ঢাকা থেকে সড়কপথে ৬ দিন যাবত বিচ্ছিন্ন সিলেট। সে কারণে ট্রেনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। গতরাতে কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর রেলপথে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুর সেতুতে বেইলি ব্রিজ স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। আজ সোমবার বিকালে বা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বাস চলাচল করতে পারবে এই সেতুর উপর দিয়ে। জেলার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন জানিয়েছেন প্রাথমিকভাবে যাত্রী নামিয়ে শুধু খালি বাস সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করতে দেয়া হবে। তবে মাল বোঝাই ট্রাকগুলোকে বিকল্প সড়ক দিয়েই চলতে হবে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি আরেকটি বিকল্প হিসেবে তিতাস নদীতে ফেরি দিয়ে যান পারাপারের উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের এই কর্মকর্তা। তবে এ জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ্রোচ সড়ক ও ঘাট না থাকায় সহসা ফেরি চালু হচ্ছে না। বেইলি ব্রিজ স্থাপনের পাশাপাশি অ্যাপ্রোচ সড়ক ও ঘাট বানানোর কাজও করা হচ্ছে। এতে আরো ৩/৪ দিন সময় লাগবে বলে জানান সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।
মহাসড়কে পুরাতন সেতুটির পাশাপাশি নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। এটি আগামী মাসের ৩ তারিখে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। ৫৯ কোটি টাকা খরচে এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। সেতুটি চালু হলে এর উপর দিয়ে সব ধরনের যান চলতে পারবে। এদিকে সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধের পর ৩ দিন বিভিন্ন বিকল্প পথে বাস-ট্রাক চলাচল করলেও এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল। শাহবাজপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ১৩৭ কিলোমিটার পথের অর্ধেকাংশ জুড়েই মহাসড়কে অবস্থান করছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। গতকাল সরজমিন বিকল্প সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী কোনো বাস চলাচল করছে না। বিকল্প পথে ভোগান্তির কারণে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাস সার্ভিস পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। একই কারণে বিকল্প সড়কে ট্রাকও চলাচল করছে না। কাঁচামাল আর বিভিন্ন পণ্যভর্তি ট্রাক মহাসড়কের উপরই অবস্থান করছে। ট্রাকেই পচে নষ্ট হচ্ছে অনেক কাঁচামাল। নানা ভোগান্তির শিকার ট্রাকচালকরাও। মহাসড়কে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেই কাটছে তাদের দিনরাত। গত ১৮ই জুন বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর উপর সেতুটির চতুর্থ স্প্যানের ফুটপাথসহ রেলিং ভেঙে পড়ে। এরপরই সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সব ধরনের ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা এই সেতুর উপর দিয়ে। সড়ক বিভাগ বিকল্প পথ হিসেবে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে কুমিল্লা-সিলেট এবং চট্টগ্রামের এবং সরাইল-নাসিরনগর হয়ে লাখাই এবং রতনপুর দিয়ে ঢাকা-সিলেট গন্তব্যের যানবাহন চলাচল করার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এসব পথে মহাসড়কের যানবাহন চলাচল দুরূহ হয়ে পড়ে নানা সমস্যায়। মহাসড়কের গাড়ির ¯্রােতে ২/১ দিনই বিপজ্জনক হয়ে পড়ে বিকল্প সড়ক। চান্দুরা-আখাউড়া সড়কের কয়েকটি স্থানে পণ্য বোঝাই ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পরে আর সেই পথে না গিয়ে গাড়ি চলাচলই বন্ধ করে দিয়েছেন বাস-ট্রাকের চালকরা। গত ৬ দিন ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে সরাসরি যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
সড়কপথ বন্ধ থাকায় ঢাকা-সিলেট রেলপথে চলাচলকারী সবগুলো ট্রেনের ভেতরে যাত্রী ঠাসা। পা ফেলার জায়গা নেই। আসনের তুলনায় তিনগুণ যাত্রী ট্রেনে। এরই মধ্যে রোববার দিবাগত রাতে সিলেট থেকে ঢাকামুখি উপবন এক্সপ্রেস আখাউড়ায় ব্রিজ ভেঙে খাদে পড়েছে। তাতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত ও আহতদের উদ্ধার কাজ শেষ হলেও ছিটকে খাদে পড়া বগিগুলো উদ্ধার করতে কমপক্ষে তিন চারদিন লেগে যাবে। এমতবস্থায় আরও কয়েকদিন বিচ্ছিন্নই থাকবে ঢাকা-সিলেট যোগাযোগ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন