চা’র জন্য উপকারী অধিক বৃষ্টিপাত, চা আবাদযোগ্য জমির আড়াই শতাংশ হারে প্রতিটি বাগানে চা স¤প্রসারণ, চা জমির স¤প্রসারণে বাগানগুলোর প্রতি বাংলাদেশ চা বোর্ডের ব্যাপক মনিটরিং, চা শিল্পের জন্য আনুসাঙ্গিক সরঞ্জামাদির পর্যাপ্ততা, সময়মত সার ও কীটনাশক প্রাপ্তি, ক্লোন চা গাছের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি চা বোর্ডের অধিক নজরদারির কারণে এবার দেশে চায়ের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা। চা গবেষকরা ধারণা করছেন এবার সর্বকালের সকল রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে চা উৎপাদনে। কারণ এবার চা শিল্পাঞ্চলে বিরাজ করছে চায়ের জন্য অনুকূল পরিবেশ। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত এবং চমৎকার আবহাওয়ার ফলে সুদিন ফিরছে চায়ের পাতায়। দেশে চা শিল্পের জন্য অত্যন্ত উপকারী বৃষ্টিপাত প্রথম হয় গত ১৮ ফেব্রæয়ারি। ওইদিন থেকে ১৩ জুন প্রায় প্রতিদিনই দেশে কিছু না কিছু বৃষ্টিপাত হয়েছে। এখনো কিছু কিছু বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। বৃষ্টিপাত চা’র জন্য অত্যন্ত উপকারী। বর্তমানে দেশে নিবন্ধন করা চা বাগানের সংখ্যা ১৬৪টি। এরমধ্যে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলেই রয়েছে ১৩৫টি চা বাগান। মৌলভীবাজার জেলার ৯১টি চা বাগানের মধ্যে ৪০টি চা বাগান শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। এজন্য শ্রীমঙ্গলকে ‘চায়ের রাজধানী’ বলা হয়। চা গবেষকদের মতে, বর্তমান চা মৌসুমে চায়ের জন্য অত্যন্ত সুন্দর প্রাকৃতিক অবস্থা বিরাজমান। অনুকূল আবহাওয়া ও পরিবেশ, প্রয়োজনীয় বৃষ্টির কারণে এবার চায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ চা উৎপন্ন হবে। ২০১৮ সালে চা উৎপাদন মৌসুমে দেশে চা উৎপাদন হয়েছে ৮২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন কেজি। সে বছর বাংলাদেশ চা বোর্ড চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো ৭২ দশমিক ৩ মিলিয়ন কেজি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন কেজি বেশি চা উৎপাদন হয়। এর দু’বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালে সব ধরনের রেকর্ড ভেঙে দেশের চা শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চা উৎপাদন হয়েছিল ৮৫ দশমিক ০৫ মিলিয়ন কেজি। তবে এবার চা মৌসুমে অতীতের চা উৎপাদনের সকল ধরণের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন চা গবেষকরা। চা গবেষকদের মতে, চলতি বছর চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৪ দশমিক ১৪ মিলিয়ন কেজি। আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এবার চা উৎপাদন ৯০ মিলিয়ন কেজি অতিক্রম করতে পারে। আর তা যদি হয় তবে এবার দেশের চা উৎপাদনে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে চা উৎপাদনের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সে বছরের এপ্রিল মাসে মোট উৎপাদন হয়েছিলো ৫ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন কেজি। বর্তমান চা মৌসুমের এই এপ্রিল মাসেই উৎপাদন হয়েছে ৮ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন কেজি হয়েছে। অর্থাৎ গতবারের থেকে এবার বেড়েছে শতকরা ৫৯ শতাংশ। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে এবার দেশের চা উৎপাদন অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন