শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রমজানের ঈদকে সামনে রেখে ভেজাল রং ও চিনি মিশ্রিত গুড়ে সয়লাব নরসিংদীর বাজার

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে: | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ভেজাল গুড়ে সয়লাব হয়ে গেছে নরসিংদী বাজার। প্রতিটি গুড়ের আড়ত এবং খুচরা দোকানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে লাল টেক্সটাইল রং দিয়ে তৈরি চকচকে চেহারার ভেজাল গুড় । এসব ভেজাল গুড় খেয়ে মানুষ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হোয়াইট পয়জন বা সাদা বিষ হিসেবে চিহ্নিত চিনির বদলে মানুষের ভরসা ছিল একমাত্র গুড় মিষ্টির উৎস গুড় খাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন অসাধু ব্যবসায়ীরা নরসিংদী বাজারে খোলামেলাভাবে এসব ভেজাল গুড় বিক্রি করলেও স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।

জানা গেছে, সুদূর প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আখের রসের গুড়ই ছিল বাঙালির মিষ্টির উৎস। গুড় দিয়ে তৈরি হতো বিভিন্ন রকমের মিষ্টি। রসগোল্লা, লালমোহন, বাদশাভোগ, রাজভোগ, অমৃতি, জিলিপি, দুধের বরফি, কাঁচাগোল্লা ইত্যাদি থেকে শুরু করে সব মিষ্টিজাত খাদ্যই গুড় দিয়ে তৈরি হতো। আখের গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি বাঙালি সমাজের সবচেয়ে সমাদৃত ছিল। বাঙালিরা হাজার বছর ধরে গুড় দিয়ে চিড়া মুড়ি খেয়েছে।, গুড় দিয়ে দুধ ভাত খেয়েছে। গুড় খাওয়ার কারণে কারো স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গ্রাম গঞ্জে এমন অনেক রেকর্ড রয়েছে যে, দুধ গুড় দিয়ে নিয়মিত ভাত খেয়ে শত বছরেরও অধিক সময় সুস্থ্য জীবন অতিবাহিত করেছে প্রবীন মানুষেরা। গুড় খাওয়ার পরও তখনকার মানুষেরা বেশিরভাগই শতায়ু ছিল। বিগত ১৮ শতকে শিল্প বিপ্লবের পর বিট এবং আখের রস দিয়ে চিনি তৈরি শুরু হয়। সেই থেকে বাঙালি সমাজে মিষ্টি তৈরির প্রধান উৎস হয় চিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, চিনি হচ্ছে হোয়াইট পয়জন। চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ হৃদরোগসহ বিভিন্ন মরন রোগের শিকার হয়। এ অবস্থায় মানুষ আবার ফিরে যেতে থাকে গুড়ের দিকে। সেই গুড়ও এখন ভেজালের শিকার। দেশে এখন নিরাপদ মিষ্টি খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। আখ চাষ এবং গুড় তৈরীর জন্য নরসিংদী ছিল বিখ্যাত। প্রতিবছর নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে আখের চাষ হতো।

নরসিংদীর আখ চাষের উপর ভিত্তি করে পলাশে গড়ে উঠেছিল দেশবন্ধু সুগার মিল নামে একটি বিখ্যাত চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। আখ মাড়াই মৌসুমে একদিকে দেশবন্ধু সুগার মিলের চিনি তৈরি হতো, আরেকদিকে গ্রামে গ্রামে বসতো গুড় তৈরীর' 'আড়'। আড়গুলোতে তৈরি বিশুদ্ধ গুড় নরসিংদী চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হতো। স্বাধীনতা-উত্তরকালে ভারতীয় চিনির অবাধ অনুপ্রবেশে দেশের চিনি শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। বাজার সয়লাব হয়ে যায় ভারতীয় চিনিতে। এই অবস্থায় দেশীয় চিনির বাজারে ব্যাপক দরপতন ঘটলে দেশের চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান গুনতে গুনতে বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে কমে যায় নরসিংদীর আখ চাষ। আখ চাষ কমে যাওয়ার কারণে চিনি এবং গুড় শিল্প দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক পর্যায়ে বাজারে দেশীয় চিনির সংকট দেখা দেয়ায় বিদেশ থেকে চিনি আমদানি করা হয়। এরই পাশাপাশি বেড়ে যায় গুড়ের দামও। দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের চিনি ও গুড়ের বাজারের উত্থান-পতনের পর বর্তমান বাজারে গুড়ের দাম দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে১২০ টাকা কেজি। পক্ষান্তরে বাজারে ১ কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আখের অভাবে বাজারে গুড় সংকট দেখা দেয়ার সুযোগ নিয়েছে অসাধু গুড় ব্যবসায়ীরা। তারা চকচকে লাল টেক্সটাইল রং বিভিন্ন কেমিক্যাল পানিতে গুলে সেই পানিতে চিনির মিশ্রন ঘটিয়ে তৈরি করছে ভেজাল গুড়। নরসিংদীর বাজারে বর্তমানে যা গুড় পাওয়া যায় তার প্রায় ৯৯ ভাগই টেক্সটাইল রং, কেমিক্যাল ও চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড়। ৫ কেজি চিনির সাথে টেক্সটাইল রং , অন্যান্য কেমিক্যাল ও পানি মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ১০ কেজি ভেজাল গুড়। আর এসব গুড়ই এখন প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চিনি মিশ্রিত ভেজাল গুড় তারা তৈরি করেনা। গুড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী বা গুড়ের আড়তের মালিকরা সরবরাহ করছে এসব ভেজাল গুড়। তারা শুধু আড়ত থেকে এনে খুচরা বিক্রি করছে। তবে তারা স্বীকার করছে যে তাদের তাদের আমদানি করা এসব গুড়ে অর্ধেক চিনি অর্ধেক গুড়। শতভাগ বিশুদ্ধ গুড় এখন বাজারে একেবারেই নেই।সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এসব ভেজাল গুড় বিক্রি কোনক্রমেই বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।#সরকার আদম আলী ,নরসিংদী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন