শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

গণপদোন্নতি ও প্রশাসনের অদক্ষতা

প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দেশ পরিচালনায় প্রশাসনের ভূমিকা অপরিসীম। রাষ্ট্রের কর্মকা- বাস্তবায়নের মূল হাতিয়ার এই প্রশাসন। সেই প্রশাসনকে নিয়ে গত কয়েকবছর ধরে নানা বিতর্ক চলছে। অনেকে একে মাথা ভারী প্রশাসন হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। অর্গানোগ্রামের চেয়ে অনেক বেশিসংখ্যক পদোন্নতি দেয়ার ফলে প্রশাসন এখন অনেকটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যুগ্ম ও অতিরিক্ত সচিবের মত দায়িত্বশীল পদাধিকারিদের বসার জায়গাও নেই। আবার একই পদের বিপরীতে একাধিক পোস্টিং দেয়া হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে দুইতিন পোস্টের নিচেও কাজ করছেন উচ্চপদের অনেকে। তুষ্টকরণ পদোন্নতির কারণে মধ্যস্তরের প্রশাসন অনেকটা পেট মোটা আকার ধারন করেছে। প্রকাশিত রিপোর্টাদীতে দেখা যাচ্ছে, একদিকে প্রশাসনের নিচের দিকে অসংখ্য পদখালি রয়েছে, অন্যদিকে সচিব থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব পদে বহুসংখ্যক কর্মকর্তা ওএসডি থাকা সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যায় পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। সূত্র অনুযায়ী, সচিব পদমর্যাদার ৭৩ পদের বিপরীতে দু’জন ওএসডিসহ কর্মরত রয়েছেন ৭৪ জন। এর মধ্যে ১০ জন সিনিয়র সচিব রয়েছেন। একইভাবে ১০৭ জন অতিরিক্ত সচিব মর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে ৪৪৬ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। এখানে পদের চেয়ে চারগুণেরও বেশি কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৬৮ জনই বর্তমানে ওএসডি। যুগ্ম সচিব পদের ৪৩০ পদের বিপরীতে নিয়োগ পেয়েছেন ৮৬৮ জন। উপসচিবের ৮৩০ পদের বিপরীতে নিয়োগ পেয়েছেন এক হাজার ২৭২ জন। অপরদিকে একহাজার ৫৫০ সিনিয়র সচিব পদের বিপরীতে পদায়ন করা হয়েছে, এক হাজার ৪৫২ জনকে। এন্ট্রি পয়েন্ট সহকারী সচিবের পদ রয়েছে এক হাজার ৮০০। এ পদে সদ্য নিয়োগ পাওয়া ২৭৯ জনসহ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে একহাজার ৩০২ জন।
স্বাভাবিক নিয়মে সরকার পরিবর্তিত হলেও প্রশাসন অপরিবর্তিত থাকে। এটি সরকারের নীতি ও এজেন্ডা বাস্তবায়নে কার্য়কর ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর উন্নতদেশগুলোতে সরকার পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্রের উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রশাসনিক রদবদল খুব একটা করা হয় না। তবে সরকারের নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন করা হয়। আমাদের দেশে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। যে ক্ষমতায় আসে তার লক্ষ্যই থাকে প্রশাসনকে তার কব্জায় নিতে দলীয় লোকজনকে সমানে নিয়োগ দেয়া। প্রশাসনকে আমূল বদলে ফেলা হয়। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতার চেয়ে দলীয় আনুগত্যকেই যোগ্যতা হিসেবে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এতে প্রশাসন একদিকে যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, অন্যদিকে যোগ্য লোকের অভাবে উন্নয়ন কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। এ প্রবণতা ইতোমধ্যে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে দেশি-বিদেশি কোনো অর্থই যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ অর্থ অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনে চলছে গণপদোন্নতি। চলমান পদোন্নতিতে অবস্থা এমন দাঁড়িেেছ যে, খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েই দুটি অতিরিক্ত সচিবের বিপরীতে অন্তত ১০ জনকে পদায়ন করা হয়েছে। অনুরূপ ঘটনা অর্থ মন্ত্রণালয়েও ঘটেছে। এরকম অসংখ্য উদাহরণ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব একটি ইংরেজি দৈনিককে জানিয়েছেন, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, প্রধানত আমলাদের বেতন বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করেই দেশে এক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আর বিদ্যমান অবস্থা হচ্ছে পদোন্নতিকে কেন্দ্র করে প্রশাসনে বিরাজ করছে এক চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়ন। ইতোপূর্বে প্রকাশিত খবরেও বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে বিদেশি অর্থ ব্যবহার করতে না পারায় তা ফেরত যাচ্ছে। আবার প্রয়োজনীয় দক্ষ আমলার অভাবে বিদেশের সাথে চুক্তি করতেও নাকি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এমত বাস্তবতায় কেন এবং কি কারণে যোগ্যতা যাচাই-বাছাই না করে গণহারে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তা সত্যিই একটি দায়িত্বশীল স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তোলার বিবেচনায় বোঝা কষ্টকর। আমলা খুশিকরণের এ ধরনের পদোন্নতি বাঞ্ছনীয় নয়।
বাস্তবতা হলো, অযোগ্যদের গণপদোন্নতি, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সব মিলে এক সময়ে দক্ষ বলে পরিচিত প্রশাসন এখন অদক্ষ হয়ে পড়েছে। এর নানামাত্রিক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। দেশে এখন বিনিয়োগ খরা চলছে। সামগ্রকিভাবে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শীর্ষ আমলা পদে যোগ্যতররা না যেতে পারলে বা যোগ্যরা দায়িত্ব না পেলে যা হয় কার্যত তাই এখন হচ্ছে। এ অবস্থার আশু অবসান প্রয়োজন। একটি দক্ষও যোগ্য দেশোপযোগী প্রশাসন গড়ে তুলতে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠার বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন