শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

দুর্নীতি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকেও

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

সরকারের আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে (একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প) সুবিধাভোগীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকসহ প্রকল্পে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারী সমিতি। আজ রোববার সকাল ১১টায়ও তারা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সদর দপ্তর ইস্কাটন রোডের প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে মানববন্ধন করা হবে বলে জানানো হয়।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলে ধরে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীর সমিতির নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সুলাইমান। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, যা বর্তমানে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প নামে পরিচিত, এবং প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে আইন ও বিধি লংঘণ করে প্রতিষ্ঠান দু’টিতে বিদ্যমান জনবলকে উপেক্ষা করে নতুন নিয়োগ দেওয়াসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আইন ও নিয়োগ-বিধি অনুযায়ী এই দু’টি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এসব বিধান উপেক্ষা করে ব্যাংকে বাইরে থেকে এনজিও কর্মী ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া বন্ধে উচ্চ আদালতের আদেশ থাকা সত্তে¡ও স¤প্রতি প্রায় ১৪৯ জনকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের এই সপ্তাহে বিভিন্ন উপজেলায় পদায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে প্রকল্পে দীর্ঘ আট বছর ধরে এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে তিন বছর ধরে কর্মরত কর্মচারীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।


এজন্য ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ী করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবদের হস্তক্ষেপ কামনা করে সমিতি। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং প্রকল্পের বিদ্যমান জনবল থেকে আইন ও নিয়োগ বিধি অনুসারে কর্মী নিয়োগসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে। তারা দাবি করেন, পুরোনো কর্মীদের বাদ দিয়ে ব্যাংকটিতে স¤প্রতি ৪৮৫ জন ক্যাশ সহকারি নিয়োগ দেওয়া হয়, যার ৭৫ ভাগই এনজিও কর্মী। এসব নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার তোফায়েল আহমেদ ৪৪ লক্ষ টাকাসহ পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হন। অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান মিহির বাবুও সুবিধা নিয়ে ৩০ জন অফিসারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন।


দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৪০,৫০০ সমিতির ২২ লক্ষ সদস্য পরিবারের ১.২০ কোটি দরিদ্র মানুষের সঞ্চয় ও সরকারের অনুদান ২,১৪০ কোটি টাকাসহ প্রকল্পে বর্তমানে প্রায় ৩,৩৯৫ কোটি টাকার তহবিল রয়েছে। এই তহবিল থেকে ১,০০০ কোটি টাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। যেখানে সুবিধাভোগীরা ৪৯ শতাংশ এবং সরকার ৫১ শতাংশের শেয়ার হোল্ডার। এ অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রেখে ইউএনও-দের সহায়তায় এতদিন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তহবিল পরিচালনা ও ঋণ বিতরণ করলেও বর্তমানে এই তহবিল কেন্দ্রে পুঞ্জিভ‚ত করা হয়েছে। ফলে এই তহবিলের অপব্যবহারের শংকা দেখা দিয়েছে বলেও তারা দাবি করেন।
দাবিগুলো হলো- ৩০ জুন ২০১৬ এর আগে নিয়োগকৃত একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সব জনবলকে অনতিবিলম্বে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে স্থানীয়করণের পরিপত্র জারি করতে হবে, স্থানান্তর নামক প্রহসন বাদ দিয়ে বিগত ৩ বছরের ইনক্রিমেন্ট, দৈনিক ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, সব পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতি দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে, ৩০ শে জুন ২০১৬ এর আগে নিয়োগকৃত সব জনবলকে ব্যাংকে স্থায়ীকরণ ও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া পর্যন্ত নতুন জনবল নিয়োগ করা যাবে না, নিয়োগ বাণিজ্য কেলেঙ্কারিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকাসহ আটক ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে, হাইকোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে রাতের অন্ধকারে দেওয়া অবৈধ নিয়োগ বাতিল করতে হবে, আন্দোলনরত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোনো রূপ হয়রানি করা যাবে না। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারী সমিতি।


এতে বর্তমান প্রকল্পে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে ৩ বছর ধরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তারা দাবি করেন। এজন্য তারা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে দায়ী করেন এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি সেলিম আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন, সদস্য জিন্নাত আরা তুলি, রাজীব সরকার, মো. রতন তরিকুল ইসলাম, মানুষ নন্দী প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন