আষাঢ়ের ভারিধারায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড, জয়নাগ রোড, ওয়ারী, লাক্ষিবাজার, রায়সাহেব বাজার, লালবাগ, মগবাজার, শান্তিনগর, বাসাবো, যাত্রাবাড়ি, সুত্রাপুর, রামপুরা, মুগদাপাড়া, মানিকনগার মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরসহ নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে পানি থৈ থৈ করতে দেখা গেছে। প্রবল বর্ষণে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তির। এক পশলা বৃষ্টিতে সচিবালয়েও পানিাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত গুলিন্তান ও আশপাশের এলাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হয়। তবে ঢাকার কোনো কোনো স্থানে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে, আবার কোথাও কোথাও বৃষ্টি হয়নি বলে জানা গেছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকেই আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। সাড়ে ১১টার দিকে ঝুম বৃষ্টি নামে। গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় ৩০ মিনিটের মতো ঝুম বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, অনেক স্থানেই পানি জমেছে। পানি জমায় চলাচলের ক্ষেত্রে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্ভোগে পড়েন। কেউ বাধ্য হয়ে জুতা ভিজিয়ে, প্যান্ট গুটিয়ে আধা ভেজা হয়ে চলাচল করছেন।
গতকাল সকাল ১১টার দিকে প্রায় ঘণ্টাখনেকের মত রাজধানীতে ভারিবৃষ্টি হয়। এতে দুপুর থেকেই শুরু হয় তিব্র যানজটের। বিকেলে অফিস ফেরৎ ও কাজ শেষে ঘর ফেরা নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কোথায়ও যানজট আবার কোথায় যানবাহনের অভাব লক্ষ্য করা গেছে। রাস্তায় পর্যাপ্ত রিকশা চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়েছে যাত্রিদের।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলি আসাদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা শহরের বৃষ্টির পানি বের হয়ে আশেপাশের খাল, বিল, নদী ও নিচু জমিতে গিয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে এই স্থানগুলো এমনিতেই পানিতে টইটুম্বুর থাকে। যে কারণে বিশেষ করে বর্ষার সময় রাজধানীর পানি স্বাভাবিকভাবে ঐ স্থানগুলোতে যেতে পারে না। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে বাধ্য হয়ে আমাদেরকে সে পানি হাই পাওয়ারের সেচ মেশিনের মাধ্যমে নিষ্কাশন করতে হয়। ঢাকা শহর থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য যে পরিমাণ সেচ মেশিন দরকার তা আমাদের নেই। যে কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন করতে যে সময় লাগে সে সময় পর্যন্ত রাজধানীবাসীকে পানিবদ্ধতার দুর্ভোগ সহ্য করতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে মোষলধারে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। এতে রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় বাস, ট্যাক্সিসহ গণপরিবহন কম দেখা গেছে। খানাখন্দকেভরা রাস্তায় রিকশা ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ ছোট বড় আহতও হয়েছে। স্যুয়ারেজ লাইন ও সিটি কর্পোরেশেনের ড্রেনের উপচে পড়া পানি রাস্তাঘাট ও বাসা বাড়ির পানিতে একাকার হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিকালে ব্যাংক পাড়া মতিঝিলের বনশিল্প ভবন ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আশপাশে দেখা গেছে হাঁটু পানি। অধিকাংশ স্থানে সৃষ্টি হয়েছে পানিবদ্ধতার। সময় মত পানি নেমে না যাওয়ায় প্রধান প্রধান সড়কে পানি জমে গেছে। বৃষ্টির পানি জমে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি ২৭, আজিমপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায়। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়গুলোতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় গাড়ি চলাচলেও সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও সড়কের ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়েছে। আবার পানিবদ্ধতার কারণে কোথাও কোথাও যানবাহন বিকল হয়ে পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। ফকিরেরপুলে একটি হিউম্যান হলার বিকল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বৃষ্টিতে রাজধানীর উত্তরা, বারিধারা, বাড্ডা, ফকিরেরপুল, পল্টন, মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজার, বসুন্ধরা সিটির সামনে, মিরপুর, মহাখালী, কাজীপাড়া, শ্যামলী, শেওড়াপাড়া, মতিঝিল, ধানমন্ডি ও গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাজধানীতে পানি জমে যাওয়া নতুন কিছু নয়। অথচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদেও এ নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নাই। সমস্যা সমাধানে মেয়রদের দৃশ্যমান উদ্যোগও নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে রাজধানীর মিরপুর হয়ে উত্তরায় চলাচলের অন্যতম সড়ক কালশীর সড়ক কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক যানবাহন বিকল হয়ে যায়। এতে করে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। এছাড়া, মিরপুর, বনানী, মহাখালী গুলশান ও রমাপুরা এলাকাতেও বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে। অনেক এলাকার রাস্তা কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। পানিজটের কারণে দেখা দেয় যানজট। এতে বেড়েছে নগরবাসীর ভোগান্তি।
সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর রাস্তায় পানি জমে যায়। রাজধানীবাসীর এ অভিযোগ বহুদিনের। এ যেন দেখার কেউ নেই। আপিয়া হোসাইন নামের এক পথচারী বলেন, বর্ষার আগে পয়ঃনিষ্কাশনের ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান সড়কের পাশাপাশি বৃষ্টির পানি জমে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন ওলি-গলিতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সড়কে পানি জমে যাওয়ার কারণে ধানমন্ডির জিগাতলা থেকে হাজারিবাগ সড়কে রিকশাসহ সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ ছিল। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। পানি জমে থাকায় মোহাম্মদপুর মকবুল হোসেন ডিগ্রি কলেজের আশপাশের এলাকায় জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তি। এছাড়া মিরপুরের সনি সিনেমা হল থেকে শুরু করে চিড়িয়াখানা সড়কেও জমে ছিল বৃষ্টির পানি। মাজার রোড ও গাবতলীর বিভিন্ন স্থানেও পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন