শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পাঁচ লাখ মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে

মো. জহিরুল হক, ভোলা থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার সঙ্কট, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আধুনিক প্রশিক্ষণের অভাব, নির্ধারিত সময়ে ঝড়ের প‚র্বাভাস না পাওয়া ও ঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে না পারায় প্রতি বছরই দ্বীপজেলা ভোলায় প্রাণহানি ও জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এতে উপক‚লের ৫ লাখ মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে বসবাস করছেন।

উপক‚লের বাসিন্দারা জানান, মেঘনা-তেঁতুলিয়ার কোল ঘেষা দেশের বৃহৎ দ্বীপটি হচ্ছে ভোলা। প্রায় ১৮ লাখ জনগোষ্ঠির এ জেলার উপক‚লের ৫ লাখ মানুষ প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমের সময় দুর্যোগ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

ঝড়-জলোচ্ছ¡াসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়লেও জেলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। একমাত্র আয়ের উৎস ফসলি জমি, গবাদি পশু আর স্বজনদের হারিয়ে উপক‚লের মানুষ আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। আকাশে মেঘ দেখলেই যেন তারা আতঁকে উঠেন। ঝড়ের কোন প‚র্বাভাস কিংবা বিপদ সংকেত তাদের কাছে পৌঁছে না বলে অভিযোগ তাদের।
উপক‚লের বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্গম চর ও দ্বীপচরের মানুষ ঝড়ের কোন প‚র্বাভাস পায়না, যার ফলে সিডর-আইলায় এখানে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে আশ্রয় কেন্দ্রের সঙ্কট রয়েছে। অনেক চরেই নেই আশ্রয় কেন্দ্র।

ধনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এমদাত হোসেন কবির বলেন, এ ইউনিয়নটি নদীর কুলে, চারদিকে নদী এখানে আরো আশ্রয় কেন্দ্র হলে দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারবে।
ভোলা সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, দুর্যোগের সময় দুর্গম এলাকা থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে আনা হয়। এর ফলে তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে উদ্ধারকর্মীসহ সবাই ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তাই উদ্ধার কাজে শক্তিশালী নৌযান ব্যবহার করলে দুর্গম এলাকার মানুষকে নিরাপদে আনা সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় পুর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মী, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্বারকর্মীরা কাজ করলেও উপক‚লের বিশাল এ জনগোষ্ঠির জন্য রয়েছে মাত্র ৬৬৭টি সাইক্লোন শেল্টার ও ৫২টি মাটির কেল্লা। এসব আশ্রয় কেন্দ্রের অধিকাংশই মূল-ভ‚খন্ডে স্থাপিত হয়েছে। আর দুর্গম এলাকার মানুষের কাছে ঝড়ের প‚র্বাভাস পৌঁছায় না। যার ফলে ঝড়ের প্রস্তুতি নিতে পারছে না উপক‚লের মানুষ। বিশেষ করে ঢালচর ও চরপাতিলাসহ তজুমদ্দিন ও মনপুরার অনেক চরেই নেই আশ্রয় কেন্দ্র।
এ অবস্থায় আধুনিক প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও জনবল সঙ্কটের কথা বললেন দুর্যোগ নিয়ে কাজ করা দুর্যোগ ব্যবস্থা কর্মসূচি ও জেলা রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিসিপি) উপ-পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, মার্চ-এপ্রিল-মে ও অক্টোবর-নভোম্বর ৫ মাস দুর্যোগের মৌসুম। ৩ মাস গেলেও এখনো দুর্যোগের দুই মাস বাকি রয়েছে। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির উদ্ধারকর্মী রয়েছে ১০ হাজার ২০০ জন। যারা দুর্যোগ পূর্ব, দুর্যোগকালীন সময় ও দুর্যোগ পরবর্তি সময়ে কাজ করে। ইতোমধ্যে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে তার সবটিতে তারা কাজ করেছে। কিন্তু এসব উদ্ধারকর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। এছাড়াও দুর্যোগ সময়ে ব্যবহারের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম প্রয়োজন।

জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যুব প্রধান আদিল হোসেন তপু বলেন, দুর্যোগের সময় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ঝড়ের প‚র্বাভাস, সতর্কবার্তা ও উদ্ধারকাজ করে থাকে। কিন্তু নৌ ও সড়ক পথে উদ্ধারকাজ করার জন্য কোন নিজস্ব নৌযান নেই আমাদের। নেই পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, হ্যান্ড মাইকসহ আধুনিক কোন সরঞ্জাম। দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসেবে ভোলায় এসব সরঞ্জাম জরুরি। তাই উদ্ধারকর্মীদের প্রশিক্ষণসহ আধুনিক সরঞ্জাম প্রয়োজন।

এদিকে, বেসরকারি হিসেবে সিডর, আইলা, কোমেন, রেশমি, ফণি ও মহাসেন ছাড়াও ছোট বড় ২০টি ঝড়ে শতাধিক জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে সিডরে ৪২ জন, আইলায় ১৮ জন, ১০ অক্টোবর ২০১২ তে ১৫ জন ও মহাসেনে ৪ জনসহ অন্যান্য ঝড়ে প্রাণহানি ঘটে।
অপরদিকে, দ্বীপজেলা ভোলায় দুর্যোগ পূর্ব, দুর্যোগের সময় ও পরবর্তী সময়ে প্রস্তুতি ও মোকাবেলায় সঠিক পদক্ষেপ আর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে উপক‚লের ৫ লাখ মানুষ দুর্যোগ মোকাবেলা করে নিরাপদে থাকতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন