শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সকল ফিচার

আপনাদের জিজ্ঞাসার জবাব

| প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

প্রশ্ন: সফল রমজানের পন্থাগুলো কি?

উত্তর: মসজিদে বেশি বেশি সময় ব্যয় করা : এ দুনিয়ার সবচেয়ে ভাল জায়গা হলো মসজিদ। রমজান মাসে আমাদের অফিসের সময় কম থাকে। সুতরাং বাকি সময়ের সর্বোচ্চটুকু মসজিদে থাকার চেষ্টা করা। কারণ, এখানে অন্যায় কাজ করার সুযোগ যেমন কম থাকে তেমনি দুনিয়াবি অনেক বিষয় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হয়। তদুপোরি, রমজানের শেষ দশদিন ই’তিকাফে থাকার যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিৎ প্রত্যেক মুসলিমের। এ সময়ের যে কোন এক বিজোড় রাত্রিতে আছে “লাইলাতুল ক্বদর” যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (সূরা আল-ক্বদর, ৯৭:১) ইতিকাফের মাধ্যমে সে রাত পাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

সাহুর ও ইফতারে অন্যদেরকে সম্পৃক্ত করা

রমজানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সাহুর ও ইফতার। সমাজে ‘সেহরি’ হিসেবে যে শব্দ প্রচলন আছে তা ঠিক নয়। হাদিসে ‘সাহুর’ শব্দটি এসেছে যার অর্থ মধ্য রাত্রিতে গ্রহণকৃত খাবার। এটিকে ‘সাহরি’ বলা যেতে পারে কিন্তু হাদিসের পরিভাষা হিসেবে ‘সাহুর’ ব্যবহার করা উত্তম। ইফতার ও সাহুরে অন্যান্যদেরকে সম্পৃক্ত করে এক সংগে সম্পাদন করার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রয়েছে। বিশেষ করে, কোন রোজাদারকে ইফতার করালে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায় যোগ হবে কিন্তু রোজাদারের কোন কমতি হবে না। (দেখুন: সুনানু তিরমিযি, হাদিস নং ৮০৭) এভাবে আমরা আমাদের সওয়াবকে বহুগুনে বাড়িয়ে নিতে পারি এ মাসে।

রাগ নিয়ন্ত্রণ, ভাল আচরণ এবং জবানকে নিয়ন্ত্রণ করা : মানবিয় খারাপ গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম হলো রাগ। রাগের সময় মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ফলে ঐ ব্যক্তির পক্ষ্যে যে কোন কাজ করা সম্ভব হয়ে উঠে। তাছাড়া অন্যদের সাথে সদাচারণ করার পাশাপাশি আমাদের জিহবাকে এমনসব কথা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি যাতে অন্যরা কষ্ট না পায়। কারণ, এর মাধ্যমে ঐ ব্যক্তির ভাল আমলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুসলিম হলো ঐ ব্যক্তি যার কথা ও কাজ থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৯) তদুপোরি, যদি কেউ রোজাদারের সাথে ঝগড়া করতেও চায় তাহলে বলতে হবে, “আমি রোজাদার”। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯০৪) পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, “পদাচরণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বও নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।” (সূরা লুকমান, ৩১: ১৯)

অন্যকে ক্ষমা করা : ক্ষমা করা মহৎ গুণ। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলেরও সুন্নত হলো এটি। ক্ষমার মাধ্যমে অন্যের কাছ থেকে দু’আ ও কল্যাণ পাওয়া সম্ভব হয়। আল্লাহ বলেন, “হে মু’মিনগণ। তোমাদের কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। যদি মার্জনা কর, উপেক্ষা কর, এবং ক্ষমা কর, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুনাময়।” (সূরা আল-তাগাবুন, ৬৪: ১৪)

বেশি বেশি সাদাকাহ দেয়া : বলা হয়ে থাকে, রমজান মাস সাদাকাহ এর মাস। এ মাসে বেশি বেশি সদাকাহ করা উচিত। সদাকাহর প্রতিদান আল্লাহ অবশ্যই দিয়ে থাকেন। তাছাড়া এটির মধ্য দিয়ে সমাজে যেমন অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয় তেমনি সম্প্রতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি হয়। ফলে একে অপরের কল্যাণকামী হয়। আল্লাহ বলেন, “... তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেন। তিনি উত্তম রিজিকদাতা।” (সূরা সাবা’, ৩৪: ৩৯) যারা ধনী নয়, যারা অর্থ কিংবা কোন কিছু কাউকে দান করার সামর্থ্য রাখে না তারাও কিন্তু সাদাকাহ করতে পারেন। মানুষের ভাল ব্যবহারও সাদাকাহ। হাসিও সাদাকা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার ভাইয়ের জন্যে তোমার হাসিটাও সাদাকাহ। পথের মাঝ হতে কোন পাথর, কাটা কিংবা হাড় (যা কষ্টদায়ক হয় পথচারীর জন্যে) সরানোটাও সাদাকাহ। বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেয়াটাও সাদাকাহ।” (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস নং ১৯৮০)

তওবাহ, আত্মসমালোচনা এবং দু’আ : আল্লাহ তওবাহ কারীকে ভালবাসেন। কোন মানুষ যদি পাহাড় পরিমাণও অন্যায় করে খাঁটি তওবাহ করে তাহলে তাকেও মাফ করে দেয়া হয়। তওবাহ করার উত্তম উপায় হলো, পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহর নিকট লজ্জিত হওয়া, ভবিষ্যতে আর করব না এ ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হওয়া। কুরআন ঘোষণা করছে, “হে মু’মিনগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবাহ করো আন্তরিক তওবাহ। আশা করা যায়, তোমাদেও পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কাজসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত...।” (সূরা আল-তাহরিম, ৬৬: ৮) তওবাহর প্রাথমিক স্তরে আত্মসমালোচনা করা জরুরি। আত্মসমালোচনায় নিজের ভুল ত্রুটিগুলো নিজের কাছেই ধরা পড়ে ফলে সেগুলো না করে ভাল কাজ করার প্রতি ব্যক্তি উদ্বুদ্ধ হয়। অথচ আমরা অন্যের সমালোচনা করতে উদগ্রীব। এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এটির পাশাপশি আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের জন্যে দু’আ করতে হবে। আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ শুধু খুশিই হন না বরং সাথে সাথেই তার ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ নিজেই ঘোষণা দিচ্ছেন, “... যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে।...” (সূরা আল-বাকারাহ, ২: ১৮৬)

পরিশেষে রাসূল (সা.) এর একটি হাদিস দিয়ে শেষ করতে চাই। তিনি (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাবের সাথে রোজা পালন করবে, তার পূর্বের গুণাহগুলোকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ৩৮ এবং সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৭৬০) আল্লাহ আমাদের এ রমজান মাসকে জীবনের শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে কবুল করুন আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন