জঙ্গিবাদের জন্য শুধু মাদরাসা শিক্ষাকে দায়ী করা যাবে না। কারণ, জঙ্গিবাদে যারা জড়িত তাদের মধ্যে শতকরা ৫৬ ভাগ সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া যুবকদের অধিকাংশই ইন্টারনেট তথা ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে উদ্বুদ্ধ। পুলিশ সদর দপ্তরের এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রেতিরোধে নাগরিকদের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় পুলিশের সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি (গোয়েন্দা) মো. মনিরুজ্জামান গতকাল শনিবার সকালে এ কথা বলেছেন। এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের উদ্যোগে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ফর পিসের (সিডিপি) সহায়তায় এ কর্মশালায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি আরো বলেন, যেসব জঙ্গি আমাদের হেফাজতে আছে তাদের বেশির ভাগই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা ২৫০ জনেরও ওপর তারা এ গবেষণা চালান। গ্রেফতার করা ওইসব ব্যক্তির মধ্যে শতকরা ৫৬ ভাগই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। শতকরা ২২ ভাগ মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। বাকি ২২ ভাগ হয়তো অশিক্ষিত, না হয় ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষিত। অন্যদিকে ধর্মীয় উগ্রপন্থা অথবা সন্ত্রাসে জড়িত শতকরা ৮০ ভাগই উগ্রবাদি হয়েছে ইন্টারনেট অথবা বিভিন্ন রকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তিনি আরো বলেন, বাকি ২০ ভাগ উদ্বুদ্ধ হয়েছে পরিচিত ব্যক্তিদের দ্বারা। গবেষণায় বলা হয়েছে, উগ্রবাদের জন্য শুধু শিক্ষার খাতকে দায়ী করার পক্ষে প্রমাণ নেই। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) ও হিজবুত তাহরির- এই তিনটি সংগঠন বর্তমানে সক্রিয় থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। এদের কেউ কেউ আবার আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা, আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টস (একিউআইএস) এবং ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস) থেকে অনুপ্রাণিত। বাংলাদেশের জঙ্গিদের সবাই হোমগ্রোন ও কেউ কেউ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জঙ্গিবাদ রুখতে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আমরা সবার, বিশেষ করে যুব সমাজের আরো বেশি অংশগ্রহণ চাই। আমাদের বিশেষায়িত টিমের সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা ভার্চুয়াল জগত মনিটরিং করে যাচ্ছেন। এটি রুখে দিতে তরুণ সমাজের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের ডিসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ এর তথ্য অনুযায়ী জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস প্রতিদিন প্রায় ৭০ হাজার টুইট করে। এছাড়া, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন অন্তত ৯০ হাজার পোস্ট করে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনসহ দেশীয় সংগঠনগুলোর প্রধান টার্গেট থাকে মিডিয়া কাভারেজ। তারা কি করতে পারলো তার চেয়ে জরুরি কতোটা প্রচার পেলো। তাই জঙ্গি বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনায় গণমাধ্যমকে আরো সতর্ক হতে হবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফুয়াদ হাসান মল্লিক বলেন, সন্ত্রাসবাদ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে বিপজ্জনক। আমাদের দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে যে কোনো সময় ভূমিকম্প হতে পারে। তেমনিভাবে সন্ত্রাসবাদের আঘাতও যে কোনো সময় হতে পারে। তাই অবশ্যই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আমাদের নজর দিতে হবে। এজন্য সব পর্যায়ের নাগরিকদের অংশগ্রহণে জোর দিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন