শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ সউদী আরব সম্পর্কে নয়াদিগন্ত

প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সউদী বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার অপরাহ্নে ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সউদী আরব যাচ্ছেন। এই সফর উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গত বুধবার পরাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, এই সফরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করবেন, অন্যদিকে তেমনি ধর্মীয় দায়িত্বও পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর একাধিক কারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে এটির যেমন রয়েছে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব অন্যদিকে তেমনি মুসলিম জাহানের বর্তমান বিভাজিত রাজনীতির পটভূমিতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা হচ্ছে, সউদী আরবে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর দুই দেশের সম্পর্কে এক নয়া দিগন্তের সূচনা করবে। ৬ জুন তিনি মহানবীর (সাঃ) রওজা শরীফ জিয়ারতের জন্য মদিনা যাবেন। ৭ জুন বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে মদিনা থেকে সরাসরি ঢাকায় ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রীর। পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। ১০ সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলও যাবে তার সঙ্গে। এ দলের নেতৃত্বে থাকছেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান। প্রধানমন্ত্রীকে সউদী আরবের তিনজন মন্ত্রী জেদ্দার বিমান বন্দরে স্বাগত জানাবেন। বাদশাহ ছাড়াও সউদী আরব সফরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স, উপ-প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শ্রমমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ দেশটির নেতারা সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এসব আলোচনা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো বেগবান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সাম্প্রতিক অতীতের কয়েকটি বছরে বাংলাদেশ ও সউদী আরবের সম্পর্কে যতখানি উষ্ণতা থাকার কথা ছিলো ততখানি উষ্ণতা সৃষ্টি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর বাংলাদেশ ও সউদী আরবের সম্পর্ককে এক নতুন উচ্চতা প্রদান করবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এই তো কিছু দিন আগেও এমন একটি সময় ছিল যখন সউদী আরব বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির প্রধান বাজার ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে সরকারীভাবে ঘোষিত না হলেও অঘোষিত ও অলিখিতভাবে বাংলাদেশ থেকে কোনো জনশক্তি আমদানি করছে না সউদী আরব। বাংলাদেশ ও সউদী আরবের সম্পর্কে ধর্মীয় বিষয় যতখানি প্রাধান্য পেয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় অতীতে ততটা প্রাধান্য পায়নি। অথচ এই দু’টি ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার রয়েছে সুবিপুল সম্ভাবনা।
এতোদিন পর্যন্ত এই দু’টি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করতো বাংলাদেশ থেকে সউদী আরবে জনশক্তি রফতানি, সউদী আরব থেকে জ্বালানি তেল আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর লক্ষাধিক হাজী প্রেরণ। কিন্তু এইবার একটি শক্তিশালী ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ায় অনুমিত হচ্ছে যে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও সউদী আরবের মধ্যে সম্পর্ক এক নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে। শুধুমাত্র বিপুল বিত্ত বৈভবই নয়, সউদী আরবের ব্যবসায়ীদের রয়েছে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত আর্থিক তারল্য। এতোদিন পর্যন্ত সউদী অর্থনীতি ছিলো প্রধানত জ্বালানী রফতানি নির্ভর। কিন্তু বাদশাহ সালমান সিংহাসনে বসার পর সউদী অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে উদ্যোগী হয়েছেন। সউদী আরব এখন নিজ দেশের বাইরে অন্য দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ সউদী বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য হতে পারে। বাংলাদেশ ও সউদী আরবের সম্পর্কের মধ্যে যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছিল সেটি পূরণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এখন সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেছেন যে, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে বাংলাদেশ সউদী আরবে সৈন্য পাঠাবে। সউদী আরবের পবিত্র মসজিদ দু’টি রক্ষার জন্য বাংলাদেশ সৈন্য পাঠাতে দ্বিধা করবে না। বলা বাহুল্য, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই উক্তি সউদী আরব তথা সউদী নেতৃত্বাধীন ৩৬ জাতি জোটে বিপুলভাবে অভিনন্দিত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইতোপূর্বে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যে সৈন্য পাঠাতে পারলে আগামীতে সউদী আরবে পাঠাতে পারবে না কেন? উল্লেখ করা যেতে পারে যে, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে দায়িত্ব পালন করার জন্য যেখানেই বাংলাদেশের ডাক পড়েছে সেখানেই বাংলাদেশের পারফরমেন্স বিপুলভাবে অভিনন্দিত হয়েছে।
সিয়েরা লিওঁতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজে সে দেশটি এতো সন্তুষ্ট হয়েছে যে, বাংলা ভাষাকে সে দেশের অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজের মর্যাদা দিয়েছে। কোনো কোনো মহল সউদী নেতৃত্বাধীন ৩৬ জাতি জোটে বাংলাদেশের যোগদান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু তারা ভুলে যান যে, মুসলিম জাহান আজ যেভাবে বিভাজিত সেখানে মুসলিম উম্মাহর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। তাকে কোনো না কোনো পক্ষ গ্রহণ করতেই হবে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। সেই দেশটি যখন সউদী আরবের দিকে সর্বাত্মক বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তখন মুসলিম জাহানের নেতা হিসেবে সউদী আরবকেও বাংলাদেশের এই উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে সাড়া দিতে হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রত্যাশা এবং প্রয়োজন হলো, বাংলাদেশ থেকে যত বেশী সম্ভব তত বেশী জনশক্তি যেন সউদী আরব গ্রহণ করে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যে বিপুল পরিমাণে সউদী বিনিয়োগ আসতে হবে। এই ভাবে দুই দেশের সম্পর্কে যদি ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক ফ্যাক্টরের সংমিশ্রণ ঘটে তাহলে উভয় দেশ বিপুলভাবে উপকৃত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
mohammadAlauddin ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৬:১৫ পিএম says : 0
বাংলাদেশ সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি কাজ বাস্তব্য়ন করতে পারে ।তাহলে হয়তো জনগন এর নিকট হইতে অনেক বাহবা পেতে পারে। বিশেষ করে জনশক্তি রপ্তানি ব্যাপারে কাজ করতে হবে সৌদি সরকারের সাথে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন