স্টাফ রিপোর্টার : ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টই সত্যি হলো। রাজধানীর জুরাইনে উচ্ছেদকৃত জায়গায় নতুন করে দোকান বসানোর জন্য চাঁদা তুলছে একটি চক্র। চাঁদার টাকা নিয়ে দুই গ্রæপ এখন মুখোমুখি। যে কোনো মুহূর্তে সংঘর্ষের আশংকাও করছেন কেউ কেউ। সাধারণ হকাররা এ নিয়ে আতঙ্কিত। কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, উচ্ছেদকৃত জায়গা কাউকে নতুন করে ইজারা দিতে দেয়া হবে না। এ নিয়ে সংঘাত ঘটা বা আতঙ্কের কোনো কারণ নেই।
রাজধানীর জুরাইন সেতু ও আলম মার্কেটের সামনে সড়ক ও জনপদের জমির উপর স্থাপিত হকার্স মার্কেট উচ্ছেদ নিয়ে প্রায় এক মাস যাবত ইঁদুর বিড়াল খেলা চলছিল। একটি পক্ষ পদ্মা সেতু প্রকল্পের দোহাই দিয়ে পাঁচ শতাধিক দোকান উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে ওঠে। স্থানীয় এমপির সমর্থক এই গ্রæপের নেতৃত্বে রয়েছেন খায়রুল বাশার ও মোশাররফ। স্থানীয় হকাররা জানান, মুখে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের পক্ষ নিলেও ভেতরে ভেতরে তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। দোকানগুলো উচ্ছেদ করে ফের নতুন করে অগ্রিম টাকা নিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করাই ছিল ওই চক্রের উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর হকারদের অনেকেরই ভুল ভাঙে। এর মধ্যে এমপি সানজিদার হস্তক্ষেপে উচ্ছেদ কার্যক্রম আপাতত: স্থগিত হয়ে যায়। দু’সপ্তাহের মাথায় ইনকিলাবের সেই প্রতিবেদনই সত্যি হলো। হকারদের অভিযোগ, আলম মার্কেটের সামনে এবং শ্যামপুর থানা রোডে উচ্ছেদকৃত দোকানগুলো ফের বসানোর নাম করে খায়রুল ও মোশাররফ গ্রæপ দোকানপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলছে। শনিবার রাতেও স্থানীয় হকার বিউটির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হকার বলেন, আলম মার্কেটের সামনে সড়ক ও জনপথের জায়গায় নতুন করে দোকান বসানোর জন্য খায়রুল ৪ থেকে ৫ হাজার করে টাকা নিচ্ছে। টাকা নেয়ার কারণ হিসাবে খায়রুল আমাদেরকে বলেছে, পুলিশকে ম্যানেজ করার জন্য এই টাকা দিতে হবে। আরেক হকার বলেন, কয়েকদিন আগেও খায়রুল এই জায়গার দোকানগুলো উচ্ছেদ করার জন্য দলেবলে এখানে মহড়া দিয়েছে। রাস্তার উন্নয়নের জন্য অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করতে হবে-এমন আরও কতো কথা বোঝানোর চেষ্টা ছিল তাদের। এজন্য কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে খায়রুল কয়েকজন হকারকে মারপিটও করেছে। এখন সেই খায়রুলই আবার দোকান বসায় কী করে? মজিদ নামে একজন হকার বলেন, আসলে সরকারের উন্নয়নের দোহাই দিয়ে কোটি টাকা লুট করাই ছিল ওদের আসল উদ্দেশ্য। সেটা এখন আমরা বুঝতে পেরেছি। হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খায়রুল ও মোশাররফরা নতুন করে দোকান বসানোর নাম করে ইতোমধ্যে শতাধিক দোকান থেকে চার লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরই মধ্যে আলম মার্কেটের সামনের উচ্ছেদকৃত অংশে দোকানপ্রতি চার হাজার টাকা, বিপরীতে লোহার দোকানপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা এবং সেতু মার্কেটের সামনে দোকানপ্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে খায়রুল ও মোশাররফ। পুলিশকে দিতে হবে একথা বলেই এই টাকা নিয়েছে তারা। যদিও খায়রুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জানতে চাইলে গতকাল তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমি কোনো টাকা নেই নি। তবে টাকার জন্য হকারদেরকে বলেছিলাম। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, আগে যারা হকার্স মার্কেট পরিচালনা করেছে তারা বাথরুমসহ বিভিন্ন খাতে বেশ কিছু টাকা বকেয়া রেখে গেছে। সেই টাকাগুলো পরিশোধের উদ্যোগ নিতে গিয়ে কিছু টাকা চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, দোকান বসানোর কথা বলে কারো কাছে কোনো টাকা নিয়েছি এর প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, জুরাইনের হকার্স মার্কেটের জায়গাটি ঈদের আগে উচ্ছেদ না করার বিষয়ে মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সাথে স্থানীয় এমপি মহোদয়ের কথা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। সে জন্য পুরাতন দোকানগুলো আগের মতোই চলছে। তবে উচ্ছেদকৃত জায়গায় নতুন করে কোনো দোকান বসতে দেয়া হবে না। গত ৩/৪দিন ধরে চেষ্টা চললেও পুলিশ তা করতে দেয় নি। ওসি বলেন, খায়রুল নামে একজন পুলিশের নাম করে হকারদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে আমি শুনেছি। সে নতুন করে দোকান ইজারা দিতে চাচ্ছে। হকারদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, উচ্ছেদকৃত জায়গা কাউকে নতুন করে ইজারা দিতে দেয়া হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন