শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি দেখানো শুভঙ্করের ফাঁকি সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৯, ১২:২৯ এএম

 ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট শিক্ষাকে বেসরকারীকরণ করার একটি প্রচ্ছন্ন রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। সংগঠনটির দাবি, সরকার শিক্ষাকে বিশেষ শ্রেণীর হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি দেখানো হলেও ম‚লত তা শুভঙ্করের ফাঁকি, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে এক করে শিক্ষায় বড় বাজেটে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেলের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনীষী রায়, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাগীব নাঈম, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নজির আমিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাত নিয়ে শুরুতেই একটা ধোঁয়াশা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ২৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন বাবদ মোট ৮৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা (বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও জিডিপির ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ) বরাদ্দ করা হয়েছে। শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে জনপ্রশাসন বা নিজ নিজ বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের বাইরে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানোর একটা প্রহসন ও প্রতারণামূলক প্রচেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় লক্ষণীয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে প্রযুক্তি খাতকে বাদ দিলে শুধু শিক্ষাখাতের বরাদ্দ দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দটি ছিল ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ফলে, বর্তমান বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আগের বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে শতাংশের হিসাবে শূন্য দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়েছে।

সংগঠনটির দাবি, বর্তমান সরকার এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও বাস্তবায়নের অবিস্মরণীয় সাফল্যের ঘোষণা দিলেও সত্যকথন হচ্ছে, কখনোই শিক্ষা খাতে নির্ধারিত ন্যূনতম লক্ষ্যমাত্রা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষায় বরাদ্দ মোটামুটি সব সময়ই মোট বাজেটের ১০ থেকে ১১ শতাংশের আশপাশেই ঘোরাফেরা করেছে। শিক্ষায় এমডিজি লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে না ঘেঁষলেও বর্তমানে এসডিজি অর্জনের জন্য সরকারের ব্যাপক তোড়জোড় লক্ষ করা যাচ্ছে।

বাজেট বক্তৃতায় বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ সব শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকদের অন্ধ দলীয় আনুগত্য ও লেজুড়বৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশা যে কলুষিত পর্যায়ে পৌঁছেছে, সে ব্যাপারে শিক্ষকদের নিজেদের আত্মোপলব্ধি না হলে বিদেশ থেকে শিক্ষক-প্রশিক্ষক এনে জনগণের অর্থের নিদারুণ সরকারি অপচয়ই করা হবে।

নেতারা বলেন, সরকারের মুখের কথা এবং বাজেটের চালচিত্র বিশ্লেষণ করলে আশাহত হওয়া ছাড়া অন্য কোনো রাস্তাও খোলা নেই। মৌল কাঠামো নির্মাণের চেয়ে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের আগ্রহ বেশি লক্ষণীয়। দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিন্ন টিউশন ফি’র দাবিকে এবারের বাজেটেও উপেক্ষা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা শিক্ষাখাতের বরাদ্দ ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে বাড়াতে এবং বাজেটে সমতা ও ন্যায্যতা আনতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক করপোরেট, বাণিজ্যিক, ব্যাংক-বীমা, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আয় ও লভ্যাংশের ওপর শিক্ষা খাতের জন্য বিশেষ সারচার্জ আরোপ দাবি করেন এবং প্রতিশ্রæত জিডিপির ৬ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে দেয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহŸান জানান। এ সময় বাজেটকে শিক্ষাবান্ধব করতে সাত দফা দাবি জানিয়েছে ছাত্র ইউনিয়ন।

দাবিগুলো হলো, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাজেটে সমতা ও ন্যায্যতা সৃষ্টির ভিত্তিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক করপোরেট প্রতিষ্ঠান-বাণিজ্যিক ব্যাংক-বিমা-ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের আয় বা লভ্যাংশের ওপর শিক্ষাখাতের ওপর বিশেষ সারচার্জ আরোপ; অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় না করে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যয়ের খাতগুলো আরও বিস্তারিত, সুস্পষ্ট ও সুবিন্যস্ত করা; প্রতিশ্রæত জিডিপির ৬ শতাংশ ও মোট বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা; শিক্ষার মৌল ভিত্তি, মৌলিক দর্শন ও কাঠামো কী হবে এবং উচ্চশিক্ষা, মাধ্যমিক-প্রাথমিক-কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা কিভাবে পরিচালিত হবে, সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজন, নাগরিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্যে বিশেষায়িত টাস্কফোর্স বা কমিশন গঠন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন