শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

মেঘনায় উচ্ছেদ অভিযানের শেষ দিন

৩০টি অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিওটিএ, রহস্যজনক কারনে বেচেঁ গেছে মেঘনা গ্রুপ

মোক্তার হোসেন মোল্লা, সোনারগাঁও থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

৬ দিনব্যাপী অভিযানের শেষ দিনে মেঘনা নদী উদ্ধারে মেঘনায় অভিযান চালিয়েছে বিআইডব্লিওটিএ। তবে, মেঘনা নদী দখলের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিলো মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে, কিন্তু রহস্যজনক কারনে মেঘনা গ্রুপের নদী দখলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেনি বিআইডব্লিওটিএ। মেঘনা গ্রুপের নদী দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদে না গিয়ে বিআইডব্লিওটিএ নিজেদের অনেকটাই বিতর্কিত করেছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী মনে করে। অভিযানের শেষ দিনে গজারিয়া উপজেলার নদী তীরবর্তী শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভরাটকৃত বালু নিলামে বিক্রির সাথে সাথে উদ্ধার করেছে প্রভাবশালীদের দখলে রাখা নদী তীরবর্তী জমি। নদীর জায়গা উদ্ধার করতে গিয়ে বড় বড় স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযানে মেঘনা গ্রুপ ছাড়া কোন প্রভাবশালীরা বিভিন্ন কৌশলে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেও সফল হতে পারে নি। মেঘনা নদী দখলমুক্ত করার অভিযানে স্থানীয় বাসিন্দারা বেজায় খুশি। তাদের দাবি, নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেয়া হোক এবং নদীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে দূষন মুক্ত করা হোক। এছাড়াও, পুনরায় যাতে নদী দখল না হয় বিআইডব্লিওটিএ কে এদিকে দৃষ্টি দেয়ারও দাবি জানায় এলাকাবাসি।
গত ১৯ মে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ‘দখল’ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বিআইডব্লিওটিএ। কোথাও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে আবার কোথাও দখলকারীদের দু’একদিনের মধ্যে নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। দেশের প্রভাবশালী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের জমির পাশের মেঘনা নদী, নদীর তীরবর্তী খাস ভূমি, সরকারি খাল এবং ফোরশোর ল্যান্ডভুক্ত ভূমিতে বালু ভরাট করে প্রাচীর দিয়ে দখল করায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। দৈনিক ইনকিলাবে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নদী দখলমুক্ত করার অভিযানে স্থানীয় মানুষ বেজায় খুশি।
বিআইডব্লিওটিএ জানায়, মেঘনার পাড় দখলমুক্ত করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। মেঘনা নদী দখল করে বিভিন্ন কোম্পানি বহুতল ভবন নির্মাণসহ বালু দিয়ে ভরাট করে রাখে। এ নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত সোমবার থেকে মেঘনা নদী দখল মুক্ত করার অভিযান শুরু করে ছয়দিন অভিযান চলবে বলে জানায় বিআইডব্লিওটিএ। গত বৃহস্পতিবার অভিযান পরিচালনা করে চার দিন বিরতির পর গত মঙ্গলবার আবারও অভিযান পরিচালনা করে বিআইডব্লিওটিএ। গতকাল বুধবার ৬দিনের শেষ দিনে মেঘনার তীরে কনকর্ড, মোনায়েম গ্রুপের ভরাটকৃত অংশ ২৩ লাখ টাকায় নিলামে বিক্রি করে এবং ৩০ টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিআইডব্লিওটিএ।
জানা গেছে, মেঘনা নদীর পূর্ব তীরে গজারিয়া উপজেলার তেতুইতলা ও রায়পাড়া এলাকায় কনকর্ড গ্রুপ, মোনায়েম গ্রুপ, প্রভিটা গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ভরাট ও দখলকৃত নদীর জমি উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসময় অন্তত ৩০ টি অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়। জব্দকৃত বালু ও পাথর এবং ভরাটকৃত অংশ সর্বমোট ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করে দিয়েছে সংস্থাটির ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে প্রভিটা গ্রুপের প্রায় এক কিলোমিটার ভরাটকৃত অংশের নিলামে অংশ নিতে আসলে স্থানীয় ইউপি মেম্বার বিল্লাল হোসেনের উপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে তার পূর্ব বিরোধ ছিল।

৬ দিনব্যাপী অভিযানের শেষদিনে গতকাল বুধবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব ও
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী, উপ পরিচালক মোঃ শহীদুল্লাাহ, সহকারী পরিচালক এহতেশামুল পারভেজ।
উচ্ছেদ অভিযানে দুটি ভেকু, দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ, একটি টাগবোট, বিপুল সংখ্যক উচ্ছেদ কর্মী, পুলিশ ও আনসার সদস্য, বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী বলেন, মেঘনা নদীর দুই তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ৬ দিনব্যাপী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। অভিযানে নদী দখল ও ভরাটের অভিযোগে খান ব্রাদার্স ডকইয়ার্ড, বসুন্ধরা গ্রুপ, আমান ইকোনোমিক জোন, ইউনিক গ্রুপ, অরিয়ন গ্রুপ, আল মোস্তফা গ্রুপের পলিমার ইন্ড্রাষ্ট্রিজসহ বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। জব্দকৃত বালু ও পাথর দেড় কোটি টাকার বেশী নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া দুটি ৪ তলা ভবন, ২টি দোতলা ভবনসহ গত ৬ দিনে দুইশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নদী বাঁচালে দেশ বাঁচবে। কিন্তু শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নদী দখল করছে যা কাম্য নয়। মেঘনার তীরে মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আমান গ্রুপ, আল মোস্তফা গ্রুপ, হোলসিম সিমেন্ট, মদিনা সিমেন্টসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নদী ব্যপকভাবে দখলের প্রমাণ পেয়েছে নদী রক্ষা কমিশন। এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিয়া জানান, ঈদের পরে নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে আরো জোরদার অভিযান পরিচালিত হবে। নদী দখলকারীরা যত প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের ছাড় বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন