শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

নদীগুলো দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে

প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টঙ্গীর তুরাগতীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে একটি সফল অভিযান পরিচালনা করেছে আভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানে তুরাগতীরে স্থাপিত বিভিন্ন পাকাভবন, মাছের আড়ত, রেস্টুরেন্ট, বালির আড়তসহ অন্তত অর্ধশত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। দেশের প্রায় সব নদীই এখন অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। একদিকে উজানে ভারতের পানি প্রত্যাহার ও বাঁধ নির্মাণের কারণে নদী নাব্যতা হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে প্রভাবশালী মহলের অবৈধ দখল এবং অপরিকল্পিত ও অননুমোদিত শিল্পকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে নদীগুলোকে প্রকারান্তরে গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে। বিশেষত রাজধানী ঢাকার লাইফলাইন হিসেবে গণ্য বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুনদীর উপর প্রভাবশালী মহলের অবৈধ দখলদারিত্ব ও মাত্রাহীন দূষণের মচ্ছব এসব নদীর অস্তিত্বকেই বিলীন করে দিতে বসেছে। গত এক দশক ধরে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারনদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদীতীর সংরক্ষণ এবং দূষণমুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে দেশের পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের অব্যাহত চাপ সরকারকে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণে বাধ্য করেছে। বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীর উপর স্থাপিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে একটি শক্তিশালী টাস্কফোর্সও গঠন করেছে সরকার। নদীর তলদেশ থেকে বর্জ্য অপসারণসহ দখল ও দূষণমুক্ত করতে ইতিমধ্যে শতকোটি টাকা ব্যয় হলেও উচ্ছেদ ও পুর্নদখলের চিত্র যেন ইঁদুর বিড়াল খেলায় পরিণত হয়েছে। ব্যাপক হাঁক-ডাক ছেড়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামলেও উচ্ছেদকৃত জায়গাগুলো স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়না।
গত বছর আগস্টে টাস্কফোর্সের ২৯তম সভার সভাপতি হিসেবে নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান জানিয়েছিলেন, টাস্কফোর্সের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৮২৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১৮০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে নদীতীরবর্তী হাজার হাজার একর ভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে, সেখানে ১৮০ একর জমি উদ্ধার করে আত্মতুষ্টি লাভের সুযোগ নেই। গত দুই দশকে শুধুমাত্র বুড়িগঙ্গা রক্ষা ও দূষণরোধে গৃহীত নানা প্রকল্পের পেছনে অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে বলে জানা যায়। বুড়িগঙ্গা দূষণের জন্য অন্যতম দায়ী হাজারিবাগের টেনারিশিল্প এখনো সাভারে পুনর্বাসন সম্ভব হয়নি। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও সরকারের পক্ষ থেকে বার বার টাইম লাইন বেঁধে দেয়ার পরও বন্ধ হয়নি হাজারিবাগের টেনারিশিল্প। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলো স্থায়ীভাবে দখলমুক্ত এবং দূষণরোধে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাপা, গ্রীনভয়েসসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন।
বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুনদীর উপর থেকে অবৈধ দখলদারিত্ব মুক্ত করতে টাস্কফোর্সের পরামর্শে নদীর ডিমার্কেশন লাইন স্থাপন করা হয়েছে আরো কয়েক বছর আগে। নদীর সীমানা পিলার নিয়েও নানাবিধ ত্রুটি ও ফাঁকিবাজির অভিযোগ রয়েছে। সে সব আলোচনায় না গেলেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার নদীগুলোকে অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করার জনপ্রত্যাশা পূরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সক্ষমতা অথবা আন্তরিকতায় ঘাটতি রয়েছে। নামকাওয়াস্তে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর ক’দিন পরই তা আবার বেদখল হয়ে যাচ্ছে। সেখানে নতুন স্থাপনা তৈরী করছে নতুন দখলদাররা। ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথে ওয়াটারবাস সার্ভিস চালু, নদীপারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণের মত পরিকল্পনা গত এক দশকেও বাস্তবায়িত হয়নি। অনেক দেরীতে হলেও তুরাগ নদীতে বিআইডব্লিউটিএ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে এবং মাত্র দু’দিনেই প্রায় অর্ধশত স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছে। তুরাগ, বালুনদীসহ অন্যসব নদীকেও অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ আরো জোরদার করতে হবে এবং অব্যাহত রাখতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, উচ্ছেদের পর নদীতীর সংরক্ষণের স্থায়ী উদ্যোগ আগেই নির্ধারণ করতে হবে। নদীগুলোর নাব্যতাবৃদ্ধির জন্য ইতিমধ্যে গৃহীত পরিকল্পনাগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরী। কলকারখানার শিল্পবর্জ্য ও নাগরিক বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলার পথ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ঢাকাকে একটি বাসযোগ্য, আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব রাজধানী শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমেই এর চারপাশের নদীগুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ, সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদফতর, শিল্পমন্ত্রণালয়সহ সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন