শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

উমরাহ কেন করবেন কিভাবে করবেন

মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম | আপডেট : ১২:১৯ এএম, ১২ জুলাই, ২০১৯

এক

জিলহজ মাসের ৯-১৩ তারিখ হচ্ছে পবিত্র হজের নির্দিষ্ট সময়। এ সময়ের বাইরে হজ করা যায় না। আর উমরাহর জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। শুধু হজের দিনগুলো ছাড়া বছরের বাকী সময়গুলোতে উমরাহ করা যায়। বিশেষ করে রমজানের সময় উমরাহর ফজিলত অনেক বেশি। তারপরও বিশ্বের মুমিন মুসলিম হজের জন্য বাইতুল্লায় আগে আগে গেলে হজের পূর্বে উমরাহকরে থাকেন। আবার অনেকে হজ ও উমরাহর ইহরাম এক সঙ্গে বেঁধে উল্লেখিত সময়ের পূর্বেই উমরাহ আদায় করেন এবং সেই ইহরাম দিয়ে পবিত্র হজও সম্পাদন করেন। এখানে উমরাহর ফজিলত ও উমরাহ করার নিয়ম তুলে ধরা হলো।

উমরার ফজিলত
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, এক উমরাহ হতে অন্য উমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সবকিছুর গুনাহের কাফফারা। আর মাবরুর হজের প্রতিদান হলো জান্নাত ( বুখারী ও মুসলিম)। অন্য হাদীস শরীফে প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা বারবার হজ্জ ও উমরাহ আদায় কর, কেননা এ দুটো দারিদ্রতা ও গুনাহকে সে ভাবে মুছে ফেলে, যে ভাবে কর্মকারের হাওয়া দেয়ার যন্ত্র লোহার ময়লাকে দূর করে থাকে। (নাসায়ী শরিফ।)

ইহরাম বাঁধা ফরজ :
পুরুষরা ইহরামের জন্য প্রস্তুত কৃত সাদা দুটি চাদর ও মহিলারা তাদের সাধারণ পোষাক পরে মিকাত ছেড়ে যাওয়ার সময় নিয়তের সাথে বলবেন, ‘লাব্বাইকা উমরাতান, বা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান’। উমরা যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তবে অন্তরের নিয়তের সাথে ‘লাব্বাইকা উমরাতান আন’ এর পরে তার নাম উচ্চারণ করতে হবে। পবিত্র কাবা ঘর দেখার আগ পর্যন্ত তালবিয়া ও অন্যান্য সব ধরনের দোয়া পড়তে হবে। তালবিয়া হলো, ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারীকা লাক।’

ইহরামের নিয়ত করার পর যা নিষিদ্ধ :

(১) পুরুষের জন্য সেলাই করা পোষাক পরা। (২) মাথার সাথে লেগে থাকে এমন জিনিস দ্বারা মাথা ঢাকা। (৩) ইচ্ছাকৃত ভাবে মাথার চুল ও শরীরের পশম কাটা বা উঠানো। (৪) হাত পায়ের নখ কাটা। (৫) আতর বা সুগন্ধি জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা। (৬) স্থলচর প্রাণী শিকার করা। (৭) স্বামী-স্ত্রী মিলন করা বা এ জাতীয় বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা। (৮) বিবাহের প্রস্তাাব দেয়া বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। (৯) মহিলাদের জন্য হাত মোজা ব্যবহার করা এবং মুখ ঢাকা । (১০) পবিত্র মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানার গাছ-গাছালী, কাটা, ভাঙ্গা, উপড়ানো। (১১) পবিত্র মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানায় পরে থাকা জিনিস নেয়া। তবে তা মালিককে দেয়ার জন্য উঠানো যাবে। (মুকাম্মাল মুদাল্লাল হজ ও উমরা, ১২০ পৃষ্ঠা)।


পবিত্র মক্কাতে পৌঁছার পর করণীয় :
(১) তাওয়াফ ফরজ: পবিত্র মক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে যাওয়ার আগে ওযু করে নিতে হবে। কেননা তাওয়াফের জন্য ওযু শর্ত। নামাযের সময় নিকটবর্তী না হলে, মসজিদে প্রবেশ করে সরাসরি তওয়াফে যেতে হবে। তওয়াফ শুরুর আগে পুরুষদের জন্য ইজতেবা বাম ডান কাঁধ খালি করতে হবে। অর্থাৎ চাদরের মধ্যভাগ ডান কাঁধের নিচে দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর পড়তে করতে হবে। ‘বিসমিল্লাহ আল­াহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদ চুমো বা স্পর্শ করার মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। চুমা বা স্পর্শ করার সুযোগ না হলে, হাজরে আসওয়াদ বরাবর গিয়ে শুধু ডান হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদের দিকে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে ইশারা করে চুমু দিয়ে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। হাজরে আসওয়াদের আগের কোণ রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছা পর্যন্ত সময়ে, কুরআন তিলাওয়াত, দুরুদ শরীফ ও যে কোন ধরণের দুয়া পড়া যায়। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদে আসলে এক তাওয়াফ হয়। এভাবে সাত তওয়াফ বা চক্কর শেষ করে উভয় কাঁধ ঢেকে, মাকামে ইবরাহিমের পিছনে নামায পড়ার উপযুক্ত স্থান পেলে দু’ রাকাত নামায পড়তে হবে। ভীড়ের কারণে সম্ভব না হলে কাবা শরীফের যে কোন স্থানে পড়লেই চলবে। (মাসায়েলে হজ ও উমরা, ১২০ পৃষ্ঠা)।

(২) সায়ী ওয়াজিব: এখন সায়ী করার জন্য ছাফা মারওয়া পাহাড়ে যেতে হবে। শুধু সাফাতে আরোহণের সময় এ আয়াত ‘ইন্নাছ ছফা অল মারওয়াতা মিন শাআ ইরিল্লাহ’ পড়তে হবে। পাহাড়ে আরোহণ করে কিবলামুখী হয়ে, দোয়ার জন্য দু’ হাত তুলে ৩ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’ বলে এই দুয়াটি পড়তে হবে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনযাজা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহ্দাহু।’ মাঝে মাঝে অন্যান্য দোয়াও পড়া যাবে।

এখন মারওয়ার দিকে যেতে হবে। কিছুদূর গেলে দুটি সবুজ চিহ্ন দেখা যাবে। দু’ চিহ্নের মাঝে শুধু পুরুষদেরকে হালকা দৌড়াতে হবে। সাফা-মারওয়াতে চলতে, কুরআন তেলাওয়াত, দুরুদ শরীফ, তাসবীহ ও যে কোন ধরণের দোয়া পড়া যায়। (শরহে বোকায়া, হজ অধ্যায় এবং আসান ফেকাহ, ২য় খন্ড, ১৮২ ও ১৮৩ পৃষ্ঠা)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন