রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

যাত্রীকে হেনস্তা করে পিষে মারল বাসচালক

কথা কাটাকাটির জের

মো. শামসুল আলম খান : | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে গাজীপুরের বাঘেরবাজার পর্যন্ত সালাহউদ্দিন (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী পারুল আক্তারের (৩২) কাছে ৬০০ টাকা ভাড়া দাবি করেছিল সেই আলম এশিয়া পরিবহনের কন্ডাকটর ও হেলপাররা। কিন্তু সালাহউদ্দিন নিজেকে চালক পরিচয় দিয়ে লাইসেন্স প্রদর্শন করে কম ভাড়া রাখার অনুরোধ করলে তাঁরা ক্ষেপে যায়। বেশ কয়েক দফা শারিরীকভাবে তাকে হেনস্থা করার পর সালাউদ্দিনকে লাথি দিয়ে বাস থেকে ফেলে হত্যার হুমকি দেয় কন্ডাকটর। তাকে রক্ষায় ছোট ভাই কাভার্ড ভ্যানচালক জালাল মিয়া (৩১) সহ কয়েকজন এগিয়ে গেলেও বেপরোয়া চালক সালাহউদ্দিনকে সবার সামনেই পিষে বীরদর্পে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সালাউদ্দিনের।

গত রোববার সকালে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে দায়ি বাসচালক, কন্ডাকটর ও হেলপারদের ফাঁসি দাবি করেছেন নিহত সালাউদ্দিনের ছোট ভাই জালাল মিয়া (৩১)। জালাল মিয়া স্থানীয় আনসার রোড এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি কোম্পানির কাভার্ড ভ্যানচালক। নৃশংস এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে বলতে গিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, ‘বাসের ওস্তাদ (চালক) ইচ্ছা কইরাই (ইচ্ছে করেই) আমার ভাইয়ের উপর দিয়ে গাড়ি চালায় দেয়। কতবার চিক্কার (চিৎকার) পাইরা কইছি ব্রেক কর ব্রেক কর ভাই গাড়ির তলে পরতাছে। ওস্তাদ (ড্রাইভার) শুনে নাই। সে ইচ্ছাকৃতভাবেই আমার বড় ভাইকে খুন করছে’ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন নিহত সালাউদ্দিনের ছোট ভাই। জালাল মিয়া জানান, ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডার সূত্রপাত ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকা থেকেই। বাসের কন্ডাকটর ও হেলপারদের হাতে বাসের ভেতরেই নির্যাতনের মুখে পড়ে সালাউদ্দিন তাকে দুই থেকে তিনবার ফোন করেন। ফলে দ্রুতই বাঘের বাজারে ভাই ও ভাবীকে উদ্ধারে ছুটে যান জালাল মিয়া । কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘মাওনার আগে মাষ্টারবাড়ি এলাকা থেইক্যা ভাই যখন শেষবার আমারে ফোন দিয়া কয় ‘ওরা রানিংয়ে গেইট থেইক্যা লাত্থি দিয়া আমারে ফালাইয়া দিবো কইছে তুই তাড়াতাড়ি আয়, আমগরে রক্ষা কর । আমরা ৩ থেকে ৪ জন বাঘেরবাজারে বাসের সামনে গিয়া সিঙ্গেল দিছি । ওরা দুই জন যাত্রী রানিংয়ে নামাইছে। আমার ভাইরে ঠিকই ওরা লাত্থি দিয়া ফালাই দেয়। ভাবী তহনও নামতে পারে নাই। ভাই গাড়ির সামনে গিয়া দাঁড়াইলে তাঁর ওপর দিয়াই গাড়ি চালায় দিয়া মাইরা ফেলে।’ বাকরুদ্ধ হাহাকার নিয়ে জালাল মিয়া বলেন, ‘এক ড্রাইভার হইয়া ওরা আরেক ড্রাইভাররে মাইরা ফেললো ওরা খুনি। ওগোর বিচার হইতেই হইবো। ওগোর বিচার না অইলে আমার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাইবো না।’

ধোবাউড়া থেকে সেই ঘাতক চালক আটক : ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলা থেকে পলাতক ঘাতক চালক রোকন উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর জেলা পুলিশ।

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। পুলিশ জানায়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গ্রেফতার এড়াতে সীমান্তবর্তী এ উপজেলায় আত্মগোপন করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল চালক রোকন। তবে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি পুলিশের দায়িত্বশীল কেউ।

স্পেশাল সিটিং সার্ভিসের নামে প্রতারণা : আলম এশিয়া পরিবহন দীর্ঘদিন যাবত ‘স্পেশাল সিটিং সার্ভিসের’ নাম করে স্থানীয় যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এ পরিবহনের চালকরা বেপরোয়া গতিতে যেমনি ছুটেন তেমনি অনেক চালকেরই ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্সও নেই।

এমন অভিযোগ করে স্থানীয় যাত্রীরা বলেন, এ বাসের ভেতরের পরিবেশও অপরিচ্ছন্ন। বাতি ও ছাদ পাখা নষ্ট প্রায় সব বাসেই। আদতে যাত্রী উঠিয়ে নামিয়ে ঢাকা পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ ঘন্টায় চলা এ পরিবহনটিকে অনেকেই ‘লোকাল সার্ভিস’ হিসেবেও টিপ্পনি কাটেন। কিন্তু এরপরও তাঁরা বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটছেন।

স্থানীয় যাত্রীরা আরো অভিযোগ করেন, ওভারটেকিং প্রবণতা আর বেপরোয়া গতির কারণেই প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে চলছে এ পরিবহনের বাস। কিন্তু প্রভাবশালীরা এ পরিবহনের সঙ্গে জড়িত থাকায় সব সময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকেছে পরিবহনটি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন