সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর রাস্তা-ঘাট বেহাল দশায় উপনীত হয়। তখন আর একে রাজধানী বলে মনে হয় না। মনে হয় কোনো জলাভূমি। রাজধানীর এই বাস্তবতা যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। কোন প্রতিকার নেই। বৃষ্টি মানেই ঢাকায় পানিবদ্ধতা-যানজট নাগরিক ভোগান্তি যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় রাস্তা-ঘাট, ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে। রাজপথ অলিগলি পানিতে থৈ থৈ করে। যেকোন ভুক্তভোগীই স্বীকার করবেন, একবার পানি উঠলে তা সরতে অন্তত দু’তিন দিন লেগে যায়। কুড়িলের একজন ভুক্তভোগী দৈনিক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, এই এলাকায় একবার বৃষ্টি হলে বন্যার মতো অবস্থা হয়ে যাওয়া সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। চল্লিশ বছরের ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ লাইন পুরোপুরি অকেজো। একবার পানি উঠলে সপ্তাহ খানেকের আগে নামে না। নোংরা পানির জন্য বাসা থেকে বের হওয়া যায় না। আজান দিলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া যায় না। পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কোন কার্যকর তৎপরতা না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিনে আবার বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। একই সঙ্গে রয়েছে সঠিক পরিকল্পনার অভাব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলা। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের পলিথিন ও প্লাস্টিক দ্রব্য প্রতিরোধ কর্মসূচীর সদস্য সচিব আলমগীর কবির মনে করেন, পলিথিন ব্যাগের বিকল্প পাট, কাপড়, কাগজ ও চটের ব্যাগ উৎপাদন ও তা সহজলভ্য করলে পানিবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
রাজধানী ঢাকায় কেন পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, এনিয়ে প্রায় সবসময়েই একই ধরনের বক্তব্যই পাওয়া যায়। সিটি কর্পোরেশন ওয়াসাকে দায়ী করে আর ওয়াসা সিটি কর্পোরেশনকে। পারস্পরিক এই দোষারোপের মধ্যেই সমস্যা আটকে রয়েছে। সমাধান হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছরই পরিস্থিতি নাজুক হচ্ছে। অথচ পরিস্থিতি উন্নতির নামে বিপুল অর্থব্যয় হলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি নেই। তার উপরে প্রতিবছর নতুন নতুন এলাকা এই দুর্ভোগের আওতাভুক্ত হচ্ছে। মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। বলা দরকার, প্রতিদিনই নগরীতে গড়ে উঠছে নতুন নতুন আবাসিক এলাকা। এসব এলাকা গড়ে ওঠার সাথে সাথে নাগরিক সুবিধা বিশেষ করে স্যুয়ারেজ ও ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানের কোন ব্যবস্থা রয়েছে কিনা অথবা এসব আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠার কারণে পুরনো এলাকাগুলোর পয়ঃনিষ্কাশনে কোন সমস্যা হবে কিনা তার কোন তদারকির ব্যবস্থা কার্যত নেই। বলাবাহুল্য, ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার সাথে ওয়াসা এবং সিটি কর্পোরেশন উভয়ই জড়িত। এই দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণেই রাজধানীর ড্রেনগুলো অচল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থার জন্য শুধুমাত্র পলিথিনকে দায়ী করে কোন লাভ নেই। দীর্ঘদিন পরিচ্ছন্ন না করার কারণে এগুলো এখন পানি নিষ্কাশনের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং সামান্য বৃষ্টি হলে বা কোন কারণে পানি জমলেই তা উপচে পড়ছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ডেভেলপাররা যেসব ভবনাদি নির্মাণ করছে সেগুলোর পানি ও অন্যান্য ময়লাও এসব ড্রেন দিয়েই যাচ্ছে। রাজধানীর নর্দমা-খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় পুরনো নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েছে। এর বিকল্প কোন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। নগরীর চারপাশের নদ-নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় এবং সেগুলোতে পলিথিনসহ নানাবর্জ্য জমে এক ভয়াবহ অচলাবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় তার বিরূপ প্রভাব নগরীর উপরও পড়ছে। সবমিলে সমন্বয়হীনতার মাশুল দিচ্ছে জনগণ।
আন্তরিকতা থাকলে একটি আধুনিক শহর গড়ে তোলা কোন সমস্যাই নয়। দেখা যাচ্ছে, পুরাতন ড্রেন, স্যুয়ারেজ লাইনগুলোই যেখানে কাজ করছে না সেখানে আবার নতুন নতুন ড্রেন তৈরি করা হচ্ছে। নগরীর উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকেই সমন্বয়ের জন্য সকল মহল থেকেই তাগিদ দেয়া হচ্ছে। অথচ কেন সে বিষয়টিতে সংশ্লিষ্টরা নজর দিচ্ছেন না অথবা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না তা বোঝা কষ্টকর। রাজধানীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের কাছ থেকে নগরবাসী কোনো সুফল পাচ্ছে না। সোজা ভাষায় বলতে গেলে এসব কাজের সাথে জড়িত একটি অংশ অদক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বিগত মেয়র নির্বাচনেও নগর উন্নয়ন বিশেষ করে ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজের প্রসঙ্গ উঠেছে। ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন একই মন্ত্রণালয়ভুক্ত। তাই সমন্বয়ে কোন অসুবিধা থাকার কথা নয়। নগরবাসী তাদের দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান চায়। এটা এখন সময়ের একটি বড় দাবি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন