বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের চলমান সংকট শুধু বিএনপির সংকট নয়; এই সংকট গোটা জাতির। এই সংকট দূর করতে না পারলে গণতন্ত্র থাকবে না; দেশ থাকবে না। দেশবিরোধী দখলদার সরকারকে হটাতে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গতকাল শনিবার টঙ্গীতে গাজীপুর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা, দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির সহস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কালিয়াকৈর পৌর মেয়র মজিবুর রহমান, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আফজাল হোসেন কায়সার, শাহ রিয়াজুল হান্নান, গাজীপুর বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেড ড. শহীদুজ্জামান, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আহমেদ আলী রুশদী, যুগ্ন সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, রাশেদুল ইসলাম কিরণ, রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, মহানগর যুবদলের সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন, বাসন থানা বিএনপির আহ্বায়ক বসির উদ্দিন বাচ্চু, কাশিমপুর থানা বিএনপির আহ্বায়ক শওকত হোসেন সরকার, মেট্রো সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক গাসিক কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূইয়া প্রমুখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর মহনগর বিএনপির সহসভাপতি কাজী মাহবুব উল হক গোলাপ, কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইজাদুর রহমান মিলন, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান পেরা, মহানগর বিএনপির যুগ্ন সম্পাদক জিয়াউল হাসান স্বপন, দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রহিম খান কালা, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ মোল্লা, মনিরুল ইসলাম বাবুল, মো. রবিউল ইসলাম রবি, ফারুক হোসেন খান, নাসির উদ্দিন শাহ নাসু, আজিজুল হক রাজু মাস্টার, ইঞ্জিনিয়ার ইদ্রিস খান, মো. শাহাদাত হোসেন শাহীন, সাজ্জাদুর রহমান মামুন, হাফেজ মোখলেছুর রহমান, মো. আব্দুস সাত্তার, ইঞ্জিনিয়ার সমসের, আতিকুল ইসলাম আতিক, হাজী জহিরুল ইসলাম, ওমর ফারুক, হাসান লস্কর, হেমায়েত উদ্দিন, আকবর হোসেন ফারুক, এজিএস সাজেদুল ইসলাম, আবু ইউনুস লিটন, সাইফুল ইসলাম মোল্লা, জাহাঙ্গীর ভেন্ডার, সালাহ উদ্দিন খোকন, নাসির উদ্দিন মৃধা প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, বিগত নির্বাচন কোন নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনের নামে দেশবাসীর সাথে প্রহসন করা হয়েছে। এই নির্বাচনে আবারো প্রমান হয়েছে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ কোন নির্বাচন হতে পারে না। তাই এই নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তার আগে এই নির্বাচন কমিশনকে তাড়াতাড়ি সরাতে হবে। এই নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। এরা আওয়ামীলীগের তল্পিবাহক হয়ে কাজ করে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে এই সরকারকে সরাতে হবে। আমরা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। তিনি আরো বলেন, এটাকে দখলদারী সরকার ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। এরা দেশবিরোধী শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। আজ মা-বোনদের ইজ্জতের কোন মূল্য নেই, মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই। এরা গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করার দায়িত্ব পালন করছে। এরা অর্থনীতি ও উন্নয়নের ভুয়া তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এদের কাজই হচ্ছে মানুষকে মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করা। এরা উন্নয়নের জন্য কাজ করে না, লুটপাট করার জন্য এবং পারসেন্টেজ খাওয়ার জন্য কাজ করে।
তিনি বলেন, যে কুচক্রিরা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিল তারাই আজ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করছে। দেশনেত্রীকে কারাগারে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। যিনি নিজের স্বামীকে হারিয়েছেন, ছেলেকে হারিয়েছেন, আরেক ছেলেকে নির্বাসনে দিয়েছেন। যার আজ কিছুই হারাবার নেই। এতো কিছুর পরও সেই দেশনেত্রী গণতন্ত্রের জন্য কারাগারে থেকে আপসহীন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এই মূহুর্তে আজকের এই বিশেষ দিনে ইফতার মাহফিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সকল ভেদাভেদ ও হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আজকের বিশেষ রজনীতে মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর দয়ার জন্য আকুতি জানাতে হবে।
তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা নির্বাচনে গিয়েছি দলকে রক্ষা করার জন্য; গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য। পার্লামেন্টে আমাদের যে কয়জন গিয়েছে দলীয় সিদ্ধান্তেই গিয়েছে; আবার আমি যাইনি সেটিই দলীয় সিদ্ধান্তেই হয়েছে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, খুনের মামলার আসামী; যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীর জামিন হয়, কিন্তু বেগম জিয়ার জামিন হয় না। কারণ বেগম জিয়া আইনের মাধ্যমে কারাগারে না। এই সরকার কোন সরকারই না। এই সরকার একটি উপদ্রব। যারা সীল মেরেছে, ব্যাংক লুট করেছে তাদের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে বেগম জিয়ার কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য আমাদের কোটি কোটি লোক দরকার নেই। মুনাফেকমুক্ত গুটি কয়েক ঈমানদার লোক দরকার। ইস্পাত কঠিন শ্লোগান ও মুষ্টিবদ্ধ হাত দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, মুসলমানদের জন্য রমজান ও ইফতার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ইফতার মাহফিলেও আমরা সকল রাজনৈতিক দলের নেতারা একত্রে বসতে পারি না। ইফতার সামনে নিয়ে সহীহ নিয়তে আমরা একত্রে বসতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব হতো।
ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিক্ষেপ করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে দেয়া হয়েছে। দেশে আজ মানবাধিকার নেই। মানবাধিকার থাকলে আমাদের সাড়ে সাত শত নেতাকর্মীকে গুম করা হতো না।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলম বলেন, নেপোলিয়ানের কারণে সেন্ট হেলেন দ্বীপ, কালাপানির কারণে আন্দামানের দ্বীপ ইতিহাস হয়েছে। খালেদা জিয়ার কারণে বক্সিবাজার ও নাজিম উদ্দিন রোড ইতিহাস হয়ে থাকবে। আওয়ামীলীগের কফিন আওয়ামীলীগেরই কাঁধে। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবনী দেশপ্রেমের সিলেবাস। আওয়ামীলীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে যা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশী রায়ে কারাগারে নিক্ষেপ করায় নাজিমুদ্দিনের কারাগার ইতিহাসের পাতায় কুখ্যাত হয়ে থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন