বগুড়ায় ১০ম শ্রেনীর স্কুলছাত্রী ফাহমিদা মায়ীশা সেমন্তীর (১৫) অনাকাঙ্খিত মৃত্যু এবং এই মর্মান্তিক ঘটনার দায়ভার নিয়ে নানামুখি আলোচনা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বগুড়ার ওয়াই এম সি এ স্কুল ও কলেজের ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী ও বগুড়া শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা জলেশ^রীতলার ব্যবসায়ী হাসানুল মাশরেক রুমনের মেয়ে ফাহমিদা মায়ীশা সেমন্তী (১৫)। গত মাসের ১৭ জুন দিবাগত মাঝরাতের কোন এক সময় নিজের শয়ন কক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে । সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনা জানতে পেরে হতভম্ব হয়ে পড়ে সেমন্তীর মা বাবাসহ অন্য সবাই।
ওই দিনই পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে এবং স্থানীয় শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট করে। লাশ দাফনের পরে এ ব্যাপারে বগুড়া সদর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা হয় বগুড়া সদর থানায় । এভাবেই সেমন্তীর অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনাটিও ধামাচাপা পড়ার উপক্রম হয়।
তবে সেমন্তীর মৃত্যু ঘটনার পরপরই তার সহপাঠীদের সূত্রে তার বাবা ও পরিবারের কাছে কিছু তথ্য হস্তগত হয় । যাতে সেমন্তীর বাবার কাছে মনে হয় তার মেয়ে কারো দ্বারা বøাকমেইল হয়েছিল । কেউ তার মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব বা প্রেম করে বিশ^াস ভঙ্গ ও প্রতারণা করেছিল যার পরিণতিতেই সেমন্তী আত্মহত্যায় প্ররোচিত বা বাধ্য হয়েছিল।
এরপর সেমন্তীর বাবা তার মেয়ের ফেসবুক আইডি, মেয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, মেয়ের কথিত বন্ধু, অন্তর ও প্রেমিক আবির এর মোবাইল ফোন নম্বর এবং তাদের মধ্যে চলা ফোনে ও ফেসবুক মেসেঞ্জারের মেসেজ এর বিবরণসহ বগুড়া সদর থানায় ২৫ জুন নতুন একটি মামলা দেন ।
এরপর সম্ভবত অভিযুক্ত প্রেমিক আবির এনএসআইয়ের একজন কর্মকর্তার ছেলে এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তার ভাতিজা হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে তালবাহানা শুরু করেন বগুড়া সদর থানার ওসি। ফলে হতাশ হয়ে ২৭ জুন থেকে সেমন্তীর বাবা হাসানুল মাশরেক রুমন নিজের ফেসবুক আইডিতে নিজের ফুলের মত সুন্দর কিশোরী মেয়ের ছবিসহ একাধিক হৃদয়স্পর্শি স্ট্যাটাস পোষ্ট করেন। ফলে ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় । বিষয়টা উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নজরে আসে । তাদেরই নির্দেশনার আলোকে ৪ জুলাই রাত ৯টায় বগুড়ার পুলিশ সুপার ও একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ওসি সেমন্তীর বাবাকে ডেকে পাঠান । তার কাছ থেকে যাবতীয় ডিজিটাল ইনফরমেশন, সেমন্তীর ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম জব্দ করেন । নতুন করে লেখা মামলার কাগজ এবং প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই সাপেক্ষে লিগ্যাল একশানে যাবেন বলে সেমন্তীর বাবাকে আশ^াসও দেন পুলিশ কর্মকর্তারা
।
তবে শুক্রবার (৫ জুন) বিকেলে মামলাটি বগুড়া থানায় এন্ট্রি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে হাসানুল মাশরেক রুমন বলেন , ওসি সাহেব আমাকে কিছু জানাননি।
এদিকে সেমন্তীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলা বহুমুখি আলোচনায় টিএনএজ ছেলেমেয়েদের মোবাইল ফোনের ব্যবহার, সোশ্যাল মিডিয়ায় টিনএজদের অবাধ বিচরণ, শিথিল পারিবারিক বন্ধন এবং সন্তানদের প্রতি পিতা মাতার লাগামছাড়া স্নেহ, কিংবা অপরিণামদর্শী ভরসার কারনেই অনেক সামাজিক অঘটন ঘটছে বলে মতামত এসেছে। প্রায় সবাই জানতে চাইছে সেমন্তীর অকাল বিদায়ের বা আত্মবিনাশী হওয়ার পেছনে দায় আসলে কার ?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন