যানজট রাজধানীর একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ঈদ সামনে রেখে রোজার মাসে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজধানীর যানজট অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছানোর অন্যতম প্রধান কারণ ফুটপাথ দখল এবং যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের ঘটনা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফুটপাথ-রাস্তা দখলমুক্ত করার জন্য বার বার অভিযান চালালেও চাঁদাবাজরা তা ব্যর্থ করে দিচ্ছে। তারা হকারদের উসকে দিচ্ছে নিজেদের স্বার্থে। রাস্তা বা ফুটপাথ দখল করে দোকানপাট বসানো অবৈধ। এ অবৈধ কর্মকান্ডে যারা লিপ্ত তাদের প্রতি সিটি করপোরেশনের কোনো দায় থাকার প্রশ্ন অবান্তর।
হকারদের রাজধানীর নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে কিন্তু কোনো অবস্থায় রাস্তা বা ফুটপাথ অবরুদ্ধ করার সুযোগ দেওয়া যায় না। ঢাকার যানজট এখন সংশ্লিষ্ট সবারই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীতে ছোট গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। অ্যাপভিত্তিক সেবার সঙ্গে বেড়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। মেট্রো রেলের কাজ চলায় রাজধানীর অনেক প্রধান সড়কই সংকুচিত হয়ে গেছে। অন্যদিকে সড়কের যানজট নিরসনসহ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১৪ বছর আগে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা সুপারিশগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে ঢাকার রাস্তার কোনো উন্নতি হয়নি। যানজটের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ বলছে, ঢাকায় এখন ২৫ মিনিটের দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে ৬৩ মিনিট। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক ট্রাফিক ইনডেক্স অনুযায়ী বিশ্বের ২০৭টি শহরের মধ্যে যানজটে শীর্ষে আছে ঢাকা। সরকারি হিসাবে যানজট নিরসনে গত ১০ বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পে ব্যয় না করে এই টাকায় কম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু করতে পারলে যানজট নিরসনে অনেক বেশি সুফল মিলত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকার যানজট কমাতে ও যাত্রীসেবার মান বাড়াতে রুট ধরে ধরে কম্পানিভিত্তিক বাস চালুর কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে বিআরটিসির বাস আরো বেশি পরিমাণে ঢাকার রাস্তায়, ক্রমান্বয়ে সব রুটে চালু করার বিষয়টি ভাবতে হবে। তাতে হয়তো বেসরকারি বাস মালিকদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমবে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা অবশ্যই আধুনিক করতে হবে। রাস্তায় পার্কিং বন্ধ করাসহ নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামা ও যাত্রী ওঠানো-নামানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে ঢাকার যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থা যাত্রীবান্ধব করতে না পারলে অচিরেই মহানগরী যন্ত্রণার নগরীতে পরিণত হবে। বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থা নতুন করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করতে হবে। অন্যথায় যানজট থেকে কোনোভাবেই রেহাই মিলবে না। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ভাববে।
লেখক: সহ সভাপতি, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন