিয়েছে লিবিয়া কর্তৃপক্ষ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন