উপকূলীয় এলাকার জানমাল, বন্দর-শিল্পাঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষার্থে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলেও কার্যত তা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, সমুদ্র উপকূলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও জোড়াতালি সংস্কার-মেরামতের নামে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে সীমাহীন দুর্নীতি। সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের শুধুই হরিলুট হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণীর অসৎ প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদার মিলে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ লুটেরাচক্র। ওরাই রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে। বাস্তবে দেশের উপকূলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ আজো হয়নি। অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর স্যুয়ারেজের অবস্থাও নাজুক। এক পশলা বৃষ্টি হলেই সড়কগুলো পানিতে থইথই করে। গত শনিবার দুপুরে কিছুক্ষণের বৃষ্টিতেই শহরের প্রধান সড়কগুলোসহ পাড়া-মহল্লার অলিগলির রাস্তাঘাট পানি ও কাদায় একাকার হয়ে যায়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যাবার কারণে অনেক স্থানে গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
উপকূলীয় বেড়িবাঁধ এবং নগরীর পানিবদ্ধতার সমস্যা কোনটিই নতুন কিছু নয়। বলা যায়, যুগ যুগ ধরেই এসব সমস্যা নিয়ে কথা-বার্তা হচ্ছে। বাস্তবে এর কোনো সমাধান হচ্ছে না। রাজধানীর কিছু এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই কোমর সমান পানি জমে যায়। কেন এ অবস্থা হয়ে আসছে তা সংশ্লিষ্টদের অজানা থাকার কথা নয়। তা সত্ত্বেও সমস্যার সমাধানের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এটা সকলেই দেখছেন যে, রাজধানীজুড়ে উন্নয়নের নামে সড়কগুলোতে নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর স্তূপ জমে আছে। ইদানিং ফ্লাইওভার নির্মাণের নামে এ অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। পানিবদ্ধতা এবং যানজটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নগরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে মেয়র প্রার্থীদের কণ্ঠে রাজধানীর যানজট ও আবদ্ধ পানির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস থাকলেও বাস্তবে এ সমস্যার বিন্দুমাত্র সমাধানও হয়নি। সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়েছে। একথা মানতেই হবে রাজধানীর সড়কগুলো চলাচলে অনুপযোগী, তার উপর বৃষ্টি হলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাজধানীতে এ বাস্তবতা কোন বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অন্যদিকে দেশের ২১টি উপকূলীয় জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য বেড়িবাঁধ অপরিহার্য। বাস্তবতা হচ্ছে, ঠিকমত কোথাও বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামত না হওয়ায় সেই জোড়াতালির বেড়িবাঁধ উপকূলবাসীর জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে উপকূলবাসীর জীবন-জীবিকা এখন হুমকির সম্মুখীন। তাদের কৃষি-খামার, ফসলি জমি, লবণের মাঠ, চিংড়িসহ মাছের ঘের, পুকুর, সবজি ক্ষেতসহ গ্রামীণ অর্থনীতি এমনকি বসতভিটা সবকিছুই দুর্যোগের মুখে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও রেড ক্রিসেন্ট ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক এ জেড এম গোলাম রব্বানী এ প্রসঙ্গে দৈনিক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকার কারণেই দুর্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৪শ’ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত দেড় দশকে কমপক্ষে ৭৫০ কোটি টাকা খরচ করলেও উপকূলভাগে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি।
মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা এবং উন্নয়নের জন্যই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। বাস্তবে রাজধানী বা উপকূলীয় অঞ্চলে কোথাও তা জনগণের প্রকৃত জীবনযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস এসব আমাদের দেশে নিয়মিত দুর্যোগ। বাঁধ যদি এসব মোকাবিলা করতেই না পারে তাহলে বাঁধের পিছনে অর্থ ব্যয়ের যৌক্তিকতা কি? দুনিয়া এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সমুদ্রের নীচে শহর রক্ষা করা যায়, তবে উপকূলীয় বাঁধ রক্ষা করা যাবে না কেন? বাস্তবত অনিয়ম-দুর্নীতি সবকিছু গিলে খাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা গেলে রাজধানীকে সামান্য বৃষ্টির পানিবদ্ধতা থেকে রক্ষা করা যায় না এটা কোন বিশ্বাসযোগ্য কথা নয়। কার্যত এখানে আন্তরিকতা এবং সততার প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের কথা হচ্ছে, বিদ্যমান যে বাঁধ, সড়ক রয়েছে সেগুলোর আরও অবনতি হতে না দিয়ে উন্নয়ন করতে হবে। একদিকে ভেঙে যাবে, আরেকদিকে উন্নয়ন কাজ চলবেÑ এভাবে উন্নয়ন কাজ চলতে পারে না। এতে কেবল উন্নয়নের নামে অর্থের অপচয়ই হবে, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন