এপ্রোচ সড়ক শেষ না করেই যান চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া হয়েছে ঢাকা-সিলেট, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর নির্মিত নতুন সেতু। গত শনিবার রাত ৮টায় সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া হয়। আজ রবিবার দুপুরেও তিতাস সেতুর উভয় পার্শ্বে এপ্রোচ সড়ক তৈরীর কাজ চলছে। এপ্রোচ কাজের জন্য ব্যবহৃত রোলার আর যানবাহন চলছে পাশাপাশি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন চলাচলের জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে সেতু খুলে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বর্তমান সেতুর ঝুঁকির বিষয় বিবেচনা করেই দ্বিতীয় সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এই সেতুটি খুলে দেয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা করার সময় নেই আমাদের। জনদূর্ভোগ যেনো না হয়, মহাসড়কে যানবাহন চলাচল যেনো বন্ধ হয়ে না পড়ে, সেই কথা বিবেচনায় রেখে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শেই সেতু খুলে দেয়া হয়েছে। তবে সেতুটি সার্বক্ষনিক নজরদারীতে রয়েছে বলেও তিনি জানান। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং জরুরী কাজকর্ম করার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীরা সেতু এলাকায় রয়েছেন। তিনি আরও জানান, সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ২৫৪ মিটার দীর্ঘ আর ১৬ মিটার প্রস্থের নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ১০ জুলাই। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি সেতুটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্ধারিত সময়ের ৬ মাস পর আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সেতুটি খুলে দেওয়া হয়। তবে তিনি বলেছিলেন, ১০ জুলাই সেতু যানবাহন চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া হবে। তবে সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ হতে আরও ৬ মাস সময় লাগবে বলেও জানিয়েছিলেন।
সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর এলাকায় তিতাস নদীর উপর প্রথম সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৪৬ বছরের অধিক বর্তমান সেতুটির বয়স হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পুরাতন সেতুটি খুবই ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় নির্মাণাধীন নতুন সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে করা হয়। অবকাঠামোগত কাজ এগিয়ে আনা হয় এক মাস। সর্বশেষ ৪০০ মিটারের একটি স্ল্যাব ঢালাইয়ের পর তা কয়েক ঘন্টায় যাতে জমাট বাধে সেজন্যে ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরনের কেমিকেল (এ্যাডমিকচার)। এরসঙ্গে বেশী পরিমাণ সিমেন্টও দেয়া হয়। এভাবেই দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হয়। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথমে জানিয়েছিলেন জুলাই মাসের শেষ দিকে যানবাহন চলাচলের জন্যে এই সেতু খুলে দেয়া হবে। গত ১৮ জুন পুরাতন সেতুর একটি অংশ ভেঙ্গে পড়লে সারাদেশের সঙ্গে সিলেটের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এক সপ্তাহ ধরে ভাঙ্গা অংশে নতুন বেইলী স্থাপনের কাজ চলতে থাকার মধ্যে ৬ দিনের মাথায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হলে বেইলী স্থাপনের কাজও রাতারাতি শেষ করতে সক্ষম হয় সওজ। সংস্কার কাজের জন্যে ভারী ও মাঝারী ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয় পুরাতন সেতুর ওপর দিয়ে। পাশাপাশি অপর বেইলীটি হালকা যানবাহন চলাচলের জন্যে খোলা রাখা হয়। কিন্তু উপবন দুর্ঘটনার পর এই বেইলী সেতুটিও একইসঙ্গে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া হয়। নতুন বেইলী স্থাপনের পর শুধু যাত্রী নামিয়ে বাস চলতে দেয়া হবে আর ট্রাক চলবে বিকল্প সড়কপথে-সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা এমনটি জানালেও পরে তারা সেই কথাও ঠিক রাখতে পারেননি। ওভারলোডেড ট্রাক-বাস চলতে শুরু করে সমানে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন